ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাল্টে দিন রেলকে

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৫ এপ্রিল ২০১৬

পাল্টে দিন রেলকে

বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রথমবারের মতো সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন লিংকে হফম্যান বুশ (এলএইচবি) ব্রডগেজ কোচ সংযুক্ত করতে যাচ্ছে। ভারত থেকে স্টেইনলেস স্টিলবডির আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং ওয়াইফাই সংযোগসম্পন্ন ১২০টি কোচের প্রথম চালানের ৪০টি ইতোমধ্যে দেশে এসে পৌঁছেছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে এ সম্পর্কিত চুক্তি হয় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের মধ্যে বাকি কোচগুলো দেয়ার কথা থাকলেও চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আনা যাবে বলে খবর আছে। এসব কোচ সংযোজিত ট্রেন ঘণ্টায় সর্বনিম্ন ১২০ কিলোমিটার থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে চলতে সক্ষম। এ সব কোচ অপেক্ষাকৃত সুপরিসর, আরামদায়ক, সর্বোপরি বেশি যাত্রী পরিবহন ক্ষমতাসম্পন্ন। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগে যেসব কোচ ব্যবহৃত হচ্ছেÑ সেগুলোর যাত্রী ধারণক্ষমতা ৯০; গতিও কম, ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থায় সড়ক ও নৌপথের গুরুত্ব স্বীকার করেও বলা যায় যে, এর কোনটাই রেল ব্যবস্থার সমতুল্য নয়। রেলের মাধ্যমে একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক যাত্রী এবং বিপুল পরিমাণ পণ্য অতি দ্রুত একস্থান থেকে অন্যস্থানে পৌঁছানো সম্ভব। আবার সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ীও বটে। তাই রেল যোগাযোগ খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিশ্বব্যাপী। প্রতিবেশী দেশ ভারতে রেল তো যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে খুবই জনপ্রিয় ও সুলভ মাধ্যম। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে অবস্থাটা ঠিক উল্টো। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলেও রেলের যে রমরমা ছিল তাও ধরে রাখা যায়নি স্বাধীন বাংলাদেশে। দিনে দিনে অযতœ-অবহেলায় যাত্রী সেবার মান তো কমেছেই; পণ্য পরিবহনেও রেলের অবদান ধরে রাখা যায়নি। অনেক স্থানে অব্যাহত লোকসানের কারণে রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। লাইনের পরিমাণও হয়েছে সঙ্কুচিত। হাল আমলেও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় আশাব্যঞ্জক উন্নতি হয়েছে এমন কথা বলা যাবে না। ট্রেন চলাচলে সময়ানুবর্তিতার বালাই পর্যন্ত নেই। বগি ও ইঞ্জিন বহুল ব্যবহারে জরাজীর্ণ, বিধ্বস্ত প্রায়। লাইট, পাখা, শৌচাগারের অবস্থা শোচনীয়। যাত্রী সেবার বালাই নেই। বগিগুলো গাদাগাদি করে যাত্রীভর্তি করে চলাচল করলেও রেলওয়ের নাকি কেবলই লোকসান হয়। লাইনগুলোর অবস্থা সবচেয়ে করুণ। জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ তো বটেই; অনেকস্থানেই সিøপার ও পাথর নেই লাইনের নিচে। প্রায়ই রেল দুর্ঘটনা, নাশকতাসহ চুরি-ডাকাতির খবরও আছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে রেল থেকে। সত্যি বলতে কি, অতীতে প্রায় কোন সরকারই রেলের আধুনিকায়নের দিকে আদৌ দৃষ্টি দেয়নি, বরং চরম অনীহা ও অবহেলাই দেখিয়েছে। তবে আশার কথা এই যে, বর্তমান সরকার রেল উন্নয়নে সবিশেষ গুরুত্ব ও মনোযোগ দিয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়কে পৃথক করা হয়েছে। জাতীয় বাজেট ঘোষণার সময় আলাদাভাবে রেল বাজেট পরিবেশিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের সংস্কার কাজও চলছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে ডাবল লাইন স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে এখনও আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। প্রকৃতই একটি অত্যাধুনিক রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। দেশ এখন বিদ্যুত উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সেক্ষেত্রে প্রথম উদ্যোগ হতে পারে বৈদ্যুতিক রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তন, পর্যায়ক্রমে হলেও। পুরনো জরাজীর্ণ লাইন ও স্টেশনগুলোর আদ্যোপান্ত সংস্কার, দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত জনবল নিয়োগ, সারাদেশে অব্যবহৃত ও বেদখলে থাকা রেলের জমি উদ্ধার। সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে এ সবই বাস্তবায়ন সম্ভব। প্রশ্ন হলো, রেল কী সেসব করতে আদৌ আগ্রহী ও যতœবান হবে?
×