বিশেষ প্রতিনিধি ॥ চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে চাল এবং ২৩ টাকা কেজি দরে ধান কিনবে সরকার। ধান ও চাল মিলে মোট ১৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য কেনা হবে। এবার সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনবে। কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম কেজিতে এক টাকা বাড়লেও সরকার চাল কিনবে গতবারের সমান দামে। আগামী ৫ মে থেকে ৩১ আগস্ট সরকারীভাবে এই ধান ও চাল সংগ্রহ করা হবে। সচিবালয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রবিবার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভা শেষে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকের এ তথ্য জানান।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এবার ১৩ লাখ মেট্রিক টন ধান ও চাল সংগ্রহের মধ্যে ৭ লাখ টনই থাকছে ধান, যা কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কেনা হবে। এছাড়া চাল আকারে ৬ লাখ টন কেনা হবে। আগামী ৫ মে থেকে শুরু হয়ে এ ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। বোরো সংগ্রহের ক্ষেত্রে এবার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা সময় সময় ধান সংগ্রহ করি কম। চাল বেশি সংগ্রহ করা হয়। এটা সবসময় চলে আসছে। বোরোতে এর আগে কখনও কৃষকের কাছ থেকে ৭ লাখ টন ধান কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়নি। কৃষককে সরাসরি প্রণোদনা দিতে ও ফরিয়াদের দৌরাত্ম্য কমাতে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত মৌসুমে এক লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান কেনা হলেও এবার ‘কৃষকের কথা মাথায় রেখে’ ৭ লাখ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে বলে জানান কামরুল। এবার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে জানিয়ে কামরুল বলেন, চাল কেনা হবে মিল মালিকদের কাছ থেকে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর ৩২ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ২২ টাকা কেজি দরে এক লাখ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করে সরকার। এবার প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদনে ২০ টাকা ৭০ পয়সা ও চাল উৎপাদনে ২৯ টাকা খরচ হয়েছে। গত বছর ধানের উৎপাদন খরচ ছিল কেজি প্রতি ২০ টাকা এবং চালের উৎপাদন খরচ ছিল কেজি প্রতি ২৭ টাকা ৫০ পয়সা। তিনি বলেন, কৃষকের লাভের কথা চিন্তা করেই অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এবার অধিক পরিমাণে ধান সংগ্রহ করা হবে।
মন্ত্রী জানান, এ বছর প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে ২০ টাকা ৭০ পয়সা। আর এক কেজি চালের উৎপাদন খরচ ২৯ টাকা।
সোমবার খাদ্য ভবনে খাদ্যশস্য সংগ্রহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চাই। সেখানে এ বিষয়টি জানানো হবে। আশা করছি সংগ্রহের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনার প্রশংসা সবাই করবে।
তিনি বলেন, সরকারী গুদামে বর্তমানে খাদ্য মজুদ আছে ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৪৩১ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এসব গুদামের ধারণ ক্ষমতা ২০ লাখ মেট্রিক টন। সেক্ষেত্রে ১৩ লাখ টন নতুন খাদ্যশস্য কেনার পর সংরক্ষণে সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৩ লাখ মেট্রিক টন ধান-চাল তো একদিনেই কিনছি না। প্রতিদিনই গোডাউন থেকে কমছে।
খাদ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ কমিটির সদস্য ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।