ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২৮ এপ্রিল আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মামলার বিচার শীঘ্র শুরু হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মামলার বিচার শীঘ্র  শুরু হচ্ছে

আরাফাত মুন্না ॥ শীঘ্রই বিচার শুরু হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত ভয়াবহতম রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হত্যা ও ইমারত আইনে দায়ের করা দুটি মামলার। ইতোমধ্যে মামলা দুটির নথিপত্র বিচারের জন্য প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিল কারাগারে আটক আসামিসহ মামলার সকল আসামিকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ওই দিন মামলা দুটি বিচারের জন্য আমলে গ্রহণ করবে আদালত। সূত্রমতে, এই দুই মামলায় মোট ৪১ আসামির মধ্যে ছয় আসামি কারাগারে রয়েছে। ২৩ জন জামিনে আছে। এছাড়া বাকি ১২ আসামি পলাতক রয়েছে। আসামিদের মধ্যে ১২ জন সরকারী কর্মকর্তাও রয়েছেন। ২৮ এপ্রিল মামলাটি আমলে গ্রহণ ও পরবর্তী শুনানিতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলা দুটির বিচার শুরু হবে। সূত্র জানায়, দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলাটি ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এবং ইমারত নির্মাণ আইনে দায়ের করা মামলাটি ঢাকার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। দুই মামলার সাক্ষীর সংখ্যা ৭২৯ জন। সাক্ষীদের মধ্যে রয়েছেÑ নিহতদের স্বজনদের জবানবন্দী, জীবিত উদ্ধারকৃতদের জবানবন্দী, বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সদের জবানবন্দী, উদ্ধারকর্মীদের জবানবন্দী, বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত কমিটির সদস্য, নক্সা অনুমোদনকারী, নিরপেক্ষ সাক্ষী ও মিডিয়াকর্মী। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ইতিহাসের ভয়াবহতম রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। একটি মামলা হয় অবহেলায় মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে এবং অপর মামলাটি করা হয় ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২-এর আওতায়। গত বছরের ১ জুন রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনে পৃথক দুটি চার্জশিট দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিনিয়র এএসপি বিজয় কৃষ্ণ কর। দ-বিধির মামলায় ৪১ জন ও ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেনÑ ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কুলু খালেক ও মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার মেয়র আলহাজ রেফাত উল্লাহ, কাউন্সিলর মোহাম্মাদ আলী খান, প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, নিউওয়েব বাটন লিমিটেডের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান, নিউওয়েব স্টাইপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান তাপস, ইথার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম, সাইট ইঞ্জিনিয়ার মোঃ সারোয়ার কামাল, আবু বক্কর সিদ্দিক, মোঃ মধু, অনিল দাস, মোঃ শাহ আলম ওরফে মিঠু, মোঃ আবুল হাসান, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সাবেক উপ-প্রধান পরিদর্শক মোঃ আব্দুস সামাদ, উপ-প্রধান পরিদর্শক মোঃ জামশেদুর রহমান, উপ-প্রধান পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, পরিদর্শক (প্রকৌশল) মোঃ ইউসুফ আলী, মোঃ শহিদুল ইসলাম, ইমারত পরিদর্শক মোঃ আওলাদ হোসেন, ইথার টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস, মোঃ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, মনোয়ার হোসেন বিপ্লব, মোঃ আতাউর রহমান, মোঃ আব্দুস সালাম, বিদ্যুত মিয়া, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম জনি, রেজাউল ইসলাম, নান্টু কন্ট্রাকটর, মোঃ আব্দুল হামিদ, আব্দুল মজিদ, মোঃ আমিনুল ইসলাম, নয়ন মিয়া, মোঃ ইউসুফ আলী, তসলিম ও মাহবুবুল আলম। ঢাকার জেলা প্রশাসক অফিসে রক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত এবং এক হাজার ১১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যান। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ১৩৬ জনে। এক হাজার ৫শ’ ২৪ জন আহত হন। ২৯১ জনের মরদেহ অশনাক্তকৃত অবস্থায় জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পাবনার বেড়ায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক আব্দুস সোবহান মারা যান। এ ঘটনায় দুটি মামলার মধ্যে একটি মামলা করেন সাভার থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ খান। তিনি ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল সাভার থানায় ফৌজদারি কার্যবিধিতে মামলাটি দায়ের করেন। অপর মামলাটি দায়ের করেন রাজউকের অথরাইজড অফিসার হেলাল আহম্মেদ। তিনি ২৪ এপ্রিল ভবন ধসের দিনই জাতীয় ইমারতবিধি লঙ্ঘনের দায়ে মামলাটি দায়ের করেন। আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে ২০১৫ সালের ১৩ মার্চ আদালতের নির্দেশে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার ব্যক্তিগত সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকার।
×