ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মৌয়ালরা ফিরছে শূন্য হাতে

সুন্দরবনে ফুল ফোটেনি ॥ মৌমাছি লোকালয়ে

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৪ এপ্রিল ২০১৬

সুন্দরবনে ফুল ফোটেনি ॥ মৌমাছি লোকালয়ে

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ মধু ভা-ার হিসেবেখ্যাত সুন্দরবন এবার মধু শূন্য হয়ে পড়েছে! প্রতিবছর বনের যেসব এলাকা থেকে মধু আহরণ করা হয়, এবার সেসব জায়গায় মৌচাক-মৌমাছি নেই বললেই চলে। মাইলকে মাইল বন ঘেঁটে একফোঁটা মধুও সংগ্রহ করতে পারেনি মৌয়ালরা। মধু না পেয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে হচ্ছে তাদের। মহাজনের কাছ থেকে নেয়া দাদনের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন এই ভেবে দিশেহারা মৌয়ালরা, হতাশ ব্যবসায়ীরাও। একেবারেই মধুশূন্য বনের এমন চিত্র আর কোনদিন দেখেননি এ অঞ্চলের মৌয়াল ও সাধারণ মানুষ। গোটা পূর্ব সুন্দরবনেরই (শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ) এই একই অবস্থা বলে জানিয়েছে বনবিভাগ। ফলে, এ বছর এ অঞ্চলে মধু সঙ্কট চরম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুন্দরবনে মৌমাছি বা মৌচাকের দেখা না মিললেও স্থানীয় গ্রামগুলোতে মৌমাছির বেশ সমাগম ঘটেছে এবার। মৌচাকও হয়েছে অসংখ্য। এমন চিত্র অন্য কোন বছর দেখা যায়নি। বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও বাড়ির গাছগাছালিতে বাসা বেঁধেছে মৌমাছি। রায়েন্দা ইউনিয়নের খাদা গ্রামের মকবুল তালুকদারের বাড়ির মসজিদের গেটে বিশাল দুটি চাক দেখা গেছে। খোন্তাকাটা ইউনিয়নের আল-জামিয়া কাসিমুল উলুম কওমী মাদ্রাসা ও মসজিদের বিভিন্ন স্থানে বিশাল ৬টি চাক রয়েছে। একই ইউনিয়নের পূর্ব খোন্তাকাটা গ্রামের মোখলেছের বাড়ির গাছে দুটি। বনসংলগ্ন খুড়িয়াখালী গ্রামের হেমায়েত মোল্লার বাড়িতে ১টি, শাহ আলম গাজীর বাড়িতে ২টি, সলেমান হাওলাদারের বাড়িতে ২টি, জাফর মুন্সীর বাড়িতে ১টিসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য মৌচাকের খবর জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বিভিন্ন ফসল ও দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন গাছে ফোটা বৈশাখী ফুলের মধুর আশায় মৌমাছিরা লোকালয়ে ছুটে আসছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বনবিভাগ ও মৌয়ালদের কাছ থেকে জানা যায়, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে একদিকে যেমন বনের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি সময় মতো গাছে ফুলও আসছে না। এর ফলে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়ায় মৌমাছি সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া সুন্দরবনের অভ্যন্তর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জাহাজ চলাচল করছে। ওইসব জাহাজের হাইড্রোলিক হর্নের বিকট শব্দে বনের প্রাণিকূল সব সময় আতঙ্কে থাকে। এসব কারণেও ধীরে ধীরে মৌমাছি বন ছাড়ছে বলে বনবিভাগ দাবি করছে।
×