ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণাঢ্য আয়োজন

জাতির অহঙ্কার চট্টগ্রাম বন্দরের ১২৯তম বর্ষপূর্তি আজ

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৫ এপ্রিল ২০১৬

জাতির অহঙ্কার চট্টগ্রাম বন্দরের ১২৯তম বর্ষপূর্তি আজ

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জাতীয় অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক বন্দর। বলা হয় গেটওয়ে অব বাংলাদেশ। ‘কান্ট্রি মুভস উইথ আস’- এ সেøাগানে জাতির গৌরব ও অহঙ্কারের প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরের আজ ১২৯তম বর্ষপূর্তি। আজ ২৫ এপ্রিল সোমবার বন্দর দিবস। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বন্দরগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। পৃথিবীজুড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচিতির জুড়ি নেই। কন্টেনারযোগে পণ্য পরিবহনের যুগে প্রবেশের আগে এ বন্দর যে অবস্থানে ছিল সে চেহারা এখন আর নেই। দিনে দিনে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ফলে এর ব্যাপক বিস্তৃতি যেমন ঘটেছে তেমনি বেড়েছে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণও। আধুনিক যন্ত্রপাতির সমাহারে ক্রমাগতভাবে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়েছে এই বন্দর। বাংলাদেশকে চেনে না এমন অনেকে এ বন্দরের নাম জানে। আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্যে সারা পৃথিবীর বন্দরসমূহের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সম্পর্ক উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ঘটার প্রেক্ষাপটে এ বন্দরের অবস্থান আজ সর্বত্র সমাদৃত। চট্টগ্রামের অহঙ্কার, দেশের গৌরব, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এ বন্দরের ১৩০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে গ্রহণ করা হয়েছে ব্যাপক আয়োজন। উৎসবমুখর পরিবেশে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিবছরই দিবসটি পালন করে থাকে, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। রয়েছে ঐতিহ্যবাহী চাটগাঁইয়া মেজবানে প্রায় ১২ হাজার মানুষকে খাওয়ানোর আয়োজন। এছাড়া দিনভর থাকছে আলোচনা সভা, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচী। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, রবিবার বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে রং-বেরঙের পতাকা, ব্যানার আর ফেস্টুনে সজ্জিত করার কাজ। বন্দর থেকে সিইপিজেড ও জিইসি মোড় পর্যন্ত এলাকার দু’পাশে সজ্জিত করা হবে বিভিন্ন ধরনের পতাকায়, যা থাকবে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত। আজ সকাল ৯টায় বন্দর ভবন ও চত্বরে জাতীয় পতাকা এবং বন্দর পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা হবে বন্দর দিবস পালন উৎসবের। বন্দর জেটি ও বহির্নোঙ্গরে থাকা জলযান ও জাহাজগুলো থেকে এক মিনিট ধরে একনাগাড়ে বাজানো হবে হুইসেল। দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর স্টেডিয়াম সংলগ্ন কার শেডে রয়েছে মেজবানের আয়োজন। এতে ১২ হাজার লোকের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বন্দর রিপাবলিক ক্লাবে বাথ অপারেটরস, শিল্প হ্যান্ডলিং অপারেটস এ্যান্ড টার্মিনাল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগেও রয়েছে মেজবান। নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে সিটি কনভেনশন সেন্টারে মেজবানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং এ্যান্ড বাথ অপারেটর এ্যাসোসিয়েশন। বন্দর সংশ্লিষ্ট এ দুটি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত মেজবানে আপ্যায়িত করা হবে বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থাগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল রবিবার বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বন্দরের আদ্যোপান্ত এবং দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সংস্থাটির অবদানের নানা দিক। তিনি উল্লেখ করেন, বন্দরের অগ্রযাত্রা ও আরও উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে গৃহীত পরিকল্পনাগুলো। এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের উর্ধতন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও। বন্দর চেয়ারম্যান এম খালেদ ইকবাল বলেন, স্ট্র্যাটেজিক মাস্টার প্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং জিএমবিএইচ প্রণীত পক্ষেপণে ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯ লাখ ৫৬ হাজার টিইইউএস কন্টেনার এবং ৪২ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং করতে হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই ২০১৫ সালে সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ২০ লাখ ২৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার এবং ৫১ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং করে ইতিহাস গড়েছে। তিনি জানান, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে কন্টেনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১৭ শতাংশ এবং ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯২২ টিইইউএস। এটিও একটি রেকর্ড। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং আরএমজি সেক্টরে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যে আমাদের সার্বিক অর্থনীতি আজ ক্রমশ উন্নতির দিকে। অতি সম্প্রতি সরকার সারাদেশে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ফেনী-মীরসরাই ও আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চল চট্টগ্রাম বন্দরের সন্নিকটে। বন্দর কর্তৃপক্ষও নিজের সক্ষমতা বাড়াতে বিরাট পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এর মধ্যে তিনি ২০১৭ সাল নাগাদ প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্টস সংগ্রহ করে এনসিটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা, ২০২০ সাল নাগাদ কর্ণফুলী কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন করে অপারেশনে আনা, ২০২৩ সাল নাগাদ বে-টার্মিনালের প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে চালু করা, ২০২৪ সাল নাগাদ জিসিবি এর ১ থেকে ৯ নম্বর জেটিতে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন করে চালু করা এবং ২০২৮ সাল নাগাদ বে-টার্মিনালের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ সম্পন্ন করে চালু করার পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করেন। প্রসঙ্গত, ১৮৮৭ সালের ২৫ এপ্রিল তৎকালীন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া সরকারের পোর্ট কমিশনারস এ্যাক্ট প্রণয়নের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় চট্টগ্রাম বন্দরের। সে অনুযায়ী বন্দরের ১২৯ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ সোমবার। এ দিনটি বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বড়ই আনন্দের ও উৎসবের। কর্মসূচীর মধ্যে মেজবান ছাড়াও রয়েছে আজ বিকেলে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত অন্তত ১শ’ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এখনও অনেক মুক্তিযোদ্ধা বন্দরে চাকরিরত আছেন। সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বন্দর স্টেডিয়ামে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। এতে পরিবেশন করবেন খ্যাতিমান শিল্পীরা।
×