ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাজ্য নতিস্বীকার করবে না লিভ ক্যাম্পেইনের জবাব

বাণিজ্য সম্পর্ক ॥ ব্রিটেনকে হুঁশিয়ারি ওবামার

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২৪ এপ্রিল ২০১৬

বাণিজ্য সম্পর্ক ॥ ব্রিটেনকে হুঁশিয়ারি ওবামার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যদি ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার পক্ষে ভোট দেয়, তা হলে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বর্তমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার প্রত্যাশা করতে পারবে না। তিনি শুক্রবার লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইইউতে থাকার পক্ষে ভোট দিতে ব্রিটিশদের প্রতি খোলাখুলি আহ্বান জানান। অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অস্বাভাবিকভাবেই সরাসরি হস্তক্ষেপ করে ওবামা বলেন, ওই ব্লকে ব্রিটেনের সদস্যপদ ব্রিটিশদের প্রভাবকে সীমিত করে না বরং প্রসারিতই করে। ২৩ জুন অনুষ্ঠেয় গণভোটে ইইউ ত্যাগের পক্ষে ভোট দিতে যারা প্রচার চালাচ্ছেন, তারা ওবামার মন্তব্যের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। টোরি পার্লামেন্টে সদস্য ডোমিনিক রাব ওবামাকে অকৃতকার্য প্রেসিডেন্ট বলে অভিহিত করেন। খবর বিবিসি, টেলিগ্রাফ ও নিউইয়র্ক টাইমসের। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে সঙ্গে নিয়ে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে ওবামা ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগের পক্ষে ভোট দেয়ার সম্ভাব্য পরিণতিও সরাসরি তুলে ধরেন। প্রেসিডেন্ট বলেন, ইইউ ছাড়লে ব্রিটেনকে ‘পিছনের সারিতে চলে যেতে হবে এবং সে আমেরিকার সঙ্গে শীঘ্রই কোন বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবে না। ব্রিটেন ইইউর পক্ষে ভোট দিলে দেশটির অর্থনীতির ক্ষতি হবে না বলে ইইউ ত্যাগের পক্ষের লোকজনের মূল দাবির জবাব দিতে ওবামা ওই সংবাদ সম্মেলনকে কাজে লাগান। যদি যুক্তরাজ্য ইইউ ত্যাগ করে তবে যুক্তরাষ্ট্র কিছু ব্যবস্থা নেবে এমন ধারণা দেয়ার দায়ে ওবামা ইইউ ত্যাগের পক্ষপাতী এমন মন্ত্রীদের সমালোচনা করেন। ওবামা বলেন, আমি ধরে নিয়েছি, যুক্তরাষ্ট্র কি করতে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি তা আপনারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে জানতে চাইতে পারেন। ওবামা বলেন, ওই বিষয়ে এ কথা বলা উচিত যে, কোন এক সময়ে কোন যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি হতে পারে, কিন্তু তা নিকটবর্তী কোন সময়ে হতে যাচ্ছে না, কারণ আমাদের লক্ষ্য হলো কোন বড় ব্লক-ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কোন বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে আলোচনা করা। যুক্তরাজ্য পিছনের সারিতে স্থান পেতে যাচ্ছে। ইইউ ত্যাগের পক্ষের প্রচারশিবির লিভ ক্যাম্পেইন প্রেসিডেন্ট ওবামার হস্তক্ষেপে কড়া ভাষায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেছে। সরকারী মন্ত্রী ডোমিনিক রাব বলেন, ব্রিটিশ জনগণ কারও হুমকির কাছে নতি স্বীকার করবে বলে আমার মনে হয় না, পুনর্নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য ও বিদায় নিতে চলা কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে তো নয়ই। ইউগভ পরিচালিত এক জরিপে ব্রিটিশ ভোটাররা ওবামার হস্তক্ষেপ অনুমোদন করেননি বলে দেখা যায়। উত্তরদাতাদের শতকরা প্রায় ৫৩ ভাগ বলেন, ইইউ গণভোটে কোন পক্ষে ভোট দেয়া উচিত, তা বলা ওবামার জন্য ‘অশোভন’ই হয়েছে, আর শতকরা ৩৫ ভাগ তা ‘উপযুক্ত’ কাজ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। রাব বিবিসি নিউজকে বলেন, বাস্তবতা হলো যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে এবং ইইউর সঙ্গে কোন বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে সমর্থ না হওয়াই বারাক ওবামার বাণিজ্যবিষয়ক সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। তিনি বলেন, ওবামার কথাবার্তা শেষ হওয়ার পর যারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করবেন, তারা তার মন্তব্য নিয়ে কিছুটা হতাশ হবেন বলেই আমার মনে হয়। কারণ তার মন্তব্যে মার্কিন বাণিজ্য নীতি প্রতিফলিত হয়নি এবং ভবিষ্যত মার্কিন বাণিজ্য নীতিও প্রতিফলিত হবে না বলে আমি নিশ্চিত। আপনারা এখানে এক ভবিষ্যতে নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য প্রেসিডেন্টই পেয়েছিলেন, যিনি এক পুরনো ব্রিটিশ বন্ধুকে রাজনৈতিক আনুকূল্য দিচ্ছিলেন। ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং বিশ্বে এর অবস্থান পঞ্চম। ইইউ থেকে ব্রিটেনের বিদায় নিলে যে অর্থনৈতিক ঝুঁকি দেখ দেবে, তা ব্রিটিশ ভোটারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অভিভাসন এবং ব্রিটেনে বাস ও কাজ করতে চায় এমন ইইউ নাগরিকদের সংখ্যা সীমিত রাখতে দেশটির অক্ষমতাও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। অভিবাসীরা সুযোগ-সুবিধা হিসেবে যা পায় তারা কর হিসেবে ব্রিটিশ বাজেটে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় তার চেয়ে বেশি অবদান রাখে বলে জরিপে দেখা গেলেও অভিবাসীরা ব্রিটিশদের কাজ নিয়ে যাচ্ছে বলেও উদ্বেগ রয়েছে। এসব যুক্তি বিশ্বে ব্রিটেনের অবস্থান বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক নিয়ে দেখানো যুক্তির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতে পারে।
×