ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অতিরিক্ত সচিবের কাজ পরিবীক্ষণের দায়িত্বে সিনিয়র সহকারী সচিব!

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

অতিরিক্ত সচিবের কাজ পরিবীক্ষণের দায়িত্বে সিনিয়র সহকারী  সচিব!

তপন বিশ্বাস ॥ অতিরিক্ত সচিবের কার্যক্রম পরিবীক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সিনিয়র সহকারী সচিবকে। বিগত ৫ এপ্রিল এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এই আদেশের ফলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ০৩.০৮২.০৪৬.০০.০০.০৩৪.২০১৫-৩৭৯ সং স্মারকে পরিচালক (প্রশাসন) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত জারি করা স্থায়ী আদেশে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-, আইন শৃঙ্খলা/দুর্যোগ ইত্যাদি পরিস্থিতি পরিবীক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করা হলো। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ময়মনসিংহ/সিলেট বিভাগের। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ দায়িত্ব পেয়েছেন খুলনা বিভাগের। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-১ কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রংপুর বিভাগের। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা/রাজশাহী বিভাগের। ঢাকা বিভাগের কমিশনার অতিরিক্ত সচিব। সেই অতিরিক্ত সচিবের কাজ পরিবীক্ষণের দায়িত্ব¡ এক সিনিয়র সহকারী সচিবকে দেয়ায় চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে কখন যে কোন জুনিয়রের অধীনে চাকরি করতে হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। এটি কর্মকর্তাদের জন্য বিব্রতকর। এটি জুনিয়র কর্মকর্তার কাছেও যেমন বিব্রতকর, তেমনি বিব্রতকর সিনিয়র কর্মকর্তাদের কাছেও। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ছাড়াও আদেশের অনুলিপি দেয়া হয়েছে বিভিন্ন সচিব, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সকল মহাপরিচালক, সকল বিভাগীর কমিশনার ও জেলা প্রশাসকগণকে। এই আদেশ পেয়ে তারা বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে গঠনমূলক অনেক কাজ রয়েছে। কিন্তু তা না করে এটি লোক দেখানো একটি উদ্যোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, এডিপি শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সকলকে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার অগ্রগতি কী কারণে হচ্ছে না তা কেউ ভেবে দেখছেন না। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নে স্থাপত্য অধিদফতর বিশাল গুরুত্ব রয়েছে। সকল মন্ত্রণালয়কে একটি অধিদফতরের ওপর নির্ভর করতে হয়। যাবতীয় নক্সা তারা অনুমোদন করে থাকে। কিন্তু জনবল সঙ্কটের কারণে রাত-দিন পরিশ্রম করেও তারা যথা সময় নক্সা তৈরি করে তা অনুমোদন করে দিতে পারেন না। কোন কোন ক্ষেত্রে একটি নক্সা অনুমোদন করতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লেগে যায়। আর নক্সা পেতে বিলম্ব হওয়ায় এডিপি বাস্তবায়নেও বিলম্ব হচ্ছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে নানা জটিলতা তৈরি হয়। এই জটিলতা মিটিয়ে জমি অধিগ্রহণ বিলম্ব হচ্ছে। এতেও এডিপি বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। কিন্তু খাসজমি সরকারের দখলে আনার উদ্যোগ নিলে তা আনা সম্ভব। এতেও জটিলতা কিছু কমে আসে। এছাড়া এডিপি বাস্তবায়নের হার নির্ধারণ করা হয় প্রকল্পে টাকা খরচের ওপর। কোন প্রকল্পে কত টাকা খরচ হলো এটি বিবেচ্য ধরে প্রকল্পের অগ্রগতি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে প্রকল্পে কতটা কাজ হলো, তা কতটা জনকল্যাণ বা সরকারের উদ্দেশ্য পূরণ হলো এটা দেখা হয় না। যারা দেশের জন্য কাজ করতে চান সে সকল কর্মকর্তারা এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দেখভাল করলে যেমন দেশের উন্নতি হয়, তেমনি প্রধানমন্ত্রীর ওপর থেকেও চাপ কিছুটা কমে।
×