ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে কবরস্থানে ১৬৬ বছরে ৬০ হাজার লাশ দাফন

লাশ দাফনে জমি সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২৪ এপ্রিল ২০১৬

লাশ দাফনে জমি সঙ্কট

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ১৬৬ বছরের পুরনো নগরীর মুসলিম গোরস্তানে লাশ দাফনে জমির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সাড়ে আট একর জমির গোরস্তানে ৬০ হাজার লাশ দাফন করা হয়েছে। সময়ের বিবর্তনে ২০ টাকা মূল্যের সাড়ে তিন হাত কবরের জায়গার দাম এখন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ টাকায় অনেকেই কবরের জমি কিনে লাশ দাফনের ক্ষমতা রাখে না। আবার অনেকে টাকা হলেও পছন্দের জমি পায় না। গোরস্তানের আশপাশে বেশি দামে জমি কিনে এখন লাশ দাফন করা হচ্ছে। সূত্রমতে, ৪৫ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল নগরীতে এখন ৬ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। এরম ধ্যে খ্রীস্টান ধর্মের রয়েছে ৮ থেকে ১০ হাজার। তাদের জন্য কবরস্থান রয়েছে একটি। হিন্দু সম্প্রদায়ের লক্ষাধিক মানুষের বসবাস; তাদের জন্য রয়েছে একটি শ্মশানঘাট। বাকি ৫ লাখ মুসলমানের দাফনের জন্য একমাত্র ভরসা মুসলিম গোরস্তান। নগরীর গোরস্তান রোড এলাকায় ১৮৫০ সালে ১২ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠে মুসলিম কমপ্লেক্স। সেখানে রয়েছে মাদ্রাসা, গোরস্তান, মসজিদ, আঞ্জুমান অফিস ও কবরস্থান। ওই সময় শুধু তিন একর জমির ওপর সীমাবদ্ধ ছিল মুসলিম কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর। বাকি জমিতে মসজিদ, মাদ্রাসা আর পুকুর। কবরস্থানের দেখভালের দায়িত্ব ছিল মিউনিসিপ্যালিটির। তখন সেখানে লাশ দাফন করতে কোন টাকা লাগত না। ১৮৯৩ সালে আঞ্জুমান-ই-হেমায়েত ইসলামের কাছে কবরস্থানটি হস্তান্তর করে মিউনিসিপ্যালিটি। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত টাকা ছাড়াই সেখানে লাশ দাফন করা হয়। ১৯৬৫ সালে কবরের জন্য নির্দিষ্ট সাড়ে তিন হাত জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২০ টাকা। শর্ত মোতাবেক ওই টাকার বিনিময়ে যারা লাশ দাফন করত শুধু তাদের কবরের ওপর অন্যকোন কবর দেয়া হতো না। যারা টাকা ছাড়া লাশ দাফন করেছে তাদের কবর আর সংরক্ষণ করা হতো না। এভাবেই সেখানে কবরের ওপর কবর নির্মাণ হয়েছে অসংখ্য। ১৯৬৬ সালে ৫ টাকা বাড়িয়ে কবরের জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২৫ টাকা। ৫১ বছরের ব্যবধানে সেই জমি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। তাও আবার ২০ টাকার জমির মতো ভাল পছন্দের জমি মিলছে না। আঞ্জুমান-ই-হেমায়েত ইসলাম সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতিবছর গড়ে এ মুসলিম গোরস্তানে সাড়ে ৩শ’ লাশ দাফন করা হয়ে থাকে। স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় ধীরে ধীরে মুসলিম গোরস্তানের পরিধি বৃদ্ধি করে ৮ একর এলাকাজুড়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৬৬ বছরের ব্যবধানে সেখানে ৬০ হাজার লাশ দাফন করা হয়েছে। এখন আর সেখানে লাশ দাফনের জন্য জমি নেই। আশপাশে বিশাল অট্টালিকা আর বিলাসবহুল বাড়িঘর নির্মাণ করায় গোরস্তান সম্প্রসারণের আর কোন উপায় নেই। আঞ্জুমান-ই-হেমায়েত ইসলামের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ডিসেম্বর মাসের পর আর এ গোরস্তানে লাশ দাফনের জন্য কোন জায়গা অবশিষ্ট থাকবে না। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, কবরস্থানের জায়গা সঙ্কট নিরসনে নগরীর আরও চারটি স্থানে জমি দেখা হচ্ছে। রূপাতলী এলাকায় ৬ একরের একটি জমি নিয়ে দরদাম চলছে। খুব শীঘ্রই আরও কবরস্থান নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
×