ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ জব্বারের বলী খেলা

কৌশল ও বাহুবলের পরীক্ষা, পালাক্রমে লড়বে দুই শ’ বলী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৫ এপ্রিল ২০১৬

কৌশল ও বাহুবলের পরীক্ষা, পালাক্রমে লড়বে দুই শ’ বলী

মাকসুদ আহমদ ॥ গ্রামীণ ঐতিহ্য আর ইতিহাসের সাক্ষী জব্বারের বলীখেলা। ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার অধ্যায় হিসেবে জব্বারের বলীখেলাকে চট্টগ্রামবাসী ধরে রেখেছে শতবর্ষেরও বেশি সময় ধরে। গ্রাম বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য এই দিনটিকে ঘিরে শুধু চট্টগ্রামেই নয, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বলীরাও এ দিনটির অপেক্ষায় প্রহর গুণতে থাকে। বৈশাখের আগমন উপলক্ষে কবিরা যেমন কবিতা সৃষ্টি করেছেন, তেমনি সাহিত্যিকরা গল্প উপন্যাস আর প্রবন্ধে বৈশাখের বিভিন্ন আয়োজনকে তুলে ধরতে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন বছরের পর বছর। কিন্তু সারাদেশের মধ্যে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠ হচ্ছে জব্বারের বলীখেলার একমাত্র স্থান। জয়ীদের কৌশলে টিকে থাকার প্রচেষ্টায় বাহুবলের শক্তিতে কুপোকাত হবে পরাজিতরা। সাধারণ বাউটে লড়বে অনভিজ্ঞ বলীরা। চ্যালেঞ্জিং বাউটে জমে উঠবে বলীখেলার মূল আসর। পালাক্রমে জুটিতে লড়বে প্রায় ২শ’ বলী। এরমধ্যে চ্যালেঞ্জিং বাউটে লড়বে প্রায় ৮ থেকে ১০ জন। এদিকে, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ১০৭তম জব্বারের বলীখেলা উপলক্ষে ৩ দিনব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে শনিবার। প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল তথা ১২ বৈশাখ চট্টগ্রামের সংস্কৃতির অন্যতম অধ্যায় টিকিয়ে রাখতে জব্বারের বলী খেলার আয়োজন করা হয় লালদীঘি মাঠে। উল্লেখ্য জব্বারের বলী খেলার চূড়ান্ত পর্ব সূচনা হয়েছিল ১৯০৯ সালে। গ্রামীণফোনের পৃষ্ঠপোষকতায় ঐতিহ্যবাহী এ খেলার আয়োজন করা হচ্ছে। চ্যাম্পিয়ন বলীকে ২০ হাজার টাকা সম্মানিসহ ক্রেস্ট দেয়া হবে। রানারআপ পাবেন ১৫ হাজার টাকার চেক ও ক্রেস্ট। সাধারণ বাউটে যারা লড়বেন তাদের সান্ত¡না পুরস্কার হিসেবে মেডেল পরিয়ে দেয়া হবে। আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় এবারের বলী খেলার উদ্বোধন করবেন সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার। প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করবেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। খেলা পরিচালনা করবেন কাউন্সিলর ও রেফারি আবদুল মালেক। যেখানে বলীখেলার সূচনালগ্ন থেকে অর্থাৎ ১০৬ বছর আগে ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার এ খেলা শুরু করেন চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে। সে থেকে এখনও চলছে এ আয়োজন। তবে জব্বারের বলীখেলার এতিহ্য টিকে রয়েছে শতবর্ষ ধরে তেমনি সিআরবির শিরীষতলায় আরেক ব্যবসায়ীর আয়োজনে প্রতি বাংলা বর্ষের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে আয়োজন করা হয়। এবার একটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে শিরীষতলার বলীখেলায়। সেটি হলো এতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলার মূল রেফারি আবদুল মালেক এই আঙ্গিনায়ও রেফারি ছিলেন। প্রায় ১৫০ বর্গফুটের মঞ্চে লড়বে ২শ’ বলী। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে বলীর খাতায়। রেজিস্ট্রেশনের হিসেব অনুযায়ী ২শ’ বলীকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হবে। দুটি বাউটে এসব বলীরা লড়বে নিজেদের পেশী শক্তির জোরে। সে সঙ্গে থাকবে কুপোকাত করার কৌশল। অতীতে যারা খেলেছে তারা অনেকটা রপ্ত করে ফেলেছে কুপোকাত করার কৌশলকে। ফলে অনায়াসে তারা প্রতিদ্বন্দ্বীকে হার মানিয়ে মেডেল জিতে নেবে। সাধারণ বাউটে লড়বে প্রায় ১৯০ জন। এছাড়া চ্যালেঞ্জিং বাউটে লড়বে বাকি ১০ জন। চ্যালেঞ্জিং বাউট থেকে উঠে আসবে চ্যাম্পিয়ন বাউটের বলীরা। এ বাউটে মাত্র চারজন বলী লড়বে। প্রথম অবস্থায় দুটি গ্রুপে ২ জন করে লড়বে। উভয় গ্রুপ থেকে উঠে আসা বলী শেষ বাউট বা চূড়ান্ত পর্বে লড়ে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ হবে। এদিকে, বলীখেলাকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী মেলা ও সার্কাসের আয়োজন করা হয়েছে লালদীঘি মাঠে। মেলা উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে পৌঁছেছে গত বুধবার। বৃহস্পতিবার থেকে একে একে ফুটপাথ ও রাস্তার আইল্যান্ড দখল করে ব্যবসায়ীরা নিজেদের পসরা সাজিয়েছে। মেলা উপলক্ষে বলীখেলা কমিটির পক্ষ থেকে কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জমজমাট আয়োজনের জন্য। এরমধ্যে নন্দনকানন, আন্দরকিল্লা, কোতোয়ালী, জেল রোড, রাইফেল ক্লাবের মোড় থেকে লালদীঘি পর্যন্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। শনিবার থেকে মূলত মেলার তিন দিনব্যাপী আয়োজন শুরু হয়েছে। কাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মেলা আয়োজনের লিখিত নির্দেশনা থাকলেও আরও দুয়েকদিন গড়াবে এ মেলা। গ্রামীণ জনপদ থেকে তুলে আনা তৈজসপত্র আর গৃহসজ্জার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যোগান রয়েছে এ মেলায়। তবে সার্কাসের নামে অশ্লীল নৃত্য বন্ধ করতে পারছে না সিএমপি।
×