ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৫ আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচিত ॥ ৮১ ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী নেই

আজ ৬২০ ইউপিতে তৃতীয় দফায় নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

আজ ৬২০ ইউপিতে তৃতীয় দফায় নির্বাচন

শাহীন রহমান ॥ ইউনিয়ন পরিষদের তৃতীয় দফায় ভোট আজ। এ দফায় সারাদেশের ৪৮ জেলার ৬২০ ইউপিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে তা বিরতি ছাড়াই চারটা পর্যন্ত চলবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। তারা বলছেন, দুই দফায় নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য করা হবে। নির্বাচনে তৃতীয় দফায় ভোট প্রদান করবেন ১ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৫ ভোটার। এ দফায় ৬২০ ইউপিতে নির্বাচনের জন্য চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ২৯ হাজার ৯১৩ প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ২ হাজার ৬৭২। সাধারণ সদস্য ২০ হাজার ৯৪৩ এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ হাজার ২৯৮ প্রার্থী। শুধু চেয়ারম্যান পদেই দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হচ্ছে। এর বাইরে সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্দলীয় ভোট হচ্ছে। নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত মোট ১৪ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা সবাই দলের নিবন্ধিত প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। অপরদিকে চেয়ারম্যান পদে যারা স্বতন্ত্র হিসেবে রয়েছেন তারা ইসির বরাদ্দকৃত প্রতীকে নির্বাচন করছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীরা যথাক্রমে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে রাজনৈতিক দলের মোট প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৪৮৭। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ১৮৫। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বেশিরভাগ রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী থেকে মনোনয়ন বঞ্চিতরা। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে তৃতীয় দফায়ও নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। দলের অনেক নেতাকর্মীই বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। তবে ইসি জানিয়েছে সহিংসতার বিষয়ে তারা আরও অধিক সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সহিংসতা এড়াতেই ইসিতে দ্বিতীয়বার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রধানদের ডেকে নিয়ে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আরও কঠোর হওয়ার জন্য তাদের কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে কমিশন জানিয়েছে। তৃতীয় দফায় ৬২০ ইউপিতে ভোট হলেও আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দলের সব ইউপিতে প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের ৬২০ চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকলেও সেখানে বিএনপির প্রার্থী রয়েছে ৫৩৯ ইউপিতে। ৮১ ইউপিতে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। অবশ্যই বিএনপির প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন ভয় দেখিয়ে তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে। এরপর যারা নির্বাচনে রয়েছেন তাদেরও নির্যাতন ভয়ভীতি হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় তারা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সংখ্যা রয়েছে মাত্র ১৬৭। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল হলেও ইউপি নির্বাচনের প্রত্যেক দফায় দলটি নগন্য সংখ্যক প্রার্থীই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। নির্বাচনের ফলাফলেও জাতীয় পার্টির অবস্থান নেই বললেই চলে। এছাড়া মশাল প্রতীকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের প্রার্থী রয়েছে ২৬, কুলা প্রতীক নিয়ে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের ৩, হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ১২, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৯২, বাইসাইকেল নিয়ে জাতীয় পার্টি জেপির ৩, চেয়ার প্রতীক নিয়ে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩, কাস্তে প্রতীক নিয়ে সিপিবির ৫, খেজুরগাছ প্রতীকে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী ১০, দেয়ালঘড়ি নিয়ে খেলাফত মজলিসের ২, মই প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের ১ এবং অন্যান্য ৪ প্রার্থী রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদিকে আজ তৃতীয় দফায় ভোটগ্রহণ করা হলেও বরাবরের মতো এ দফায়ও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ইসি জানিয়েছে মোট ২৫ প্রার্থীর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তারা ভোট ছাড়াই নির্বাচত হয়েছেন। তবে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সবাই আওয়ামী লীগ দলীয় বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া এ দফায়ও চেয়ারম্যান প্রার্থীর মতোই সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদেও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ইসি জানিয়েছে সাধারণ সদস্য পদে ১৭৪ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬৯ প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এসব পদে আর ভোটগ্রহণ হবে না। কমিশন জানিয়েছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, ভোটার সিলমোহরসহ সব নির্বাচনী সরঞ্জাম সব ভোট কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে। যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিন শুধু ইসির অনুমোদিত যানবাহন ছাড়া কোন যান্ত্রিক যান চলাচল করতে পারবে না। ভোটগ্রহণ সম্পন্ন এবং ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের প্রচারণা, মিছিল-মিটিং, পথসভাও করা যাবে না। ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ নির্বাচনী অনিয়ম রোধ এবং তাৎক্ষণিক বিচার ব্যবস্থার জন্য নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে দায়িত্বে নিয়োজিত কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে দুই দফায় কিছু সহিংসতার পেক্ষাপটে তৃতীয় দফায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করাও কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তৃতীয় দফায় নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশেই সম্পন্ন করা হবে। সহিংসতা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ জানিয়েছেন, গত দুই ধাপের চেয়ে সামনের ধাপের নির্বাচন অনেক বেশি সুষ্ঠু হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে কিছু অনিয়মও হয়েছে। কমিশন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। শনিবার তৃতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে সন্ত্রাসী ও বেআইনী কর্মকা-ের কোন ছাড় দেয়া হবে না। তৃতীয় ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশেই সম্পন্ন করা হবে। আগের চেয়ে এ ধাপের নির্বাচন আরও সুন্দর হবে। আগের দুই ধাপ থেকে কমিশন যথেষ্ট শিক্ষা নিয়েছে। সামনের ধাপগুলোতে ভুল কম হবে। আশা করি সন্ত্রাস সহিংসতা হবে না। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। এদিকে তৃতীয় দফায় নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য ইসির ওপর সব মহলের চাপ রয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসিকে বার্তা দিয়েছেন আগামী দফায় নির্বাচনের কোন সহিংসতা দেখতে চান না। নির্বাচন সুষ্ঠু করতেও তিনি ইসিকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলেছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীরা কোন বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত থাকলেও তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণেই ইউপি নির্বাচনের তৃতীয় দফায়ও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। আগের দুই দফায় সহিংসতা হয়েছে মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে দলের মনোনয়নবঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে। এ নির্বাচনেও প্রায় অর্ধেক ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী অধ্যুষিত ইউপিতে মূলত সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। এর পাশাপাশি তৃতীয় দফায় নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থীরা সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। এ কারণে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ইসি জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সবাইকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছে। ভোট কেন্দ্রে কোন ধরনের দাঙ্গা, সন্ত্রাস বা অনিয়ম সংঘটিত হলে, আইন ও বিধির কোন ব্যত্যয় ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখার কথা বলা হয়েছে। নির্বাচনে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মোবাইল ফোর্স ও প্রতি তিন ইউপির জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতি উপজেলায় দুটি করে র‌্যাবের মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং টিম এবং প্রতি উপজেলায় দুই প্লাটুন বিজিবি মোবাইল ও এক প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্র নিরাপত্তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রেও থাকছে বাড়তি নিরাপত্তা।
×