ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থ আত্মসাতের জন্য ‘আত্মগোপনে’ থাকা কোহিনুরের আইনজীবী র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার

অপহরণের নাটক সাজিয়েও শেষ রক্ষা হলো না

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

অপহরণের নাটক সাজিয়েও শেষ রক্ষা হলো না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থ আত্মসাতের পর আত্মগোপনে গিয়ে অপহরণ নাটক সাজানোর দায়ে কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানির আইনজীবী পলাশ কুমার রায়কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গত ২১ এপ্রিল রাতে রাজধানীর তেজগাঁও থানার মনিপুরীপাড়ার বোনের বাসা থেকে প্রতারক আইনজীবী পলাশকে (৩৩) গ্রেফতার করে র‌্যাব-২-এর একটি দল। শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। র‌্যাব জানায়, আইনজীবী পলাশের পিতার নাম প্র্রণব কুমার রায়। মা মীরা রানী রায়। বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী থানার বড়সিংহ গ্রামে। তিনি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার তেজকুনীপাড়ার ১৬৭/১ নম্বর বাড়িতে বসবাস করেন। ২০১৩ সালের ২৫ নবেম্বর থেকে কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানির আইন বিভাগের জুনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি বিনা নোটিসে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। কোম্পানির তরফ থেকে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। কোম্পানির অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও নথিপত্র তার কাছে থাকায় কোম্পানি মহাবিপাকে পড়ে। পরবর্তীতে কোম্পানি জানতে পারে, কোম্পানির তরফ থেকে পাওনাদারকে টাকা পরিশোধ করার জন্য যে পরিমাণ টাকা আইনজীবী পলাশকে দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ৩১ লাখের বেশি টাকার কোন হদিস নেই। হদিস না থাকা টাকাগুলো যেসব পাওনাদার ও প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার কথা ছিল তা আইনজীবী পলাশ দেননি। এরপর যেখানে আইনজীবী পলাশের বিরুদ্ধে কোম্পানির ব্যবস্থা নেয়ার কথা, সেখানে উল্টো আইনজীবী পলাশ কোম্পানিকে দোষারোপ করে নানাভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। টাকা আত্মসাত করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার বরাবর মিথ্যা অভিযোগ দেন তিনি। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আইনজীবী পলাশ তার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করতে থাকেন। গত ২৩ মার্চ কোম্পানির তরফ থেকে আইনজীবী পলাশকে কোম্পানির অর্থ ও দলিলসমূহ বুঝিয়ে দেয়ার জন্য লিগ্যাল নোটিস দেয়া হয়। এরপর ৩১ মার্চ কোম্পানির তরফ থেকে আইনজীবী পলাশের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত ওই মামলা আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এর আগেই গত ২৯ মার্চ আইনজীবী পলাশ আত্মগোপনে চলে যান। গত ৩০ মার্চ আসামির মা মীরা রানী রায় তেজগাঁও থানায় পলাশ কুমার রায় নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে গত ৪ এপ্রিল পলাশের মা বাদী হয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলায় তার ছেলেকে অপহরণের পর গুম করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। গত ৫ এপ্রিল আসামি পলাশের মা সিএমএম কোর্ট রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে আসামি পলাশের মা দাবি করেন, তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। তার ছেলে জীবিত না মৃত তা তিনি জানেন না। জীবিত বা মৃত যেভাবে হোক তিনি তার ছেলেকে ফেরত চান। গত ১৯ এপ্রিল কিছুসংখ্যক আইনজীবীকে ভুল বুঝিয়ে আসামির মা মীরা রানী রায় এবং তার সহযোগীরা আইনজীবী ঐক্য পরিষদের (ঢাকা বার) ব্যানারে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন থেকে ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা হিসেবে ২১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়। ঘটনাটি গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এদিকে র‌্যাব অনুসন্ধানে দেখতে পায় যে আইনজীবী পলাশকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ আনা হলেও পলাশ পৃথক মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে মায়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তারই ধারাবাহিকতায় অবশেষে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন পলাশ। এরপরই অর্থ আত্মসাতের পর আইনজীবী পলাশের স্বেচ্ছায় আত্মগোপনের এমন চাঞ্চল্যকর কাহিনী বেরিয়ে এসেছে। এ সম্পর্কে কোহিনুর শিল্পগোষ্ঠীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে জানান, পলাশ একদিনে এ টাকাটা আত্মসাত করেননি। অফিস থেকে বিভিন্ন সময় পাওনাদার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের টাকা পরিশোধ করার কথা বলে টাকাগুলো উত্তোলন করেন। টাকা উত্তোলন করার পর তা পাওনাদারদের না দিয়ে নিজেই আত্মসাত করেন। পরবর্তীতে দেখা গেছে, আইনজীবী পলাশ সেসব টাকা পরিশোধ করেননি এবং নিজেই আত্মসাত করেছেন। এর পর পলাশের বিরুদ্ধে যখন আইনের আশ্রয় নেয়া হলো তখনই পলাশ অপরহণ নাটক সাজান, যা ছিল চরম অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়। শেষ পর্যন্ত প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে। এখন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। তেজগাঁও থানার ওসি মাযহারুল ইসলাম জানান, পলাশকে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তার মা মীরা রানী থানায় একটি জিডি করেছিলেন। তাছাড়া অপহরণের অভিযোগ এনে আদালতে একটি আবেদনও করেন পলাশের মা। আদালতে মামলা দায়েরের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন থানায় এলেও তা এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়নি। পলাশের নামে একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।
×