ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাছ ধরা নিয়ে দিনভর চলে উৎসব

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

মাছ ধরা নিয়ে দিনভর চলে উৎসব

নদী, খাল, বিল ও পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্র মাছ ধরার ধুম পড়েছে। নানা আকৃতি, স্বাদ ও বৈচিত্র্যের দেশী জাতের মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বিভিন্ন পেশার মানুষ নানাধরনের ফাঁদ তৈরি করে এখন মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে। এ বিভাগে ৪০ হাজার হেক্টর জলাশয় রয়েছে। এরমধ্যে দীঘি, পুকুর ও ডোবা রয়েছে ৮৬ হাজার ২শ’টি। আয়তন সাড়ে ২৩ হাজার হেক্টর। ৯শ’ হেক্টরের লেক রয়েছে পাঁচটি। এছাড়াও সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জলাশয়ে দেশী ও ছোট প্রজাতির মাছ বিচরণ করে। সর্বশেষ গত অর্থবছরে এসব জলাশয় থেকে ১৩ হাজার মেট্রিক টন দেশী প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব জলাশয়ে ঝাপিজাল, কড়াজাল, বেড়জাল, ঠেলাজাল, কোণাজাল দিয়ে মাছ শিকার করার উৎসবে মেতে উঠেছে সকল বয়সের মানুষ। আবার অধিকাংশ পুকুর, ডোবা ও জলাশয় সেচ করেও কেউ মাছ ধরছে। শুধু তাই নয়, কোথাও বড়শি ফেলে, কোথাও বা পলো দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। তবে আগের মতো মাছের আধিক্য না থাকলেও জৌলুস ফুরিয়ে যায়নি। বর্তমানে দেশী প্রজাতির মাছের চড়া দাম ও ব্যাপক চাহিদা থাকায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখান থেকে মাছ চালান হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। মাছ ধরে ও বিক্রি করে অসংখ্য পরিবার বাড়তি উপার্জন করছে। প্রতিবছর বরিশাল সদরসহ মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, বাকেরগঞ্জ, মুলাদী, বানারীপাড়া, বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, উজিরপুর ও আগৈলঝাড়া উপজেলার নদী, খাল, বিল ও পুকুর বর্ষায় প্লাবিত হয়। আষাঢ় মাসে নানাজাতের দেশী মাছ ডিম ছেড়ে বংশ বিস্তার করে। এসব মাছের মধ্যে পুঁটি, সরপুঁটি, কৈ, শিং, শৈল, গজার, টাকি, টেংরা, বাইন, চিংড়ি, বেতরঙ্গি, বাতাসি, বোয়াল, মাগুর, দারকিনা, পাবদা, চিতল, নিন্দাল, ডানকিনে, খলশে, বাটা, শালবাইন, কানিপাবদা, মধুপাবদা, তিতপুঁটি, তারাবাইন, ফলি, মেনি, লাউয়া, নামাচান্দা, চান্দা অন্যতম। বৈশাখ মাসে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নদী, খাল, বিল ও পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় এখন মাছ ধরার উৎসব চলছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব মাছ ঢাকাসহ পাশের ফরিদপুর, নড়াইল, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় চালান হচ্ছে। পেশায় জেলে নয় এমন লোকজনও মাছ ধরার পর তা বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করছে। প্রাচীনকাল থেকেই দেশী প্রজাতির মৎস্য ভা-ার হিসেবে খ্যাত বরিশাল। সে সময় এ অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে ২৬০ থেকে ২৭০ প্রজাতির মাছ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে স্বাদু ১২০ প্রজাতির মাছ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে সময়ের ঘূর্ণিপাকে ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে পুরনো দিনের ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। মানুষ বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছের প্রজননকাল চৈত্র-বৈশাখ মাসে পুকুর-জলাশয় সেচ করে ডিমওয়ালা মাছসহ সকল মাছ শিকারের মহোৎসব, বিদেশী মাছের চাষ, পানিতে লবাণক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি, জলাশয়, পুকুর ভরাটের কারণে জলাশয় থেকে একের পর এক দেশী প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। দেশী প্রজাতির মাছ রক্ষায় ১৯৫০ সালে মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন করা হলেও এখন পর্যন্ত দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। ফলে দিনে দিনে মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত বরিশাল থেকে চিরচেনা অসংখ্য দেশী প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে। Ñখোকন আহম্মেদ হীরা বরিশাল থেকে
×