ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোদের দহন জ্বালা উপেক্ষা করে আনন্দের ভোট

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৪ এপ্রিল ২০১৬

রোদের দহন জ্বালা উপেক্ষা করে আনন্দের ভোট

সমুদ্র হক ॥ দিনকয়েক আগেই রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের পর ভোটকেন্দ্রগুলো নিয়ে শঙ্কা ছিল, না জানি কি হয়! না তেমন কিছু হয়নি। মাঝে মাঝে দুই পক্ষের সমর্থকরা অযথা চিৎকার করে সাধারণের মধ্যে প্যানিক ছড়াবার চেষ্টা করে। দেখা গেল সচেতন ভোটাররা কোন চিৎকারে কান না দিয়ে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে। ইউনিয়নের তেজপাড়া প্রাথমিক স্কুল ভোট কেন্দ্রে দেখা গেল বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে ৪০ শতাংশ ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোটারদের কয়েকজন আব্দুস সাত্তার আমিনুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম বললেন, বৈশাখের এই সময়টায় তীব্র রোদে লোকজন ঘর থেকে সকালে বের হয়ে ভোট কেন্দ্রে এসেছে। বিকেলের দিকে যখন কিছুটা রোদ কমবে তখন ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে। একই কথা বললেন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার। বগুড়া শহর থেকে গাবতলী এলাকায় যাওয়ার পথে দৃষ্টিতে এলো নারুয়ামালা হাট এলাকায় (যা এখন ছোট মার্কেটে পরিণত) বেশ জটলা। মনে হবে কিছুক্ষণ আগে কিছু একটা ঘটেছে। কাছে গিয়ে দেখা গেল মোটেও তা নয়। এলাকার কয়েক তরুণ বাজি ধরে বিতর্ক শুরু করেছে কে হবেন ওই নারুয়ামালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তখন বেলা প্রায় ১১টা। বাজারের দোকানিরা চিৎকার করে বলছে খালি মুখে বিতর্ক হবে না। আগে মিষ্টিমুখ করাও। তাদের কথা প্রমাণ দেয় কতটা আনন্দের মধ্যে ওই এলাকার নির্বাচন হচ্ছে। এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থীসহ চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪ জন। প্রথমারছেও প্রাথমিক স্কুল ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনরত আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ আব্দুল গোফ্ফার বললেন ‘দেখেন তো কি সুন্দর ভোট হচ্ছে।’ এই বিষয়েই অন্য একটি কেন্দ্রে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলে রাব্বি ম-ল বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন ‘অনেকের ভোট আগেই দেয়া হয়েছে। এ্যার নাম ভোট!’ সোনারায় ইউনিয়নের লস্করিপাড়া সরকারী প্রাথমিক স্কুল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। তখন বেলা প্রায় সাড়ে বারোটা। সূর্য মধ্যগগনে। তাপে অস্থির মানুষ। এত রোদের মধ্যেও নারী ভোটারদের সারিবদ্ধ দেখে পুলিং অফিসাররা দ্রুত ভোটগ্রহণের চেষ্টা করছেন। আনসার সদস্য আকবর হোসেনকে দেখা গেল রোদে অপেক্ষমাণদের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছেন কাউকে আপা বয়স্কদের খালা সম্বোধন করে। প্রিসাইডিং অফিসার জানালেন এই কেন্দ্রে ২ হাজার ১শ’ ভোটার। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে প্রায় এক হাজার ভোট প্রদান করা হয়েছে। বললেন, তীব্র দাবদাহের কারণে ভোটাররা আসতে পারছেন না। বিকেলের দিকে চাপ বাড়বে। মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে জানান, ষাট বছরের বৃদ্ধ পারুল বেগম ভোট দিতে পেরে বেজায় খুশি। লৌহজং উপজেলার ক্ষেতেরপাড়া গ্রামের এই বৃদ্ধা বলেন, ভোটে লাভ-লোকসান বুঝি না, তবে আমার ভোটের যে দাম আছে, এইটা বুঝি। কত প্রার্থী আর তাগো লোকজন ভোটের জইন্য আইছে, এইতে বুঝছি ভোটের কত কদর। তয় হগলেরে তো আর দিতে পারি নাই। যারে আমার ভাল মনে হইছে তারেই ভোট দিলাম। উপজেলাটির খিদিরপাড়া ইউনিয়নের খলাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট শেষে সকাল পৌনে ৯টায় কথা হয় এই বৃদ্ধার সঙ্গে। তখনই এই কেন্দ্রের নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে আছে নানা বয়সের ভোটার। বকুল নেছা (৫৫), মর্জিনা বেগম (৫০) ও হেনা পারভীনসহ (৬৫) অনেক বৃদ্ধা লাইনে দাঁড়িয়ে। এর মাঝে দাঁড়িয়ে নতুন ভোটার বিলকিস আক্তার (১৮)। ভোট দিতে এসে তার বিশেষ উচ্ছ্বাসের ছাপ চোখেমুখে। পুরুষের বুথে তখন লাইন নেই। ভোট দিতে এসেছেন খলাপাড়া গ্রামের দুই ভাই আওলাদ হোসেন ও গোলাম সারোয়ার। তারা থাকেন ঢাকার বসুন্ধরায়। সেখানেই ব্যবসা করেন। তবে ভোট দেয়ার জন্যই আসেন তারা। তাহমিন হক ববী নীলফামারী থেকে জানান, বৈশাখে নেই ঝড়, ছিল না বৃষ্টির ছিটেফোঁটা। চৈত্রের মতো খরতাপের বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে দিয়ে নীলফামারীর ১২টি ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তৃতীয় দফার ইউপি নির্বাচনে শনিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়। এখানে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নারী ভোটারদের আর দুপুরের পর পুরুষ ভোটারদের আধিক্য ছিল। প্রচ- খরতাপ উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলে। এ সময় সকালে নারী এবং দুপুরের পর পুরুষদের দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে। বিভিন্নজনের হুমকিধমকি উপেক্ষা করে হুমকিদাতাদের মুখে চুনকালি মেখে দিয়ে বীরদর্পে সকল ভোটার ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট প্রদান করে। যারা ভোট কেন্দ্র দখলের পাঁয়তারা, টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছিল তাদের সমুচিত জবাব দিয়েছেন ভোটাররা।
×