ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

২৫ এপ্রিল চট্টগ্রামে ফোরাম কর্মকর্তা সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হবে সালাউদ্দিনের সম্মিলিত পরিষদ ;###;২৭ এপ্রিল ঢাকায় ক্লাবগুলোর সঙ্গে বসবেন তারা

ভোটারদের দ্বারে দ্বারে সালাউদ্দিন

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৪ এপ্রিল ২০১৬

ভোটারদের দ্বারে দ্বারে সালাউদ্দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টঙ্গী থেকে মতিঝিল। তুরাগ থেকে বুড়িগঙ্গা। বহুল আলোচিত বাফুফের নির্বাচন উপলক্ষে ভোট পাবার জন্য এসব এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। বাংলাদেশের ফুটবলের এই জীবন্ত কিংবদন্তি গত আট বছর ধরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে আছেন। আর খুব বেশিদিন বাকি নেই বহুল আলোচিত বাফুফে নির্বাচনের। ফলে শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নিয়ে তুমুল ব্যস্ততায় প্রতিটি প্রহর পার করতে হচ্ছে সালাউদ্দিনকে। পাশাপাশি তার প্যানেলে থাকা প্রার্থীদের। দেশের ফুটবলের উন্নয়নে তিনি কতটা সফল বা ব্যর্থÑ তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তবে একটা ব্যাপারে সবাইকে একমত হতেই হবে, সেটা হলো গত আট বছরে তিনি কিন্তু ফুটবলকে মাঠে রেখেছেন। নিয়মিত প্রিমিয়ার লীগ, চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ, পাইনিয়ার লীগ, প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় বিভাগ লীগ, স্কুল ফুটবল, ঢাকার পেশাদার লীগ ক্লাবসমূহের অ-১৬ ও ১৬ ফুটবল ... এগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফুটবলারদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পেয়ে ৬০ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। জেলা ফুটবল সব জেলায় না হলেও ৪৫ জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনকে (ডিএফএ) আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে, যা এর আগে কোন কমিটি দেয়নি। শুধু তাই নয়, ফুটবলের দর্শক খরা কাটিয়ে ‘সুপার কাপ’ প্রবর্তন করেছেন সালাউদ্দিন। ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ টুর্নামেন্ট’ নামে নতুন একটি টুর্নামেন্ট চালু করেছেন। বিলুপ্তপ্রায় ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’ আবারও চালু করেছেন। বিশ^খ্যাত লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে ঢাকায় প্রীতি ম্যাচ খেলাতে নিয়ে এসেছেন। অনুর্ধ-১৩, ১৪, সাফ অ-১৬, ডানোন কাপ, সুপার মখ কাপে বাংলাদেশ সফলতা অর্জন করেছে। কমলাপুর স্টেডিয়ামে ও বাফুফে ভবন সংলগ্ন মাঠে টার্ফ স্থাপিত হয়েছে। সিলেটে ফুটবল একাডেমি চালু করেছেন। এমনি আরও অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন সালাউদ্দিন, যা এই স্বল্প পরিসরে সবিস্তারে লেখা সম্ভব নয়। ইতোমধ্যেই সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী, যিনি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থী। ফলে অনেকটাই স্বস্তিতে আছেন সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থীরা। এ ছাড়া বাস্তবতা হচ্ছে আ জ ম নাছির সংবাদ সন্মেলন করে সালাউদ্দিনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করার পর অনেকটাই ব্যাকগিয়ারে চলে গেছে ‘বাঁচাও ফুটবল পরিষদ’ প্রার্থীরা। শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে সম্মিলিত পরিষদ। ওই দিনই ঢাকার একাধিক ক্লাবে পুরো প্যানেল নিয়ে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে গিয়েছেন সালাউদ্দিন। শনিবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। শুধু তাই নয়, ১৩৪ ডেলিগেটদের সঙ্গে ফোনের মাধ্যমেও যোগাযোগ রাখছেন সালাউদ্দিন। আগামী ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম যাচ্ছেন সালাউদ্দিন নির্বাচনী প্রচারণায়। তারপর আগামী ২৭ এপ্রিল ঢাকায় সব ক্লাবগুলোকে (যেসব ক্লাবে ভোটার আছে) নিয়ে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে সালাউদ্দিনের। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে একটি প্রবাদ খুবই চালু, ‘ফোরাম যেদিকে, পাল্লা ভারি সেদিকে।’ বিগত নির্বাচনগুলোতেও সেটাই দেখা গেছে। বাফুফের এবারের নির্বাচনে মোট ভোটের সংখ্যা ১৩৪। এর মধ্যে ফোরামের ভোটই ৬৭। তার মানে মোট ভোটারের অর্ধেক ভোটারই ফোরামের। আগেই অনুমেয় ছিল, বাফুফের নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই ডালপালা গজাবে গুজবের। এই নির্বাচনেও তার কোন ব্যত্যয় হয়নি। সালাউদ্দিনকে নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক নেতিবাচক গুজবই রটানো হয়েছে। কিন্তু সব গুজব বা প্রপাগা-াই মিথ্যে বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। আর এটা মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন করেছেন ফোরাম প্রধান আ জ ম নাছির। তিনি বলেছেন, ‘আমার সংগঠনে সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু জরুরী সভায় আমাদের সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন কাজী সালাউদ্দিনের প্যানেলকে সমর্থন দেয়ার ব্যাপারে। আমরা জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ থেকে ৭ প্রার্থী দিয়েছি সালাউদ্দিনের প্যানেলে। তাই এখনও এ প্যানেলকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। অন্য কোন প্যানেলের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। যে কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে তা সত্য নয়। নির্বাচন হবে।’ উল্লেখ্য, এর আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সভাপতি ও চট্টগ্রাম আবাহনীর ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান তরফদার মোঃ রুহুল আমিনকে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গঠিত হয় বাফুফে নির্বাচনে কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি। এ থেকেই পরিষ্কার অনুমান করা যায়, সালাউদ্দিন এবং তার প্যানেলের বর্তমান অবস্থান কেমন। সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে কারোর কোন সমঝোতা হয়নি, সমঝোতার কোন প্রশ্নই আসে না, অবকাশও নেই। আগামী ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে সভাপতি পদে ৩ জন, ৪টি সহ-সভাপতি পদের জন্য ১০ জন ও ১৫টি সদস্য পদের বিপরীতে মোট ৩৩ জন নির্বাচন করবেন। ফুটবলামোদীরা মনে করছেন নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সালাউদ্দিনের বিজয় কেউই ঠেকাতে পারবে না। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত কি হয়।
×