ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আগামীতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আগামীতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে ৭১ সদস্যের তৃণমূল বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তৃণমূল বিএনপির এ কমিটি ঘোষণা করেন এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। নতুন কমিটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা আর মহাসচিব করা হয়েছে ড. এসজেডএম সালেহউদ্দিনকে। এ কমিটির কো-চেয়ারম্যান হয়েছেন অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ মইনউদ্দিন। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আগামীতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে হবে। বর্তমান সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী, যিনি গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে পরিচিত এবং যিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা; তিনি কোন না কোন দিন দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চই করবেন, এটা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। আর আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ১৪ দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাব। অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করতে যদি সংলাপের প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই সংলাপ করবেন। কিন্তু যারা নির্বাচন, গণতন্ত্র ও নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করে না তাদের সঙ্গে সংলাপ নয়। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, শেখ হাসিনা তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করে চলেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমস্ত উন্নয়ন দৃশ্যমান। আমরা রাস্তায় বেরুলেই দেখছি, ফ্লাইওভার হচ্ছে, মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু হচ্ছে। বিভিন্নভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অনেকে উপরে চলে যাওয়ার কথা থাকলেও অতীতের রাষ্ট্রনেতারা আশার আলো দেখাতে না পারায় তা সম্ভব হয়নি। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, বিভিন্ন সময়ে হরতাল-অবরোধ, বিভিন্ন কারণে দেশে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় তাতে দেশ যে সামনের দিকে এগুতে পারবে এটা কোন দিন আশা করা যায় না। তবে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেলে ওই দুটি দলই দেশকে বিশ্ব মানচিত্রের শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থান সৃষ্টি করতে পারত। ৩১টি দল নিয়ে গঠিত নতুন মোর্চা বাংলাদেশ জাতীয় জোটের নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা শুক্রবারের অনুষ্ঠানে বলেন, এ রাষ্ট্রের মালিক জনগণ একদিন তাদের ক্ষমতা ফিরে পাবে-এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। শুধু গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার পক্ষেই এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমরা সেই লক্ষ্যে সুশাসনের স্বপ্ন দেখছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর আগে আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, জাতীয় জোটের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোট একযোগে কাজ করবে। আমি সেই ইঙ্গিতের ওপর ভরসা করে তাকে আহ্বান জানাতে চাই আসুন, দেশে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, বিশেষ করে যে সমস্ত বিষয় নিয়ে বর্তমান সরকারকে বিভিন্নভাবে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা চলছে সেসব বিষয় নিয়ে আমরা সংলাপে বসি। কি করে সমস্যার সমাধান করা যায় আপনাদের সেই পরামর্শ আমরা দিতে আগ্রহী। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, বিভিন্ন রকম ব্যক্তিগত আক্রোশে এ পর্যন্ত কোন কোন রাজনৈতিক দল দেশের রাজপথকে উত্তপ্ত করে এসেছে। জনগণ ওই রাজনীতি গ্রহণ করেনি। আমরা মনে করছি, একটি বিকল্প রাজনীতির প্রয়োজন রয়েছে, যেখানে জনগণ আস্থার জায়গা খুঁজে পাবে। আমাদের ৩১ দলের সমন্বয়ে জাতীয় জোট বিশ্বাস করে, এদেশ একটি সোনার দেশে পরিণত হতে পারে যদি শুধু আমরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারি। উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর দলটির প্রথম স্থায়ী কমিটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। খালেদা জিয়ার দুই সরকারের আমলেই তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। নানা ঘটনায় আলোচিত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়ার কারণে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০১০ সালের ২৩ জুন তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি তখন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ভুল স্বীকার করে খালেদা জিয়ার কাছে আবেদন করার পর ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আবার বিএনপির সদস্যপদ ফিরে পান নাজমুল হুদা। কিন্তু ২০১৪ সালের ৬ জুন সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অভিমানের কথা তুলে ধরে তিনি বিএনপি ত্যাগের ঘোষণা দেন। ঢাকা জেলার দোহার থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সে সময় তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলাও হয়েছিল। ২০১০ সালে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন দল খোলেন। অবশ্য ওই দল থেকেও তিনি বহিষ্কৃত হন। দ্বিতীয় দফা বিএনপি ছাড়ার পর ২০১৪ সালের মে মাসে নাজমুল হুদা গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল এ্যালায়েন্স-বিএনএ। কিন্তু ওই দলের তেমন কোন কার্যক্রম না থাকায় এক পর্যায়ে তার বিএনপিতে ফেরার গুঞ্জন ওঠে। ওই বছর ২৯ নবেম্বর নাজমুল হুদা ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্র্টি’ গঠনের ঘোষণা দেন। গতবছর জানুয়ারিতে আসে তার নতুন জোটের ঘোষণা। সবশেষ গত মাসে তৃণমূল বিএনপি নামে নতুন দল করার ঘোষণা দেন আলোচিত এই রাজনীতিবিদ। শুক্রবারের অনুষ্ঠানে সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এসডিপি) কিছু নেতাকর্মী যোগদান করেন তৃণমূল বিএনপিতে।
×