ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছন্দে ফিরলেন মুশফিক, জিতল মোহামেডান

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৬

ছন্দে ফিরলেন মুশফিক, জিতল মোহামেডান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সময়টা বড্ড খারাপ যাচ্ছিল বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের। মাঝে মাঝে দু’একটি ইনিংস ভাল খেললেও কোন ফরমেটেই আশার আলো দেখাতে পারছিলেন না। এশিয়া কাপ টি২০ ও টি২০ বিশ্বকাপেতো পুরাই ফ্লপ! অবশেষে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল) খেলতে নেমে নৈপুণ্যে ফিরলেন মুশফিক। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের হয়ে ৮০ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় সর্বোচ্চ ৭২ রানের ইনিংস খেললেন। মোহামেডানও ৭৮ রানের বড় ব্যবধানেই ব্রাদার্স ইউনিয়নকে হারিয়ে লীগে শুভ সূচনা করল। একইদিন অনুমিতভাবেই শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবও জিতল। মুক্তার আলীর (৪/১৯) দুর্দান্ত বোলিংয়ে কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমিকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে শেখ জামাল। বিকেএসপিতে দুর্দান্ত একটি ম্যাচ হয়েছে। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, উত্তেজনাকর হাইস্কোরিং ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত টাই হয়েছে। না ভিক্টোরিয়া, না লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ; কোন দলই জিতেনি। মুশফিকের দিনে নায়ক মিলন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মোহামেডান-ব্রাদার্স ম্যাচের দিকেই সবার দৃষ্টি ছিল। মোহামেডান জিততে পারবেতো? সেই প্রশ্নও ছিল। সব প্রশ্নের উত্তর মিলে গেছে। সহজ জয়ই পেয়েছে মোহামেডান। তবে মোহামেডানের জয়ের চেয়েও যেন ম্যাচটিতে মুশফিক যে নৈপুণ্যে ফিরেছেন, সেটিই সবার জন্য স্বস্তি হয়ে এসেছে। মোহামেডানের কর্মকর্তারা জয়টি পেয়ে খুশি হয়েছেন স্বাভাবিক। তবে জাতীয় দলের জন্য মুশফিকের নৈপুণ্যে ফেরা যে জরুরী ছিল, সেটিও হয়ে গেল। তবে ম্যাচটিতে কিন্তু সর্বোচ্চ রান করেও নায়ক মুশফিক নন। নাজমুল হোসেন মিলন ম্যাচ সেরার পুরস্কারটি নিজের করে নিয়েছেন। কিভাবে? ২১ রানেই মোহামেডানের ২ উইকেটের পতন ঘটে যায়। সেখান থেকে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গা ও মুশফিক মিলে তৃতীয় উইকেটে ১৩৫ রানের জুটি গড়েন। দুইজন মিলে দলকে ১৫৬ রানে নিয়ে যান। এমন সময়ে মুশফিক ও থারাঙ্গা (৭০) আউট হয়ে যান। ১৮২ রানে গিয়ে যখন নাঈম ইসলামও (৮) সাজঘরে ফেরেন, তখন মোহামেডান ধুকতে থাকে। এ রকম কঠিন মহূর্তেই মিলন ব্যাটিং ভেল্কি দেখান। ইনিংস শেষ হতে ১১.৪ ওভার বাকি থাকে। ব্যাট হাতে নেমেই যে ধুন্ধুমার ব্যাটিং শুরু করেন। যেন টি২০ খেলছেন। ৪১ বলেই ৭০ রান করে ফেলেন মিলন। ৫টি চার ও ৪টি ছক্কা হাঁকান। মিলনকে ভালভাবে সঙ্গ দেয়া আরিফুল হক (৪১) ২২৯ রানের সময় আউট হলেও মিলন শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেন। মোহামেডানকে ২৮৫ রানে নিয়ে যান মিলন। শেষ মুহূর্তেই ঝলকানির জন্যই মিলনই ম্যাচ সেরা হন। মোহামেডান এত বেশি রান করে ফেলার পর কি আর অভিজ্ঞ-তরুণদের নিয়ে গড়া দল ব্রাদার্স জিততে পারে? পারেওনি। শুভাশিষ রায়ের (৩/২৮) সঙ্গে হাবিবুর রহমান (২/২২) ও এনামুল হক জুনিয়রের (২/৫১) বোলিং নৈপুণ্যের সামনে পড়ে ৪৯.৫ ওভারে ২০৭ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় ব্রাদার্স। জাকির হাসান সর্বোচ্চ ৬১ রান করেন। ইমরুল কায়েস, নাফিস ইকবাল, শাহরিয়ার নাফীস, জিম্বাবুইয়ের শন উইলিয়ামস, তুষার ইমরান; কেউই ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি। হারও হয় তাই ব্রাদার্সের নিয়তি। মুক্তারেই শেষ কলাবাগান সিএ ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে শেখ জামাল যে জিতবে, তা সবারই ধারণা ছিল। কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি (সিএ) এতটাই তরুণ দল বানিয়েছে যে, বড় কোন দলকে হারাতে পারলেই তারা বড় প্রাপ্তি খুঁজবে। লীগের প্রথম ম্যাচে তা বোঝাও গেল। এক মুক্তার আলীর গতির সামনেই টিকতে পারল না কলাবাগান সিএ’র ব্যাটসম্যানরা। ৪ উইকেট নেয়া মুক্তারের সঙ্গে ২ উইকেট করে নেয়া সোহাগ গাজী ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের স্পিন ঘূর্ণিতে ৪৪.৩ ওভারে ১৫২ রান করতেই গুটিয়ে যায় কলাবাগান সিএ। মেহেদী হাসান মিরাজ সর্বোচ্চ ২৫ রান করতে সক্ষম হন। এ রানের পর কি আর বড় ব্যবধানে না জিতে পারে শেখ জামাল। মাহবুবুল করিমের ৭৮ রানের পর দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মার্শাল আইয়ুবের ৩১ ও মাহমুদুল্লাহ’র ২১ রানে ৮ উইকেটের বড় জয়ই পেয়ে যায় শেখ জামাল। তাইজুলের ছক্কায় হার এড়ালো রূপগঞ্জ বিকেএসপিতে আগে ব্যাট করে ৩১৪ রান করে ভিক্টোরিয়া। দিনের একমাত্র সেঞ্চুরিটি করেন আল আমিন জুনিয়র (১০২)। মনে হচ্ছিল, ম্যাচটি ভিক্টোরিয়াই জিততে যাচ্ছে। এত বেশি রান করার পর কি আর ভিক্টোরিয়া হারবে, সেই ভাবনা কারও আসে? কিন্তু কি দুর্দান্ত ম্যাচই না হলো! মোশাররফ হোসেন রুবেলের ৮৮ ও নাহিদুল ইসলামের ৫৭ রানে রূপগঞ্জ শেষদিকে জয়ের দ্বারপ্রান্তেই পৌঁছে যায়। আবার যখন ২৯০ রানে ৯ উইকেটের পতন ঘটে যায়, রূপগঞ্জ যেন হারের সম্ভাবনাতেই পড়ে যায়। যে দলটি জিতবে, আশা করা হয়েছিল; সেই দলটিই বিপাকে পড়ে যায়। কি আশ্চর্য, শেষ দুইজন বোলার তাইজুল ও আবু হায়দার রনি। এ দু’জন মিলেই দলকে শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়ে যান। শেষ ওভারে জিততে যখন ১৩ রানের প্রয়োজন। হাতে থাকে ১ উইকেট। দু’জন মিলে ৬ বলে ১২ রানও নিয়ে নেন! শেষ বলে জিততে রূপগঞ্জের দরকার লাগে ৭ রান। কামরুল ইসলাম রাব্বি বোলিংয়ে। ৫ বলে কোন বাউন্ডারিই হয়নি। নো-ওয়াইড না হলে ৭ রান এক বলে নেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। ম্যাচটি জিতবে না রূপগঞ্জ তা নিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু ম্যাচটি টাই হতে পারে। যদি ব্যাটিংয়ে থাকা তাইজুল ছক্কা হাঁকিয়ে দিতে পারেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে যার ৬টি, লিস্ট এ ম্যাচে যার ১টি ও টি২০তে ১টি ছক্কা যার আছে; তার কাছ থেকে শেষ বলে ছক্কা অসম্ভবই বলা চলে। সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখালেন তাইজুল। ছক্কা হাঁকিয়ে দিলেন। তাতে ম্যাচও টাই হয়ে গেল। নিশ্চিত হার থেকে রূপগঞ্জকে বাঁচালেন তাইজুল। তবে সেঞ্চুরি করায় আল আমিনই ম্যাচ সেরা হলেন। স্কোর ॥ মোহামেডান-ব্রাদার্স ম্যাচ, মিরপুর মোহামেডান ইনিংস ২৮৫/৬; ৫০ ওভার (মুশফিক ৭২, মিলন ৭০, থারাঙ্গা ৭০, আরিফুল ৪১; আসিফ ২/৪৪, শহীদ ২/৫৮)। ব্রাদার্স ইনিংস ২০৭/১০; ৪৯.৫ ওভার (জাকির ৬১, নুর ৩৬, সাজ্জাদ ২৯, নাফিস ২৬; শুভাশিষ ৩/২৮, এনামুল জুনিয়র ২/৫১)। ফল ॥ মোহামেডান ৭৮ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ নাজমুল হোসেন মিলন (মোহামেডান)। শেখ জামাল-কলাবাগান সিএ ম্যাচ-ফতুল্লা কলাবাগান সিএ ইনিংস ১৫২/১০; ৪৪.৩ ওভার (মিরাজ ২৫, বিশ্বনাথ ২২, মাইশুকুর ১৯, নুর ১৭*; মুক্তার ৪/১৯)। শেখ জামাল ইনিংস ১৫৩/২; ২৬.৪ ওভার (মাহবুবুল ৭৮, মার্শাল ৩১*, মাহমুদুল্লাহ ২১*, জয়রাজ ১৪)। ফল ॥ শেখ জামাল ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মুক্তার আলী (শেখ জামাল)। ভিক্টোরিয়া-লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ম্যাচ- ভিক্টোরিয়া ইনিংস ৩১৪/৯; ৫০ ওভার (আল আমিন ১০২, রাব্বি ৭৩, চাতুরাঙ্গা ৪৪, ধীমান ৩১, বিজয় ২৫*; রনি ৫/৫২, বাবু ৩/৭৬)। রূপগঞ্জ ইনিংস ৩১৪/৯; ৫০ ওভার (মোশাররফ ৮৮, নাহিদুল ৫৭, মিঠুন ২৯, তাইজুল ১৭*, রনি ৮*; এনামুল ৩/৫২)। ফল ॥ ম্যাচ টাই। ম্যাচসেরা ॥ আল আমিন জুনিয়র (ভিক্টোরিয়া)।
×