ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল প্রেমে বিপথে শিক্ষার্থী ॥ উৎকণ্ঠায় অভিভাবক

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

মোবাইল প্রেমে বিপথে শিক্ষার্থী ॥ উৎকণ্ঠায় অভিভাবক

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ ছেলেটির নাম ইমন (ছদ্মনাম)। একাদশ শ্রেণীর ছাত্র সে। ভাল পড়াশোনা করার জন্য গ্রাম থেকে ঢাকায় পাঠানো হয় তাকে। তার বাবা সাধারণ কৃষক। মাসে মাসে ছেলেকে পড়াশোনার জন্য টাকা পাঠানো হয় বাড়ি থেকে। অভাবের সংসার, এরপরেও ছেলের দাবি অনুয়ায়ী পড়াশোনার খরচসহ দামী ফোনও কিনে দেয়া হয়। মা-বাবা জানে তাদের সন্তান ঢাকাতে ভাল পড়াশোনা করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তাদের সন্তান পড়াশোনা করার বদলে মোবাইল ফোনে পরিচয়ের মাধ্যমে অন্য ধর্মের এক মেয়ের সঙ্গে গভীর প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। শুধু প্রেম করেই ক্ষান্ত নয়। সে মেয়েটিকে কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হয়েছে অথচ কিছুই জানে না তার বাড়ির লোক। একমাত্র সন্তানের এ ঘটনা জানতে পেরে তার মা-বাবা এখন পাগলপ্রায়। বাগেরহাটের চিতলমারীতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এমন অসংখ্য মোবাইল প্রেমের ঘটনা এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে। নাড়া দিয়েছে অভিভাবক মহলে। তাদের সন্তানরা পড়াশোনার বদলে কোন্ পথে যাচ্ছে এমনই প্রশ্ন এখন অনেকের। জানা গেছে, মোবাইল ফোনে প্রেমের ভয়ঙ্কর নানা কাহিনী। এতে বিপথে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে তারা। সাবোখালী গ্রামের এক কলেজছাত্রী সম্পর্কে জানা যায়, সে মোবাইলে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। এর পর ওই যুুবক তার সাথে প্রতারণা করলে মেয়েটি বিয়ের দাবিতে ওই প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নেয়। তাকে ওই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হলে তার মা পুনরায় প্রতিবেশী যুবকের সঙ্গে তার মেয়েকে প্রেমিকের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এ সুযোগে প্রতিবেশী যুবক মেয়েটিকে প্রেমিকের বাড়িতে পৌঁছে দেবার কথা বলে নির্জন ঘরে আটকে রেখে বন্ধুদের নিয়ে সম্ভ্রমহানির চেষ্টা করে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। ঘরে ফিরে লোক-লজ্জার ভয়ে মেয়েটি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে, অন্যরা টের পেয়ে তাকে রক্ষা করেছে। বর্তমানে সে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। এছাড়া সন্তোষপুর গ্রামের ঝুমা নামে স্কুলছাত্রী মোবাইলে প্রেম করে এখন বিপাকে পড়েছে। জানা গেছে, ৫/৬ মাস আগে বাঁশবাড়িয়া গ্রামের দেবেন ম-লের ছেলে তারাশংকরের সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সন্তোষপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ঝুমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অল্প দিনের মধ্যে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তারা। এ অবস্থায় তারাশংকরের পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে বেঁকে বসে। বিষয়টি তারা মেনে নিতে রাজি নয়। চার-পাঁচ দিন আগে ঝুমা তারাশংকরের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি থেকে বের হয়। এদিন সে আর বাড়ি ফেরেনি। পরে জানা যায়, ঝুমা ও তারাশংকর থানায় আছে। চলাফেরা সন্দেহজনক হওয়ায় এলাকাবাসী তাদের থানায় সোপর্দ করেছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক জানাজানি হলে ঝুমার পরিবার থেকে তারাশংকরের পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু তার পরিবার এ বিয়ে কোনভাবেই মেনে নিতে রাজি নয়। এ পরিস্থিতিতে থানা থেকে বেরিয়ে ঝুমাকে রেখে তারাশংকর গা-ঢাকা দিয়েছে। লোকলজ্জার ভয়ে ঝুমা আর বাড়ি ফিরে যেতে পারছে না। বিয়ের দাবিতে সে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। দাবি আদায়ের জন্য গত তিন দিন ধরে অনশন করছে সে।
×