ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্নতির সম্ভাবনা নেই নতুন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে এলেও

সৌদি-মার্কিন সম্পর্কে অবনতি

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

সৌদি-মার্কিন সম্পর্কে অবনতি

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের ক্ষুণœ হওয়া সম্পর্ক আগামী বছরের প্রথম দিকে কোন নতুন প্রেসিডেন্টের হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নেয়ার পরও উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। মার্কিন ও সৌদি বিশেষজ্ঞরা এ কথা জানান। বিশেষজ্ঞরা বলেন, গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার রিয়াদ সফরের অভিপ্রেত লক্ষ্যার্জনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করতে ব্যর্থ হয়। তারা মার্কিন মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলছিলেন। সাবেক সৌদি গোয়েন্দাপ্রধান প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সাল সিএনএনকে বলেন, আগেকার মার্কিন সৌদি সম্পর্ক চিরদিনের মতো বিদায় নিয়েছে। তিনি বলেন, আর কোন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল সেই আগেকার দিনগুলোতে ফিরে যাবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা করা উচিতÑ এমনটা আমি মনে করি না। মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান বব কর্কার বলেন, দু’বছর আগে যেমন সম্পর্ক ছিল, সেটি এখন আর নেই। কর্কার দি হিল পত্রিকাকে বলেন, যেসব ইস্যু মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, সেগুলো বেশি দীর্ঘস্থায়ী এবং সৌদি আরব আসলে আমাদের ওপর তেমন আর নির্ভর করতে পারে বলে বোধ করছে না। ক্যাপিটল হিল এলাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাটি মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের মধ্যে জনপ্রিয়। তিনি বলেন, তারা এমন সব বিষয় নিজেরাই নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিয়েছে, অতীতে যা করতেন না। এটিই প্রশাসন ও তাদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে বলে আমি মনে করি। কার্কেনি এনডাওমেন্ট যার ইন্টারন্যাশনাল পিসের জন্য লেখা এক যৌথ নিবন্ধে আমেরিকার দু’প-িত পেরি ক্যামাক ও রিচার্ড সোকোলস্কি যুক্তি দেখান যে, প্রেসিডেন্ট ওবামা চলে যাবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সৌদি আরব নীতি আগের অবস্থায় ফিরে যাবে বলে যারা আশা করছেন, তারা সম্ভবত হতাশ হবেন। তারা লেখেন, নতুন স্বাভাবিক সম্পর্ক আরও আস্থাহীন এক মার্কিন সৌদি সম্পর্কই হবে। উভয়পক্ষই একে অপর সম্পর্কে খুব কমই প্রত্যাশা পোষণ করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে কখনও কখনও তীব্র মতপার্থক্য প্রকাশ করবে, কিন্তু যখন তাদের স্বার্থ পরস্পরবিরোধ হবে তখন তারা আপোস করার চেষ্টা করবে। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এ্যান্ড মার্ক লিনচ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় লেখেন, সৌদি শাসকগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নিয়ে সৌদিদের আশঙ্কাই মার্কিন সৌদি উত্তেজনার গভীরতর উৎস। লিনচ লেখেন, ওবামার দুর্বলতা নয় বরং আমেরিকার স্বার্থকে উপসাগরীয় নেতাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার নিচে স্থান দিতে ওবামার অস্বীকৃতি জানানোর ক্ষমতাই তাদের হতাশ করেছে। তিনি যুক্তি দেখান যে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থেই ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে মার্কিন প্রশাসনও সেই নীতি অব্যাহত রাখবে। প্রেসিডেন্ট ওবামার সৌদি আরব সফর সম্পর্কিত এক বিশেষ রিপোর্ট দি হিলে বলা হয়, কয়েকটি ইস্যুকে কেন্দ্র মার্কিন সৌদি সম্পর্ক ক্ষুণœ হয়েছে। এদের মধ্যে ইরান পরমাণু চুক্তি, ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন ও বাদশা সালমান শাসকগোষ্ঠীর যুদ্ধংদেহী পররাষ্ট্রনীতিই প্রধান। নতুন সৌদি বাদশার অধীনে রিয়াদ ইরান এবং ৬টি বিশ্ব শক্তির মধ্যে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে, কিন্তু ওয়াশিংটনকে এর নীতি পুনর্বিবেচনায় রাজি করাতে ব্যর্থ হয়। রিপোর্টে এ কথা বলা হয়। বুধবার বাদশা সালমান উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের জন্য আগত প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্র নেতাদের ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত জানান, কিন্তু তিনি প্রেসিডেন্ট ওবামাকে স্বাগত জানাতে রিয়াদের গবর্নর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ারকে বিমানবন্দরে পাঠান। দি হিলে উল্লেখ করা হয়, বিমানবন্দরে বাদশার অনুপস্থিতি দু’পুরনো মিত্রের সম্পর্ক শীতল হওয়ার সবচেয়ে দৃশ্যমান আভাস। প্রেসিডেন্ট ওবামা বৃহস্পতিবার মিডিয়ার কাছে দুটি দেশের মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে কৌশলগত মতপার্থক্য থাকার কথা স্বীকার করেন, তবে তিনি এর অনেকাংশই সব সময়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন। সৌদি আরবে এক সময়ে কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট জর্ডন ঐ পত্রিকাকে বলেন, মতপার্থক্য নতুন কিছু নয়, কিন্তু তা নতুন বাদশার আমলে আরও স্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে। বাদশা সালমানের মনোভাব কঠোর। এটি সম্ভবত প্রশাসন ও কংগ্রেসের কোন কোন সদস্যের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কার্নেগি এনডাওমেন্টের ক্যামাক বলেন, উভয়পক্ষ শীঘ্রই তাদের সম্পর্ক জোড়া দেয়ার চেষ্টা করবে এবং কোন পর্যায়ে তা সফল হতে পারে। কিন্তু এটি সম্পর্কে অবনতি ঠেকাতে পারবে না।
×