ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টির খবর নেই, তীব্র গরমে অতিষ্ঠ দেশবাসী

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

বৃষ্টির খবর নেই, তীব্র  গরমে অতিষ্ঠ  দেশবাসী

নিখিল মানখিন ॥ আবহাওয়ার ব্যতিক্রমী আচরণে বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন দেশের আবহাওয়াবিদরা। অধিদফতরের পূর্বাভাসে চলতি মাসে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সৃষ্টি হতে পারে নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় ও তীব্র তাপপ্রবাহ। কিন্তু তাপপ্রবাহ ছাড়া আবহাওয়া অধিদফতরের কোন পূর্বাভাসই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে না। চলতি মাসের আর মাত্র ক’টা দিন বাকি রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাপপ্রবাহ ও তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে দেশবাসী। গত তিন সপ্তাহে সিলেট অঞ্চল ছাড়া দেশের কোথাও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। মাঠ প্রান্তর খাঁ খাঁ করছে। অনেক এলাকায় লিচু ও কচি আম ঝরে পড়ছে। আজ শনিবারও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন নতুন এলাকায় বিস্তার লাভ করবে তাপপ্রবাহ। তাপপ্রবাহ, আর্দ্রতার দাপট ও বৃষ্টিশূন্যতাই গরমের তীব্রতা বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে ৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী অথবা বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩ থেকে ৪দিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী অথবা বজ্রঝড় হতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে একটি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ১ থেকে ২টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঢাকা বিভাগে ১৪৭ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ১৪৩ মিমি, সিলেটে ২৯৬ মিমি, রাজশাহীতে ৮০ মিমি, রংপুরে ৮৮ মিমি, খুলনায় ৭২ মিমি ও বরিশাল বিভাগে ১৩২ মিলিমিটার থাকতে পারে। স্বস্তি প্রত্যাশী দেশবাসীকে আরেকটি দুঃসংবাদ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি সেন্টারেই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বৃদ্ধি হয়েছে। শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৬ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সিলেটে ২০.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। যা তীব্র গরম অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত দেয়। আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, আজ শনিবারও তাপপ্রবাহ নতুন নতুন জেলায় বিস্তার লাভ করবে। অর্থাৎ আগামী দু’-তিন দিনেও তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আজ শনিবার সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলসমূহে অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ঢাকা, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর অঞ্চলসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অন্যান্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ওই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিস্তার লাভ করতে পারে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দাবদাহে পুড়ছে দেশ। বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। বৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে। দেশের কিছু জায়গায় সীমিত বৃষ্টিপাত হলেও তা মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে খরতাপে শুকিয়ে যাচ্ছে। খাঁ খাঁ করছে দেশের মাঠ প্রান্তর। খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয় ফের পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। গত মাসে বেশ কিছুদিন বৃষ্টিপাত থাকায় ওই সব জায়গায় পানি দেখা গিয়েছিল। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশিসহ নানা মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি মাসজুড়ে দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। বায়ুম-লে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী লঘুচাপের সংযোগ না ঘটায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বায়ুম-লে ক্রমেই অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া বিন্যাসে সাধিত হচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন। আবহাওয়া বিন্যাসের ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে পশ্চিমা বায়ু উপরের দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং উপরের অংশে অবস্থান করছে। পশ্চিমা বায়ুর অবস্থান উত্তর দিকে হিমালয় বরাবর। এ বছর গ্রীষ্মকালে তুলনামূলকভাবে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। জলভাগ ও স্থলভাগের তাপমাত্রার বড় ধরনের পার্থক্যের কারণে বর্ষাকাল সৃষ্টি হয়। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে এ বছর এ দুই স্থানের তাপমাত্রার ব্যবধান অনেকটা বেশি থাকবে। আবহাওয়ার দীর্ঘকালীন পূর্বাভাসে চলতি মাসে দুটি নিম্নচাপের কথা বলা হয়েছিল। যা এখন পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি। নিম্নচাপ হলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারত এবং দাবদাহের মাত্রা হ্রাস পেত। এমনটি মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদরা আরও বলছেন, দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অনেক উপরে উঠে গেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সব আবহাওয়া স্টেশনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়ে আসছে। মাঝে মাঝে আকাশে মেঘ জমলেও বৃষ্টি হয় না। কিছু সময়ের জন্য বাতাসের বেগ বেড়ে গিয়ে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ে। এতে ভূপৃষ্ঠের শুষ্ক অবস্থা আরও উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। বেড়ে যায় ভ্যাপসা গরমের মাত্রা। এদিকে, রাজধানীর আকাশেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত নেই। দিনের অধিকাংশ সময় পড়ছে তীব্র রোদ। গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসী। ঘন ঘন লোডশেডিং বাড়িয়ে দিচ্ছে দুর্ভোগের মাত্রা। ব্যাহত হচ্ছে নগরবাসীর স্বাভাবিক কাজকর্ম। প্রখর রোদ উপেক্ষা করেই চলতে হয় পথচারীদের। এত অস্বাভাবিক গরমে পরিবহনগুলোর ভেতরের তপ্ত পরিবেশে অস্থির হয়ে ওঠে যাত্রীরা। দাবদাহে জর্জরিত মানুষের কাছে বেড়ে যায় ঠা-া পানীয়ের চাহিদা। শুক্রবার ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩৬.৪ ও ২৮.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঢাকার গত কয়েকদিনের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮ থেকে ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা বেশি থাকে, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসে, তাহলে গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে। বর্তমানে ঢাকায় এমন অবস্থাই বিরাজ করছে। ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাস পেয়ে ৬ থেকে ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। শুধু তাই নয়, রাজধানীসহ শহুরে এলাকার জন্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস অনেকটাই দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি করে। বর্তমানে রাজধানীবাসীকেও এমন বিরূপ আবহাওয়া ও ইট-পাথরের প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
×