এম শাহজাহান ॥ রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এবার ১০ জনের একটি বড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চিহ্নিত করা হয়েছে। পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখাসহ নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণকারীদের ‘মেজর প্লেয়ারদের’ সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করা হয়েছে। ওই বৈঠকের পর ঢাকা ও চট্টগ্রামভিত্তিক ১০ জন আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দ্রব্যমূল্য নিয়ে কারসাজির অভিযোগ উঠে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। পণ্যের মজুদ, আমদানি, বর্তমান বাজার মূল্য এবং এলসি খোলার তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাচাই করে অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। আর এ কারণে পুরো রমজান মাসে সরকারী নজরদারির মধ্যে থাকবেন এসব ব্যবসায়ী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
এদিকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। আর শব-ই-বরাত অনুষ্ঠিত হতে পারে আগামী ২৩ মে। দেশের প্রধান এই ধর্মীয় মাস ও অনুষ্ঠান সামনে রেখে বরাবরের মতো এবারও ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়ানোর কারসাজি শুরু করেছেন। তাদের এ কারসাজির প্রমাণ সরকারের হাতে রয়েছে। আর তাই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এবার আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। রমজানে অতি প্রয়োজনীয় ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, ছোলা এবং ডালের সরবরাহ ও মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে আগামীকাল রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ইতোমধ্যে ছোলা, চিনি ও ডালের দাম বেড়ে গেছে। বাড়তির দিকে রয়েছে পেঁয়াজের দামও। এ বাস্তবতায় রমজানে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ ভোক্তারা। তাদের আশঙ্কা, উদ্যোগ যতই নেয়া হোক না কেন, সাধারণ মানুষকে এসব পণ্য বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হবে। তবে মূল্যসন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে রমজানের আগে এবার প্রতিযোগিতা কমিশন কার্যকর করা হবে। এ কমিশনের চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রমজান মাসজুড়ে বাজার পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত থাকবে ১৪টি মনিটরিং টিম। এছাড়া সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির মাধ্যমে খোলা ট্রাকে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করা হবে।
এছাড়া কাঁচামরিচ, টমেটো, বেগুন ও কিছু সবজি রফতানি রোজার মাসে বন্ধ রাখা হতে পারে। যদি অতিরিক্ত দাম বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে পাঁচ পণ্যÑ ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, ছোলা এবং ডালের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে এসব পণ্যের আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ করা হতে পারে। এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ে কারসাজি করলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিলসহ কারাদ- এবং আর্থিক জরিমানার কথা ভাবছে সরকার। এজন্য রমজান মাসজুড়ে গোয়েন্দা সংস্থাও তাদের নজরদারি বাড়াবে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, দু’একটি পণ্য ছাড়া আগামী রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক থাকবে। এছাড়া ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণকারীদের সঙ্গে বৈঠক ইতোমধ্যে হয়েছে। যারা পণ্য আমদানি, মজুদ ও সরবরাহ করছেন তাদের ব্যাপারে সব তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে। তাই পণ্যমূল্য নিয়ে কারসাজি করার তেমন কোন সুযোগ নেই। তিনি আশঙ্কা করে বলেন, রমজানে চিনির দাম কিছুটা বাড়তে পারে। দেশীয় চিনিশিল্প রক্ষায় প্রতিকেজি চিনিতে ১৪ টাকা শুল্কারোপ করা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে টনপ্রতি চিনির মূল্য বেড়েছে ২০০ ডলার। সব মিলিয়ে চিনির দাম বাড়তে পারে। তবে বেশি বেড়ে গেলে এক্ষেত্রে আরোপিত শুল্কারোপ প্রত্যাহার করা হতে পারে। তাই রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক থাকবে।
জানা গেছে, দেশে প্রচলিত পরিবেশক আইন, গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি এবং বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে সিন্ডিকেট চক্র রোজার আগেই অযৌক্তিক মূল্য বাড়িয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি ধরা পড়েছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলে।
এদিকে রমজান সামনে রেখে অত্যাবশ্যকীয় ১৭টি পণ্যÑ পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনা মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচি, ধনিয়া, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা, সয়াবিন তেল, পামতেল, চিনি ও খাদ্য লবণের সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়মিত মনিটরিং করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধার ঘোষণা দিতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এ বছর বাজার স্বাভাবিক থাকবে। তবে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই ভূমিকা নিতে হবে। গত ২০১২ সালে এ পণ্যটির অতিরিক্ত দাম বেড়ে যায়। ওই সময় এফবিসিসিআইয়ের বিশেষ কমিটির তত্ত্বাবধানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছিল।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: