ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির বৈশাখী ও দেশের বিরোধী দল

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

সিডনির বৈশাখী ও দেশের বিরোধী দল

সিডনিতে বৈশাখী মেলা হয়ে গেল। এতবড় একটি আয়োজন সেখানে বঙ্গবন্ধুর নামে আনন্দ তো হবেই। বঙ্গবন্ধু কাউন্সিলের মেলাটি শহরের বিশাল যে স্টেডিয়ামে ও বাইরের খোলা চত্বরজুড়ে হয়েছে তার চেয়ে বড় ভ্যেনু সিডনিতে আর নেই। লোক সমাগমও ছিল চোখ ধাঁধানো। এ নিয়ে চটজলদি প্রতিক্রিয়াও ছাপিয়েছেন কেউ কেউ। অভিনন্দন এদের প্রাপ্য। সঙ্গে এটাও বলবো আয়োজন বিশাল, অনুষ্ঠান ছিল দায়সারা। বাংলাদেশীদের পকেটের ডলারে স্ফীত এই মেলার এতবড় আয়োজনের প্রধান গায়ক ছিলেন নচিকেতা। এটা উদারতা হলেও কথা থাকে। আমরা মনে করি আগে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ। আজ আমাদের জয়যাত্রায় মেধাবী মুখের ছড়াছড়ি। নিজের জাতি ও দেশের কথা ভাবতে হবে। মুখে বলে কাজে বহুজাতিকতার নামে নিজেদের জায়গা ছেড়ে দেয়া আগত মানুষ ভালভাবে নিতে পারেনি। তাছাড়া এতবড় আয়োজনে জাতির জনক কেবল একটি নাম বা ছবি নন তাঁর কিছু কাজ ও প্রচার দরকার। এই মেলাটির উদযাপন কমিটির সভাপতি শেখ শামীমুল হককে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের প্রত্যাশা যেন এ ধারাটি প্রবহমান থাকে। কারো উন্নাসিকতায় যেন ভাটা পড়ে না যায় এ উদ্যোগ। এটি এখন বিশ্ব বাঙালীর অহঙ্কার। ॥ ২ ॥ দেশ ভাল চললে আমাদের আনন্দের সীমা থাকে না। স্বাধীনতার এত বছর পর দেশ ভাল না চললে আর চলবে কখন? বিশ্ব অর্থনীতি বা রাজনীতির সার্কেল বলে সব দেশের সামনেই এগুনোর একটা সময় আসে। বলা যায় ধরা দেয়। আমরা যদি দুনিয়ার দিকে তাকাই একথা বলতে পারি পুবে এখন সূর্য উঠছে। পশ্চিমা বিশ্ব নামে পরিচিত একদা অর্থনীতি, রাজনীতি ও সভ্যতার সূতিকাগারে আজ সন্ধ্যা না হলেও অপরাহ্ণের ছায়া। তাদের আগের সে জৌলুস নেই। খবরদারিও কমে এসেছে। আগে তারা একটা হাঁক দিলে আমরা সুড় সুড় করে গর্তে ঢুকে যেতাম। লর্ড ক্লাইভ বা লর্ড কার্জন এখন থাকলে পালিয়ে বাঁচতেন। আগের সেদিন নেই সাহেবদের। তলে তলে ষড়যন্ত্র আর টাকা ছিটিয়ে দালাল বশ করে পরাজিত করার কাল শেষ। বিশ্বাস না হয় তো আমাদের দিকে তাকান। এই যে আমরা শুনি প্রধানমন্ত্রী আমেরিকান লাল মুখো সাহেবদের কথা কানে না তুলে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন, সেটা কি আগে কখনও ভাবা যেত? যেত না বলব না। তবে সেজন্য কাঠ খড় পুড়িয়ে দাদা বা বড় ভাইয়ের হাত ধরে কাজ সারতে হতো। তাই তো ঘটেছিল একাত্তরে। নিক্সন দাদা কিসিঞ্জার ভাই গং আর চৌ চাচার বিরুদ্ধে লড়তে আমরা ব্রেজনেভ কাকা, নিকোলাই কোসিগিন ও ইন্দিরা জীর হেল্প নিয়েছিলেম। এখন আর তা লাগে না। এখন আমরা তো আমরা বোমা আর ড্রোনের মুখে দাঁড়িয়ে আফগানীরাও বলে পারলে আবার মারতো দেখি? নিজেদের জায়গাটা নিজেরাই নষ্ট করেছে তারা। বাচ্চাকে বারংবার ভূতের ভয় দেখালে কি হয়? প্রথম প্রথম ভয় পায়, কাঁদে. বিছানায় হিসি করে দেয়। পরে বাচ্চারা নিজেরাই ভূত ভূত খেলে। ভয় দেখানোর দিন এভাবেই শেষ হয়ে যায়। আমাদের দেশে ভয় তাড়ানোর নানা পথ আর পন্থা কাজ করার পরও ভূতের ভয় যাচ্ছে না। বিদেশী ভূতকে যতটা ভয় তার চেয়ে বেশি আছর করছে দেশী ভূত। ইদানীং দেখছি উপাসনালয়গুলো টার্গেট। এটা যে কিছু উর্বর মস্তিষ্কের কাজ সেটা পাগলেও বোঝে। তবে দুঃখটা হলোÑ কেউ জানে না কোথায় কি ঘটছে! কেন জানেন তো? রাজনীতি। একদল আরেক দলকে সায়েস্তা করতে না পারলেই এসব করে। পুরনো খেলা কিন্তু কায়দাটা নতুন। হয়েছে কি মানুষের এখন মিছিলে যাবার সময় নেই। টাকা দিলেও সেøাগান দেয়ার লোক নেই। বিএনপি কি আর এমনি এমনি মার খাচ্ছে? বিরোধী দলে আওয়ামী লীগ থাকলে এতটা না হলেও কাছাকাছি অবস্থানে থাকত। এ যেন এমনÑ হালুয়া রুটি হলেই হয় না এখন মাখন পনিরও চাই। তবে যদি মানুষ জড়ো করা যায়। বিএনপির কাছে লোভ বা প্রতিশ্রুতি আছে হালুয়ার গ্যারান্টি নেই। তাই মানুষও নেই। জনগণের এই মানসিকতার কারণে এখন আর কোন আন্দোলন হবার সম্ভাবনা নেই। ফলে চলছে যা তা চলবে। এই চলার জায়গাটা এতটা পচেছে যে, এখন নিয়ম করে আক্রমণ করাও অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। পূজার আগে মূর্তি ভাঙ্গা সংখ্যালঘু নির্যাতন মহররমের আগে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিতে বোমা খ্রীস্টানদের বড়দিনের আগে শুরু হয় তাদের ওপর আক্রোশ। রামুতে আহত বুদ্ধ তো আছেনই। এটা মানতে হবে একা কেউ সবকিছু করে না, করতে পারে না। আক্রমণকারীরা একা নয়। কিন্তু সরকার একা। তার সঙ্গে প্রশাসন আছে কিন্তু রাজনীতি নেই। রাজনীতিতে শক্তিশালী একটা বিরোধী দলের দরকার আছে। ডলার পাচার, শফিক রেহমান, তনু, বাঁশখালী নানা বিষয়ে সরকার ও জনগণ মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে। শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলে এটা হতো না। বিষয়টা ভাবনার। ভেবে এখন সিদ্ধান্ত নিলে আওয়ামী লীগের জন্যই মঙ্গলের হবে। না হলে একা খেলায় দিন গেলে আসল টাইমে আর খেলা হবে না। খেলা ভুলে হেরে যাওয়ার লজ্জা মাথায় নিতে হবে। জাসদ বাসদ বাম রাম বিএনপি জামায়াত ফেল। দালালে দালালে রাজনীতি ভরপুর। একমাত্র উদ্ধার আছে তারুণ্যের কাছে। সেখানে বড় গোলমাল আর পথের দিশাহীনতা। তবে কি আমরা মিসর বা তেমন কোন দেশের মতো হতে চাই না পাশের দেশগুলোর মতো হয়ে নিজে বাঁচব অন্যকেও বাঁচতে দেব? অন্তত দেশের জন্য এটা না হলে ডিজিটাল আঁধার হতে পারে একদিন ভয়াবহ।
×