ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচনোত্তর সহিংসতা গাজীপুর ও পাবনায় দুজন নিহত ॥ লুটপাট, ভাংচুর

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৫ এপ্রিল ২০১৬

নির্বাচনোত্তর সহিংসতা গাজীপুর ও পাবনায় দুজন নিহত ॥ লুটপাট, ভাংচুর

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ তৃতীয় দফা ইউপি নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের ফল দেরিতে ঘোষণা, ভোট কারচুপিতে বাধা এবং ভোট পুনর্গণনার দাবিতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হামলায় কমপক্ষে দু’জন নিহত এবং প্রায় ২শ’ আহত হয়। নিহত দু’জন হলেনÑ পাবনার চাটমোহরের ইমদাদ হোসেন ও গাজীপুরের শ্রীপুরের আবুল খসরু। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শনিবার রাত ও রবিবার এসব ঘটনা ঘটে। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতাদের। গাজীপুর ॥ শ্রীপুরে ইউপি নির্বাচনের ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দু’প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পরাজিত এক ইউপি সদস্য প্রার্থীর ভাই নিহত হয়েছেন। প্রতিপক্ষরা তাকে হত্যা করেছে বলে নিহতের পরিবার দাবি করেছে। তবে পুলিশের দাবি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। নিহতের নাম আবুল খসরু (৫২)। তিনি মাওনা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী শামসুল হকের চাচাত ভাই ও স্থানীয় বারতোপা বৈশাখী নাট্য গোষ্ঠীর সহ-সভাপতি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোট গণনা শেষ হওয়ার পর শনিবার রাতে মাওনা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের এক সদস্য প্রার্থীর লোকজন স্থানীয় দক্ষিণ বারতোপা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে চেয়ার টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে কেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশ না করেই ব্যালট পেপারসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভোট গ্রহণের মালামাল নিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অপর ইউপি সদস্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা প্রতিপক্ষকে ধাওয়া করে। এতে দু’পক্ষের মাঝে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় আবুল খসরু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। তার বাড়ি ওই ইউনিয়নের বারতোপা এলাকায়। নিহতের চাচাত ভাই ইউপি সদস্য প্রার্থী শামসুল হক বলেন, তার কোন সমর্থক কেন্দ্রে হামলা করেনি। সদস্য প্রার্থী সুরুজ্জামানের নেতৃত্বে তার লোকজন ভোটকেন্দ্রে হামলা করে এবং আবুল খসরুকে হত্যা করেছে। নির্বাচিত ইউপি সদস্য সুরুজ্জামান বলেন, হামলায় আহতের অভিযোগ পুরোটাই মিথ্যা ও বানোয়াট। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে শামসুল হকের লোকজন ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। পাবনা ॥ নির্বাচনের ফল দেরিতে ঘোষণায় চাটমোহরের বাহাদুরপুর ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ত্রিমুখী সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে ইমদাদ হোসেন (৩৫) নামে একজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত ইমদাদ বাহাদুরপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে। তিনি বিএনপির সমর্থক বলে জানা গেছে। চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, নির্বাচনের ফল ঘোষণায় দেরি হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকরা মথুরাপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর ভোটকেন্দ্রে বিক্ষোভ করে। বিক্ষুব্ধ জনতা দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আনসার ও বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। আহতদের চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ইমদাদ হোসেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। সিরাজগঞ্জে নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় তাড়াশে এক স্কুলশিক্ষককে কুপিয়ে জখম এবং ভোট কারচুপিতে বাধা দেয়ার কারণে বেলকুচিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতার বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ও ভাংচুর করে ব্যাপক লুটপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নীলফামারীতে ইউপি নির্বাচনপরবর্তী পরাজিত ওয়ার্ড সদস্য প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে হামলা, বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের পানিশ্বর ইউনিয়নের টিঘর এলাকায় নির্বাচনপরবর্তী সংঘর্ষে মহিলা ও শিশুসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এ সময় বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভোলাব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চারিতালুক এলাকায় কেন্দ্র দখল করে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলাসহ সহিংসতার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। হবিগঞ্জের বানিয়াচঙে নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংর্ঘষে আহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন। লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের ৮নং চরবংশী ইউনিয়নের সদস্য (মেম্বার) পদে জয়ী প্রার্থীর বিজয় মিছিলে হামলা চালিয়েছে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বিজয়ী ও পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। লালমনিরহাটে শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় কালীগঞ্জের চন্দ্রপুর ইউনিয়নের হররামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (কিসমত গোড়ল) কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী মোঃ ওয়াজেদ আলী (মোরগ মার্কার) পুনরায় ভোট গণনার দাবি জানালে প্রিসাইডিং অফিসার কনক চন্দ্র রায় বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে ওয়াজেদ আলী তার লোকজন নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক দফায় রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ময়মনসিংহের নান্দাইলের বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় ঘরবাড়ি ভাংচুর, লুটপাট ও প্রতিপক্ষের হামলায় ৯ জন আহত হয়েছে।
×