ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্ন আদালতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৪ এপ্রিল ২০১৬

নিম্ন আদালতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

আরাফাত মুন্না ॥ নিম্ন আদালতের বিচারক ও সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরও শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে ‘কঠোর’ হচ্ছে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। এরই আলোকে নিম্ন আদালতের সহায়ক কর্মচারীদের শূন্যপদের সংখ্যা চেয়ে সংশ্লিষ্ট সকল জেলা জজদের চিঠি দেয়া হয়েছে। এসব শূন্যপদ পূরণে এখন থেকে জনপ্রশাসন বা আইন মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি বা ছাড়পত্র নেয়ারও প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া ১৪ বিচারককে আইন মন্ত্রণালয় থেকে রাজধানীতে একটি ‘অভিজ্ঞতা বিনিময় সভা’র অংশগ্রহণের অনুমোদন দেয়ায় সেটি বাতিল করে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যাও চেয়েছে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্টার সৈয়দ দিলজার হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন আদালতে অনুমোদিত সহায়ক কর্মচারীর অনেক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এতে মামলা নিষ্পত্তির হার কমার পাশাপাশি বিচার প্রশাসনের সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনা বিঘিœত হচ্ছে। এ কারণে বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সম্প্রতি সুপ্রীমকোর্ট থেকে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যা বিচার প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, প্রায় দেখা যায়, ছুটি-কর্মস্থল ত্যাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিচারকদের অনেকে মন্ত্রণালয়ে অবহিত করে সেটি ভোগ করতেও শুরু করেন। এটা যে বিধিসম্মত নয়, সেটি আপীল বিভাগের রায় উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিচারকদের স্মরণ করে দেয়া হয়েছে। আশা করা যায়, এতে বিচার প্রশাসনে কাজে গতিশীলতা আসবে। আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা ॥ অনুমতি ছাড়া ১৪ বিচারককে নিয়ে ‘অভিজ্ঞতা বিনিময় সভা’র আয়োজন করায় আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। গত ৭ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে এই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বিচারকদের ওই অনুষ্ঠানে যোগদানের অনুমতিও বাতিল করা হয়েছে। সূত্র জানায়, গত ৯ এপ্রিল পলিসি এ্যাডভোকেসি এ্যান্ড লেজিসলেটিভ রিফর্ম ফর চিলড্রেন প্রজেক্ট ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর মেহেরবা প্লাজায় শিশু আইন ২০১৩-এর ওপর এই অভিজ্ঞতা বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সভায় ১৪ জন বিচারককে অংশগ্রহণের অনুমোদন দিয়েছিল আইন মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নজরে আসার পর আইন সচিবের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয় সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। চিঠিতে বলা হয়, ‘সুপ্রীমকোর্টের পরামর্শ গ্রহণ ব্যতিরেকে সর্বক্ষণিক বিচারকাজে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কোন মতবিনিময় সভা, সেমিনার বা অন্য কোন প্রশাসনিক অনুষ্ঠানে কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনয়ন প্রদান বা মনোনীত কর্মকর্তাদের অনুরূপ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।’ এর পর ওই অনুষ্ঠান বাতিল করেন আয়োজকরা। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ॥ নিম্ন আদালতের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সহায়ক কর্মচারীর শূন্যপদ পূরণে গত ২০ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। এতে গত ১৫ ডিসেম্বর আপীল বিভাগের দেয়া এক রায় উল্লেখ করে বলা হয়, নিম্ন আদালতসমূহে সহায়ক কর্মচারীর শূন্যপদ পূরণের জন্য এখন থেকে কোন মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি বা ছাড়পত্রের প্রয়োজন হবে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা জজ বা দায়িত্বপ্রাপ্তদের শূন্য পদের সংখ্যা উল্লেখ করে তা পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার বনাম মোঃ আবুল কালাম আজাদ এ্যান্ড আদার্স শীর্ষক মামলায় (নম্ব^র : ২৫৩২/২০১৪) গত ১৫ ডিসেম্বর আপীল বিভাগ রায় দেন। সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ ওই রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে বলা হয়, নিম্ন আদালতসমূহ আইন মন্ত্রণালয় অথবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কোন বিভাগ নয়। এটি সুপ্রীমকোর্টের অধীনস্থ। সংবিধানের ১০৯ ও ১১১ অনুচ্ছেদ এ বিষয়টি স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে। রায়ে আরও বলা হয়, বিচার বিভাগ একটি স্বতন্ত্র বিভাগ। এক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয় থেকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতকে কোন ধরনের আদেশ আইনগতভাবে দিতে পারেনÑ এমন হতে পারে না। রায়ে আরও বলা হয়, সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শূন্য পদের বিপরীতে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (জনপ্রশাসন) পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু দেখা যায় যে, ক্যাডার সার্ভিসভুক্ত পদ পূরণের জন্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয় না। প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগের বেসামরিক কর্মচারী ব্যতীত সকল পদ, করণিক কর্মচারীর পদ ব্যতীত বিডিআর, আনসার এবং পুলিশ বাহিনীর সকল পদ এবং অন্যান্য কিছু সংস্থার ক্ষেত্রেও মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয় না। অথচ নিম্ন আদালতে জনবল সঙ্কটের কারণে বিচার প্রার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় সমন জারির অভাবে মামলাও প্রস্তুত হয় না। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা বিধি অনুসারে নিম্ন আদালতের ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণে গিয়েও এ ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করেছেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
×