ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চার কিস্তিতে ৪২ নেতার নাম ঘোষণা

বিদ্রোহ ঠেকাতে দফায় দফায় কমিটি দিচ্ছে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

বিদ্রোহ ঠেকাতে দফায় দফায় কমিটি দিচ্ছে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ জাতীয় কাউন্সিলের পর এক মাসেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি বিএনপি। বিদ্রোহ ঠেকাতে দফায় দফায় কমিটি দিচ্ছে দলটি। ৪ দফায় ৪২ জন নেতার নাম ঘোষণা করা হলেও দলের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা এখনও পদবিহীন। পুরো কমিটি আর কয় দফায় দেয়া হবে কেউ বলতে পারছেন না। সূত্রমতে, বিভিন্ন কারণে বিএনপি এখন চরম বেকায়দায় থাকায় নির্বাহী কমিটি গঠন নিয়ে যাতে আর নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি না হয় সে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড। এর আগে বিএনপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দল ও ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে যে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতীয় কাউন্সিলের পর দলে বিদ্রোহ ঠেকাতে দফায় দফায় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণার কৌশল নেয় বিএনপি। আর এ কৌশলে আপাতত সফলও হয়েছে দলটি। ৪ দফা কমিটি দেয়ার পর এখন পর্যন্ত দলের ভেতর থেকে কেউ এ নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলেনি। জানা যায়, দফায় দফায় কমিটি দেয়ায় এখন পর্যন্ত যেসব কেন্দ্রীয় নেতার নাম আসেনি তাদের সবাই ধরে নিচ্ছে পরবর্তী দফায় তাদের নাম আসবে। কারণ এবার জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এক নেতার এক পদ করায় আগের কমিটির ৩৮৬ নেতার মধ্যে যারা একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন এমন নেতা ছাড়া বাকি সবাই কোন না কোন পদ পাবেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন কি-না, এ নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কিছুটা আশঙ্কা রয়েছে। যেমন- বিএনপির এমন কিছু নেতা আছেন যারা ঘোষিত ৪ দফা কমিটিতে যে স্তরের নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে সে স্তরে থাকার যোগ্য। কিন্তু এ স্তরে তাদের নাম না থাকায় কেউ কেউ হতাশ হয়েছেন। তবে লবিং ভাল থাকলে কেউ কেউ আরও উঁচু স্তরে স্থান পেয়ে যেতে পারেন। আর তা না হলে কোন না কোন স্তরে নাম থাকতে পারেÑ এমন আশা থেকেই কেউ আপাতত বিদ্রোহী হচ্ছেন না। অভিজ্ঞ মহলের মতে, দফায় দফায় কমিটি না দিয়ে একসঙ্গে পুরো কমিটি দিলে কেউ কোন কারণে পদ না পেলে বা তুলনামূলক নীচু স্তরের পদ পেলে বিদ্রোহী হয়ে উঠত। দফায় দফায় কমিটি দিয়ে বিএনপি হাইকমান্ড এক্ষেত্রে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে দলের সিনিয়র স্তর অর্থাৎ স্থায়ী কমিটি ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে এখনও কারও নাম ঘোষিত না হওয়ায় আগের কমিটির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। হাইকমান্ডের বিরাগভাজন হতে চান না বলে তারা তাদের ক্ষোভের কথা প্রকাশ করছেন না। উল্লেখ্য, ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের দিন কর্ম অধিবেশনে প্রথম দফায় খালেদা জিয়াকে চেয়ারপার্সন ও তার লন্ডনপ্রবাসী ছেলে তারেক রহমানকে পুনরায় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। আর ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব, রুহুল কবির রিজভীকে সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব ও মিজানুর রহমান সিনহাকে দলের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ৯ এপ্রিল তৃতীয় দফায় ঘোষণা করা হয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির ১৬ নেতার নাম। এর মধ্যে ৭ জন যুগ্মমহাসচিব ও ৯ জন সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া ৭ জন যুগ্মমহাসচিবের মধ্যে রয়েছেনÑ আগের কমিটির একই পদে থাকা ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান সারোয়ার, আগের কমিটির যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আগের কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন, আগের কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ ও আগের কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরী। তৃতীয় দফায় ঘোষিত বিএনপির ৯ সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে আগের কমিটির একই পদে থাকা ফজলুল হক মিলন (ঢাকা বিভাগ) ও আসাদুল হাবিব দুলু (রংপুর বিভাগ) রয়েছেন। বাকি ৭ জন নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক হলেনÑ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন (চট্টগ্রাম বিভাগ), আগের কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু (খুলনা বিভাগ), আগের কমিটির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু (রাজশাহী বিভাগ), আগের কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক ইমরান সাহেল প্রিন্স (ময়মনসিংহ বিভাগ), আগের কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ সাখাওয়াত হোসেন জীবন, আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য শ্যামা ওবায়েদ (প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগ) ও আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য বিলকিস জাহান শিরিন (বরিশাল বিভাগ)। বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটিতে সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল ঘোষিত তালিকায় স্থান পান আরও ২১ নেতা। এদের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে স্থান পান সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল (অব) আনোয়ারুল আজিম (প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগ)। আর বাকি ২০ জন হলেনÑ সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। তারা হলেনÑ ঢাকা বিভাগে আবদুস সালাম আজাদ ও শহীদুল ইসলাম বাবুল, চট্টগ্রাম বিভাগে মাহাবুবুর রহমান শামীম ও আবুল হাশেম বকর, রাজশাহী বিভাগে আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা ও শাহীন শওকত, খুলনা বিভাগে অনিন্দ ইসলাম অমিত ও জয়ন্ত কুন্ড, বরিশাল বিভাগে আখন্দ কুদ্দুস ও মাহবুবুল হক নান্নু, সিলেট বিভাগে দিলদার হোসেন সেলিম ও কলিম উদ্দিন মিলন, রংপুর বিভাগে শামসুজ্জামান ও সৈয়দ জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগে মোশতাক মিয়া ও আবদুল আউয়াল খান, ময়মনসিংহ বিভাগে শরীফুল আলম ও ওয়ারেছ আলী মামুন, প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে আলী নেয়াজ মাহমুদ খৈয়াম ও সেলিমুজ্জামান সেলিম। এদিকে বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য শ্যামা ওবায়েদ (প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগ) ও আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য বিলকিস জাহান শিরিন (বরিশাল বিভাগ)। আর নতুন কমিটিতে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে আগের কমিটির কোন পদে না থাকা অনিন্দ ইসলাম দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে হিসেবে স্থান পেয়েছেন। আর ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া শহীদুল ইসলাম বাবুল ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন। এ কমিটির আরেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান শামীম আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন। আগের কমিটিতে সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা জয়ন্ত কুন্ড এবার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। বর্তমান কমিটির অন্য সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে কলিম উদ্দিন মিলন, মাহবুবুল আলম নান্নু, আখন্দ কুদ্দুস ও শাহীন শওকত আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন। অথচ আগের কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভুইয়া, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ বেশ কয়েকজন সক্রিয় নেতা রয়েছেন যারা এখনও কোন পদ পাননি। আবার যে সকল পদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তার ওপরে কিংবা নিচেও তাদের স্থান দেয়া বেমানান হবে বলে দলের নেতাকর্মীরাই মনে করছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, তাদের হয়ত এমন জায়গায় স্থান দেয়া হবে যা সাংগঠনিক বা সহ-সাংগঠনিক পদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোথায় স্থান দেয়া হবে তা কেবল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানই বলতে পারেন। বিএনপির সিনিয়র নেতা লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, জাতীয় কাউন্সিলের এক মাসের বেশি সময় অতিক্রম হলেও যাচাই বাছাই করে দফায় দফায় কমিটি দেয়া হচ্ছে। আর এতবড় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যোগ্য নেতা বাছাইপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগতেই পারে।
×