ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বখাটের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে স্কুল ছাত্রীর বাবা

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৫ এপ্রিল ২০১৬

বখাটের বিরুদ্ধে মামলা করে  বিপাকে স্কুল ছাত্রীর বাবা

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ শ্রীনগরে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় প্রকাশ্যে এক স্কুলছাত্রীকে জুতাপেটার ঘটনায় বিচার চাওয়াটাই অপরাধ হয়েছে ওই স্কুলছাত্রীর পরিবারের। গত শুক্রবার বিকেলে শ্রীনগর থানায় তিনজনকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর পরই এক বখাটেকে আটক করে পুলিশ। অটকের পর থানা হাজতে ২৪ ঘণ্টার বেশি পার হলেও পুলিশ কোন মামলা রেকর্ড না করে শনিবার দুপুরে মোবাইল কোর্টের কথা বলে ওই স্কুলছাত্রীর বাবাকে সাক্ষীসহ থানায় আসতে বলা হয়। স্কুলছাত্রীর বাবা, ঘটনার সাক্ষী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে থানায় এলে শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ সাহিদুর রহমান জানান, এখন মোবাইল কোর্ট করার ম্যাজিস্ট্রেট নেই, সন্ধ্যায় আসেন। সন্ধ্যার পর ওসি মোবাইল ফোনে ওই স্কুলছাত্রীর বাবাকে তার মেয়ে ও সাক্ষীসহ থানায় আসতে বলেন। রাত হয়ে যাওয়ায় এবং থানা থেকে ওই স্কুলছাত্রীর বাড়ি কয়েক কিলোমিটার দূরে হওয়ায় স্কুলছাত্রীর বাবা থানায় আসতে অপারগতা প্রকাশ করে পরদিন আসবেন বলে জানান। রাত দশটার দিকে শ্রীনগর থানার এসআই শঙ্কর ফোর্সসহ ওই স্কুলছাত্রীর বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় এবং রাত সাড়ে দশটার দিকে বাবা-মাসহ ওই স্কুলছাত্রীকে ধরে থানায় নিয়ে আসে। ফোন পেয়ে কেন থানায় আসেনি এ অপরাধে ওসি সাহিদুর রহমান ওই স্কুলছাত্রীর বাবা ও স্থানীয় এক মুরুব্বির সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের ও বখাটেকে আটকের পর একদিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায় রাত ১১টার দিকে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যতন মার্মা এ ঘটনায় মোবাইল কোর্ট করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যতন মার্মা বলেন, ঘটনাটি জটিল এটা নিয়মিত মামলাই হবে। আটকের এতো সময় পরে মোবাইল কোর্ট করা যাবে না। এরপর ওসি রবিবার আসামির সঙ্গে স্কুলছাত্রীকেও কোর্টে পাঠানো হবে বলে তাদের বসিয়ে রাখেন। এ সময় স্কুলছাত্রী পরদিন তার পরীক্ষা আছে বলে কাকুতি-মিনতি করতে থাকে। এরপরও মন গলেনি ওসির। তিনি আইনের বাইরে যেতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। এ সময় থানায় ছুটে আসেন উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম। রাত দুইটার দিকে মামলার অপর আসামি তার খালাত ভাই বীরতারা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জনি শেখের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে এজাহার দেয়ার শর্তে ওই স্কুলছাত্রীকে তার পরিবারসহ ছাড়িয়ে নেন। রবিবার বেলা ১১টার দিকে বখাটেকে আটকের ৪৪ ঘণ্টা পর বাদীকে থানায় এনে জনি শেখ ও তার সহযোগীর নাম বাদ দিয়ে পুনরায় নতুন করে অভিযোগ লেখান। রবিবার দুপুর সাড়ে বারোটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শ্রীনগর থানায় কোন মামলা রেকর্ড হয়নি এবং আসামিকেও কোর্টে প্রেরণ করা হয়নি। তবে শ্রীনগর থানার ওসি সাহিদুর রহমান বিকেল ৪টার দিকে জানান, এ ব্যাপারে শনিবার রাতেই থানায় মামলা হয়েছে এবং আসামিকে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। তবে ছাত্রীর বাবাকে হয়রানি ও যুবলীগ নেতার তদবিরের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, এ কথা যে বলেছে সে মিথ্যে বলেছে। জনি শেখের নাম মামলার এজাহারে আছে কিনা বা কতজনকে ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে- এ প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, মামলার কপি দেখে বলা যাবে। এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। এ ব্যাপারে গতকাল রবিবার বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে কোর্ট ইন্সপেক্টর হারুণ-অর-রশীদ জানান, এ ধরনের কোন মামলা বা মামলার আসামি সবুজ নামে কাউকে আদালতে পাঠানো হয়নি। শুনেছি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় একজনকে আদালতে পাঠানো হচ্ছে, আসামিসহ গাড়ি রাস্তায় রয়েছে।
×