ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীর অভিজাত হোটেলে ভার্সিটি ছাত্রছাত্রী খুন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

রাজশাহীর অভিজাত হোটেলে ভার্সিটি ছাত্রছাত্রী খুন

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী/ রাবি সংবাদদাতা ॥ রাজশাহীর একটি অভিজাত আবাসিক হোটেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক প্রেমিক যুগলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে নগরীর সাহেব বাজার এলাকার নাইস ইন্টারন্যাশনাল নামে ওই হোটেলের তিন তলার একটি কক্ষে তাদের লাশ পাওয়া যায়। লাশের অবস্থা দেখে এটিকে হত্যাকা- বলে নিশ্চিত করেছেন বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদত হোসেন। রোমহর্ষক এই জোড়া খুনের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিহতরা হলেনÑ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিজানুর রহমান (২৩) এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রী সুমাইয়া ইয়াসমিন (২০)। মিজানুর রহমান সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গা থানার পাঠানপাড়ার অসেদ আলীর ছেলে। তিনি রাবিসংলগ্ন মির্জাপুর এলাকার একটি মেসে থাকতেন। সুমাইয়ার বাবা আব্দুল করিম গাইবান্ধা থানার গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক। তার পরিবার বগুড়ার উপশহর এলাকায় থাকে। এদিকে জোড়া হত্যাকা-ের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নাইস ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের সুপারভাইজার রবিউল ইসলাম (৩৫), হোটেলবয় নয়ন (২৫), ফয়সাল আহমেদ (২৬) ও বখতিয়ার হোসেনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। হোটেলের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ জানান, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বুধবার রাত সাড়ে দশটার দিকে মিজানুর রহমান ও সুমাইয়া হোটেলের ৩০৩ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেন। এ সময় তারা ব্যবসাসংক্রান্ত কাজে রাজশাহীতে এসেছেন বলে জানান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা হোটেলের বিল মিটিয়ে দিয়ে শুক্রবার সকালে হোটেল ত্যাগ করবেন বলে জানান। শুক্রবার দুপুরে প্রতিটা রুম রুটিন চেকআপের করার সময় ৩০৩ নম্বর রুমটি ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে দরজার ফাঁক দিয়ে একজনকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। পরে তারা রুম খুলে দু’জনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদত হোসেন খান বলেন, নিহত সুমাইয়ার মুখে ছুরি দিয়ে কাটা দাগ আছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আঘাতের চিহ্ন আছে। তার মুখে বালিশ চাপা ছিল। আঘাতের পর বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া মিজানুর রহমানের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। তবে পেছনের দিকে হাত বাঁধা ছিল। এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকা- বলে তারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত। তবে হত্যার মোটিভ কী হতে পারে তা বলা যাচ্ছে না। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হোটেলের চার কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে খবর পাওয়ার পর হোটেলের ওই কক্ষটি পুলিশ ঘিরে রাখে। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি ও কক্ষটিতে তল্লাশি চালান। এ সময় নিহত তরুণ-তরুণীর মুঠোফোনসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন তারা। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে উভয়ের পরিবারকে সংবাদ দেয়া হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ের মোটিভ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিহত মিজানুরের সহপাঠীরা জানান, মিজানুর শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ছিল। একটু চাপা স্বভাবের হওয়ায় সে তেমন কথা বলত না। তবে ক্যাম্পাসে তার কোন শত্রু ছিল না। এলাকাতেও সে নির্বিরোধী ছিল। প্রেমঘটিত কারণে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা। এদিকে নিহত মিজানুর রহমান শুক্রবার রাত দুটোর দিকে তার ফেসবুক আইডি থেকে ‘পৃথিবী ছেড়ে যাচ্ছি’ এমন একটি স্ট্যাটাস দেন। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হত্যাকা-টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হতে পারে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে মিজানুরের মামা ইউনুস আলী মুঠোফানে জানান, বুধবার থেকে তার ভাগ্নে নিখোঁজ ছিল। শুক্রবার পুলিশের কাছ থেকে তারা হত্যাকা-ের খবর পান। তবে সুমাইয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল এমন কোন তথ্য তিনি জানেন না।
×