ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে আইন হচ্ছে

ব্যক্তিগত গাড়ির দাপটে রাজধানীতে যানজট

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

ব্যক্তিগত গাড়ির দাপটে রাজধানীতে যানজট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিন দিন বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি। রাস্তায় বাড়ছে গাড়ির চাপ। ফলে রাজধানী এখন যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। আবার রাজধানীতে গণপরিবহন স্বল্পতায় ভোগান্তি বাড়ছে নগরবাসীর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমলে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। এদিকে ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধন কঠোর করার কথা উঠলেও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বলছে অন্য কথা। তারা বলছে, কঠোর পদক্ষেপ নিতে হলে আগে সরকারের নির্দেশনা লাগবে। অন্যথায় পদক্ষেপ তারা নিতে পারছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি সামলাতে দ্রুত আইন প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা দরকার। প্রতিদিন সকালে রাস্তায় বের হলে দেখা যায়, অফিসমুখী মানুষের বাসে ওঠার যুদ্ধ। শত শত যাত্রী বাসের অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্তু গণপরিবহন কম থাকায় হতাশ হতে হয় অনেককেই। রাস্তায় দেখা যায় পরিবহনের বদলে ব্যক্তিগত গাড়ির দাপট। দেখলে মনে হবে যেন রাস্তা দখল করে আছে ব্যক্তিগত গাড়ি। প্রতিবছর ৩৭ হাজার গাড়ি ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় যুক্ত হচ্ছে। এর ৮০ শতাংশ প্রাইভেট কার বা ব্যক্তিগত গাড়ি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজের বিত্তবান পরিবারগুলো একের অধিক গাড়ি ব্যবহার করে থাকে। একটি পরিবারে তিন থেকে চারজন সদস্যের জন্য গাড়ি থাকে পাঁচ থেকে ছয়টি। এ ছাড়া সিএনজিতে চলায় এখন জ্বালানি খরচও অনেক কম। এ সুযোগে অনেক মধ্যবিত্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনছেন। অন্যদিকে, শহরে পর্যাপ্ত গণপরিবহনের অভাব রয়েছে। এসব কারণে রাজধানীতে যানজট লেগে থাকছে। ঢাকা শহরে সড়ক না বাড়লেও প্রতিদিনই প্রায় ১৫০টি নতুন গাড়ি নামছে। গাড়ির ক্রমবর্ধমান এ চাপ উড়াল সড়ক, উড়াল সেতু নির্মাণ করেও সামাল দেয়া যাবে না। ফলে অদূর ভবিষ্যতে বিশেষ করে প্রাইভেট কারের চাপে ঢাকা পরিণত হবে গাড়িময় স্থবির নগরীতে। এ অবস্থায় কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) মাধ্যমে গাড়ির চাপ কমাতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলেও এর অগ্রগতি সামান্যই। রাজধানীকে সচল রাখতে ও দেশের আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি আমলে নিয়ে এবার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শীঘ্রই এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হবে। আইনে পরিবার প্রতি সর্বোচ্চ দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হতে পারে। এ ছাড়া ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সপ্তাহের একেক দিন জোড়-বিজোড় রেজিস্ট্রেশন নম্বর হিসেবে চলাচলের চিন্তাও রয়েছে। সরকারী কাজে ব্যবহৃত গাড়ি এ পদ্ধতির বাইরে থাকবে। সে সব গাড়ির নম্বর প্লেট হবে বিশেষ রঙের। সরকারের এ চিন্তাকে স্বাগত জানিয়ে পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেয়া উচিত ছিল। বর্তমানে রাজধানীতে সড়কের তুলনায় গাড়ি দ্বিগুণ। এর মধ্যে আবার ৭৫ শতাংশ সড়ক অপরিকল্পিত। এখন যানজট নিরসনে যেসব ফ্লাইওভার-উড়াল সড়ক হচ্ছে, সেগুলো অদূর ভবিষ্যতে যানজট কমাতেই ভাঙতে হবে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির রাজধানী সিউলে এক সময় যানজট কমাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলেও পরে সেই একই কারণে তা ভেঙ্গে ফেলা হয়। প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগের বিষয়টি গণমাধ্যমে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি তিনি বলেন, একটি পরিবার যত খুশি তত গাড়ি রাখতে পারবে না। সর্বোচ্চ কয়টি গাড়ি রাখতে পারবে, সে সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব করে সড়ক পরিবহন আইন করা হচ্ছে। মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩-এর পরিবর্তে দুটি ভিন্ন আইন চূড়ান্তকরণের পর্যায়ে রয়েছে। এর একটি সড়ক পরিবহন আইন, অন্যটি সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আইন। এর মধ্যে সড়ক পরিবহন আইনটি আগামী ২৪ এপ্রিল জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশনে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, খসড়া সড়ক পরিবহন আইনে পরিবারপ্রতি গাড়ির উর্ধসীমা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। বিআরটিএ পরিচালক (প্রকৌশল) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হলেও সরকার কর্তৃক কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা না হয় তাহলে আমরা সেটা কার্যকর করতে পারছি না।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধন নয়, বরং গাড়ির ব্যবহার কমানোরও উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক বলেন, ‘বর্তমানে ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা অনেক। যার সঠিক সংখ্যা অনেকেরই জানা নেই। দেখা গেছে পরিবারে সদস্য ৪ জন। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা ৩টি। যেখানে একটি গাড়িতেই ওই চারজন চলাচল করতে পারে। কিন্তু তারা অযথা গাড়ির ব্যবহার করে রাস্তায় যানজট বাড়াচ্ছে। তবে সরকার যদি এই ব্যক্তিগত গাড়ি কমাতে চায় তাহলে পার্কিংয়ের সুবিধা কম দিতে হবে। সরকারকে একদিকে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমাতে হবে পাশাপাশি বাকি গাড়িগুলোর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কমাতে হবে।’ তবে বিকল্প হিসেবে গণপরিবহন ব্যবস্থা শক্তিশালী না করলে ব্যক্তিগত গাড়ি কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন হবে বলেও জানান তিনি।
×