ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিপজ্জনক ওষুধ কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

বিপজ্জনক ওষুধ কোম্পানি

অসুখ সারাতে ওষুধ আবশ্যক। কিন্তু ওষুধ নিজেই ‘ব্যাধিগ্রস্ত’ হলে উপায় কী? পরিস্থিতিটা সেরকমই। দেশে ওষুধ কোম্পানির ছড়াছড়ি। এর সবই যে বৈধ সনদধারী এমন নয়। আছে নকল বা ভেজাল ওষুধ তৈরির অবৈধ কারখানাও। সে কথা পাশে সরিয়ে রেখে বরং লাইসেন্সধারী ওষুধ কোম্পানিগুলোর কথাই বলা যাক। ওষুধের অভ্যন্তরীণ বাজারটি বিশালÑ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার। তাই মুনাফালোভী কোম্পানিগুলোর অনৈতিক কাজ করতে বাধছে না। তারা দেদার উৎপাদন করে চলেছে মানহীন ওষুধ। কিন্তু ওষুধ শখ করে খাওয়ার কোন ‘রসগোল্লা’ নয়, এ হচ্ছে এক অর্থে জীবন রক্ষাকারী দরকারী বস্তু। অথচ জীবন রক্ষার জন্য ওষুধ সেবন করতে গিয়ে সে ওষুধ জীবন সংহারে সক্রিয় হয়ে উঠছে! পক্ষান্তরে এটাও সত্যি যে, বাংলাদেশেরই অনেক ওষুধ কোম্পানি বিদেশে মানসম্পন্ন ওষুধ রফতানি করে আসছে সুনামের সঙ্গে। তার পরিমাণও নিহায়ত কম নয়। প্রায় ৯০টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হয়। বিগত বছরগুলোয় গড়ে কমবেশি ৫০০ কোটি টাকার ওষুধ রফতানি হচ্ছে। আবার এর বিপরীতে অর্ধশতাধিক কোম্পানির তৈরি ওষুধ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হয়েও উঠেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বুধবার এক সভায় দেশের ২০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলসহ মোট ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে। ওই সব কারখানার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগÑ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৭৬ সালের জিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস) নীতিমালা অনুসরণ করে মানসম্পন্ন উপায়ে ওষুধ প্রস্তুত না করা। এর আগেও একই সংসদীয় কমিটি একই ধরনের সুপারিশ করেছিল। যদিও কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যথেষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। ফলে অভিযুক্ত ওষুধ কোম্পানিগুলো দ্বিগুণ উৎসাহে একই ধরনের অপকর্ম করে গেছে। বলা দরকার, নকল প্যারাসিটামলসহ অন্যান্য ওষুধ সেবনে শিশুমৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে দেশে। কিন্তু বন্ধ হয়নি নকল ওষুধ তৈরি ও তা বাজারজাত করার অপকর্ম। নকল ও ভেজাল ওষুধের কারবারিরা ধরা পড়ছে, আবিষ্কার হচ্ছে নতুন নতুন ভেজাল ওষুধের কারখানা, কিন্তু তারপরও ভেজাল ওষুধ তৈরি বন্ধ হচ্ছে না। বন্ধ হচ্ছে না প্রতারক চক্রের অবৈধ ব্যবসা। বলাবাহুল্য নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করার ক্ষেত্রে বড় একটি চক্র জড়িত আছে। নানা ধরনের সিরাপ, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল নকল হচ্ছে। অতীতে অনেক ট্যাবলেট, ক্যাপসুল পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেগুলোর ভেতরে সাধারণ আটা-ময়দা ছাড়া কিছুই নেই। সিরাপের মধ্যে আছে শুধু রং। আমাদের প্রত্যাশা, জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির আশঙ্কার বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার দ্রুত আদেশের মাধ্যমে অভিযুক্ত ওষুধ কোম্পানিগুলোর সুনির্দিষ্ট ওষুধ বাজার থেকে তুলে ফেলার উদ্যোগ নেবে। বলাবাহুল্য, সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করলেও এটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সক্রিয়তা জরুরী। যারা নকল ওষুধ তৈরির মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের মদদদানকারীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। যে কোন মূল্যে এই জনশত্রুদের মূলোৎপাটন করতেই হবে। এই কাজে বিলম্বের কোন সুযোগ নেই।
×