ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে আস্থা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৫ এপ্রিল ২০১৬

মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে আস্থা বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগে অনেক অত্যাচার করত কলিগরা, গালি দিত, গায়ে হাত দিত, চড় থাপ্পড় দিত, এমনকি গলা ধরে ধাক্কাও দিত। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার পর থেকে সেসব আর নাই। বলছিলেন দক্ষিণ বাড্ডার একটি পোশাক কারখানা শ্রমিক গাইবান্ধার মেয়ে ডলি আক্তার। জানালেন, বছর খানেক হলো তারা কারখানা ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারছেন, আর এরপর থেকে তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বদলেছে মালিক ও কর্মকর্তাদের। তবে একেবারেই ভিন্ন পরিস্থিতি দেখা গেল ঢাকার পল্লবীতে। সেখানে একটি পোশাক কারখানার বাইরে কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, প্রথমে কথা বলতে রাজি হলেন না প্রায় কেউই। একজন এগিয়ে এসে জানালেন, তাদের কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই। সেজন্য কারখানার ভেতরে এখনও বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের। তারা বলেন, কাজ দিতে দেরি হলে কর্মকর্তারা নানারকম খারাপ আচরণ করে। খারাপ ভাষায় গালি দেয়। এগুলো সহ্য করতেই হয়, অনেকে বাড়ি গিয়ে কাঁদে, কেউ কেউ কাজে এ্যাবসেন্ট করে। তারপর একসময় চাকরি থেকে ছাঁটাই হয়ে যায়। বাংলাদেশে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার একটি বহুল আলোচিত ইস্যু। বেশির ভাগ সময় ট্রেড ইউনিয়ন করতে গিয়ে মালিকদের কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হতে হয় বলে অভিযোগ করে শ্রমিক সংগঠনগুলো। কিন্তু তিন বছর আগে রানা প্লাজা ধসের পর নতুন করে এই ইস্যুটি আলোচনায় আসে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ট্রেড ইউনিয়নের বাধ্যবাধকতা রেখে সরকার শ্রমনীতি সংশোধন করে। সেই সাথে ইপিজেডেও দেয়া হয় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার। কিন্তু তাতে শ্রমিকদের দর কষাকষির সুযোগ কতটা বেড়েছে? শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলছেন, ধীরে হলেও এক্ষেত্রে অগ্রগতি হচ্ছে। রানা প্লাজা ধসের পর কারখানার কর্ম পরিবেশ নিরাপদ করার জন্য সরকারকেও আগের চেয়ে সচেতন হতে হয়েছে। তিনি বলেন, রানা প্লাজার ঘটনা ঘটার আগে এখানে পোশাক শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন ছিল মাত্র ১২৫টি। ওই ঘটনার পর আমরা ট্রেড ইউনিয়ন আইনটি সংস্কার করেছি। এখন ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা ৪৮১টি। আমরা শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন ও তাদের অধিকারসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। বাংলাদেশে পাঁচ হাজারের মতো তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠিত হলেও, বাস্তবে সেগুলো খুব একটা কার্যকর নয়। শ্রমিক নেতা তাসলিমা আক্তার বলছেন, ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠিত হলেও, বাস্তবে সেগুলো খুব একটা কার্যকর নয়। এছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাইলে অনেক সময়ই শ্রমিকদের নির্যাতনের শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ করছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার। তিনি বলেন, নামে অনেক ট্রেড ইউনিয়ন হয়েছে, তারা দর কষাকষিও হয়ত করছে কিছু ক্ষেত্রে। কিন্তু মালিকদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসেনি। এখনও ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাইলে অনেক সময়ই শ্রমিকদের এক ধরনের চাপের মধ্যে থাকতে হয়। বহু ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হতেও আমরা দেখেছি। তবে শ্রমিকদের দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে এখন সরকার ও মালিকপক্ষের সহযোগিতার দরকার বলে মনে করেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, যেহেতু চাপের মুখে ট্রেড ইউনিয়ন করার বিষয়টি মালিকেরা মেনে নিয়েছে, সেহেতু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়ছে, অনেক ফাঁক ফোকরও দেখা যাচ্ছে। ফলে এখন শ্রমিকদের দর কষাকষির সামর্থ্য বাড়াতে হলে সরকারের ও আমরা যারা শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করি আমাদের সকলের সহযোগিতা করতে হবে। জনাব আহমেদ বলছেন, কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন বাড়ানো এবং সেগুলোকে কার্যকর করতে সরকারকেই মূল ভূমিকাটি পালন করতে হবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলছেন, সে কাজটি তারা ইতোমধ্যেই শুরু করেছেন। গত দুই তিন বছরে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধির বিষয়টি অনেক অগ্রসর হয়েছে। সামনে আরও হবে, এজন্য আমরা নিয়মিত কাজ করছি। তিনি আরও জানিয়েছেন, এ লক্ষ্যে মালিক ও কারখানার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেবার ব্যবস্থা করেছে শ্রম অধিদফতর।
×