ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০ বছর পালিত হলো নানা অনুষ্ঠানে

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০ বছর পালিত হলো নানা অনুষ্ঠানে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হলো সোমবার। দিবসটি পালন উপলক্ষে সোমবার সকাল ৯টায় বন্দর ভবন ও চত্বরে জাতীয় পতাকা এবং বন্দর পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্দরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন শুরু হয়। এরপর বন্দর জেটি ও বহির্নোঙ্গরে থাকা সব জলযানে এক মিনিট করে হুইসেল বাজানো হয়। দিনব্যাপী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া প্রায় ১২ হাজার মানুষকে খাওয়ানো উদ্দেশ্যে ঐতিহ্যবাহী চাটগাঁইয়া মেজবানের আয়োজন করা হয়। রবিবার বিকেল থেকেই শুরু হয় রং-বেরঙের পতাকা, ব্যানার আর ফেস্টুন দিয়ে সাজ-সজ্জার কাজ। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার দুই পাশে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের পতাকা, আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত থাকবে সেগুলো। চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বন্দর চেয়ারম্যান ও নৌবাহিনীর রিয়ার এডমিরাল এম. খালেদ ইকবাল বলেন, গত ২০ বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডেলিংয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১১ শতাংশ। তার মধ্যে ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে গড় প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এই ৩ বছরে ২০ ফুট লম্বা কন্টেনার (টিইইউএস) হ্যান্ডেলিং বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ লাখ। বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়ানোর উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের স্ট্যাটেজিক মাস্টার প্ল্যানে এ বন্দরে ১৯ লাখ ৫৬ হাজার টিইইউএস কন্টেনার এবং ৪২ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন জেনারেল কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের কথা বলেছিল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এইচপিসি। কিন্তু আমরা সফলতার সঙ্গে সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছি। আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ২০১৫ সালে ২০ লাখ ২৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার এবং ৫১ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন জেনারেল কার্গো হ্যান্ডেলিং হয়েছে। বাংলাদেশের ‘অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার’ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে আরব ও ইয়েমেনের বণিকদের পর ক্রমান্নয়ে চাইনিজ, পর্তুগিজ, ডাচ ও ব্রিটিশরা এ বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। ১৮৮৭ সালের ২৫ এপ্রিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের পোর্ট কমিশনার্স এ্যাক্ট প্রণয়নের মধ্য দিয়ে আধুনিক চট্টগ্রাম বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয়। ১৮৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিনকে বন্দর দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের নৌ-বাণিজ্যের ৯৮ শতাংশ কন্টেনার এবং ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডেলিং হয়ে থাকে। ১৮৯২ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি গঠনের পর চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে চা ও পাট রফতানি বাড়তে থাকে। ১৯০৪ সালে এ বন্দরের মাধ্যমে ৩৯ দশমিক ২৩ মিলিয়ন রুপী বাণিজ্য হয়। এটি ক্রমান্বয়ে বেড়ে ১৯২৮ সালে ১৮৩ দশমিক ২৫ মিলিয়ন রুপীতে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রথম জেটি নির্মাণ শুরু হয় ১৮৯৯ সালে। ১৯১০ সালের মধ্যে ৪টি জেটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। ১৯২৮ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরকে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার। এরপর প্রাদেশিক সরকারের স্থলে গবর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিলের কাছে এ বন্দরের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দেয়া হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র বন্দর হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর। পঞ্চাশের দশকে এ বন্দরে ৭টি নতুন জেটি, কিছু সংখ্যক পন্টুন বার্থ ও মুরিং নির্মাণ করা হয়। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে ১ থেকে ১৩ নম্বর পর্যন্ত জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পরবর্তী ৮ বছরের মধ্যে জেটিগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে চিটাগং কন্টেনার টার্মিনাল (সিসিটি) নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৮ সালে এ বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরুর পর ২০০৭ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কিন্তু এরপর বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রমে অনেকটা স্থবিরতা দেখা গেছে। কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নতুন অবকাঠামো নির্মাণ বা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়নি। এটিকে দেশের প্রধান বন্দর হিসেবে ধরে রাখতে নতুন পোর্ট কিংবা এর সম্প্রসারণ জরুরী বলে মত দিয়েছেন বন্দরের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা। এছাড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী বে-টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও কর্ণফুলী কন্টেনার টার্মিনাল (কেসিটি) নির্মাণও জরুরী বলে জানিয়েছেন তারা।
×