ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য এক বছরে তিতাসের ১৬ জন বরখাস্ত

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৪ এপ্রিল ২০১৬

দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য এক বছরে তিতাসের ১৬ জন বরখাস্ত

নাজনীন আখতার ॥ অবৈধ গ্যাস সংযোগ, মিটার টেম্পারিংসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে গত এক বছরে তিতাস গ্যাসের ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনিয়ম ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়াসহ তদারকির ফলে সিস্টেম লস শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। তিতাস গ্যাসের শত শত কোটি টাকার সিস্টেম লস কমিয়ে আনতে অসাধু ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এদিকে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে অবৈধ গ্যাস সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ করতে খোদ মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চেয়ে সংসদীয় কমিটির সহযোগিতা কামনা করেছে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, তিতাস গ্যাস কোম্পানি সম্পর্কে পত্র-পত্রিকায় নানান কিছু প্রকাশ হয়। মিটার রিডারদের যোগসাজশ, অর্থ লোপাট ও দুর্বৃত্তায়নের ফলে সিস্টেম লস হচ্ছে। কিছুদিন আগেও গাজীপুর ও কাশিমপুরের বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনে ওই সব অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকার বিনিময়ে বিল কম-বেশি করেছে। এটা দেশের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং কেন সিস্টেম লস হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চান। কমিটির আরেক সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে পাঁচ বছরে তিতাস গ্যাসের প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা সিস্টেম লস হয়। আগে বিদ্যুতের অনেক সিস্টেম লস ছিল। পর্যায়ক্রমে সেটি কমে গেছে। তিতাসের সিস্টেম লসও যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনার জন্য দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভালুকা, চন্দ্রা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বহু বাড়িতে অবৈধ সংযোগ দিয়েছে। তবে এ কাজের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে শুধু একজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকি তিনজন ম্যানেজারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, বাড়ি বাড়ি অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার কারণে মিল-কারখানাগুলো গ্যাস সংযোগ পাচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিষয়টি কঠোর নজরদারিতে নিলে এ অনিয়ম অনেকাংশে দূর হতে পারে। তবে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্ত করাসহ বেশকিছু পদক্ষেপের কারণে সিস্টেম লস কমে এসেছে দাবি করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে, বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপের জন্য ২০১৫ সালে ১২ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দু’জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই সময় ১১ জন কর্মচারীকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। চলতি বছর আরও তিনজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত মাসে ৫ শতাংশ সিস্টেম লস হয়েছে। এটাকে গ্রহণযোগ্য মাত্রার বলে দাবি করেছে তিতাস গ্যাস। তদারকির ফলে সিস্টেম লস ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে তা শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে তিতাস গ্যাস। মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সজাগ ও স্বচ্ছ হলে বিদ্যমান অনিয়ম ও দুর্নীতি অনেকাংশে দূর করা সম্ভব। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করার পরামর্শ দেন তিনি। সে সময় বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী বলেন, চুরি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসচেতনতা ও অসহযোগিতার ফলে সিস্টেম লস হচ্ছে। বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়ায় সিস্টেম লস ইতোমধ্যে অনেক কমে গেছে। কখনও কখনও সমাজের প্রভাবশালী লোকজন অবৈধ লাইন টেনে গ্যাসের সংযোগ নিয়ে থাকে। আর ওই লাইন বিচ্ছিন্ন করতে গেলে অনেক সময় বাধার সম্মুখীন হতে হয়, যা কোম্পানির পক্ষে সুরাহা করা দুঃসাধ্য। এটা পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দরকার। এ বিষয়ে তিনি সংসদীয় কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি আরও জানান, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ এবং চুরি বন্ধ করার জন্য উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এর সুফল পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি অনেক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিপুল পরিমাণ বকেয়া আদায় করেছে। তিনি আরও জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১০৮টি কূপ খনন করা হচ্ছে। সেসব এলাকায় গ্যাস পাওয়া গেলে আশপাশের এলাকায় গ্যাস সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে। এদিকে তিতাস গ্যাস কোম্পানি জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠান ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নরসিংদী, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করছে। বর্তমানে ১২ হাজার ৮৮৯ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত গ্রাহকসংখ্যা ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৩১৭। বাল্ক গ্রাহকদের মধ্যে তিনটি সার কারখানা, সাতটি সরকারী এবং ২৮টি বেসরকারী বিদ্যুতকেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত।
×