ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটেন সফরের শুরুতেই বিতর্কে জড়ালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট

ইইউতে থাকুন ॥ ওবামা

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

ইইউতে থাকুন ॥ ওবামা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর যুক্তরাজ্য সফরের শুরুতেই শুক্রবার ব্রিটেনের ইইউ সদস্যপদ সম্পর্কিত তিক্ত বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগ করার প্রস্তাবের বিপক্ষে জোরালো ভাষায় বক্তব্য রাখেন। ইইউ বিরোধীদের ঐতিহ্যবাহী মুখপত্র ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় তিনি লেখেন যে, ব্রিটেনের উচিত ২৩ জুনের গণভোটে ইইউতে থাকার পক্ষে ভোট দেয়া। তার মতে, ইইউতে ব্রিটেনের সদস্যপদ বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব প্রসারিত করছে। প্রেসিডেন্ট তিন দিনের যুক্তরাজ্য সফরে বৃহস্পতিবার সেখানে পৌঁছান। কিন্তু ওবামার মন্তব্যের প্রতি ইইউবিরোধীরা কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাদের পক্ষের প্রচার সংগঠন ভোট লিভের সমর্থক বরিস জনসন সান পত্রিকায় লিখেছেন, যুক্তরাজ্যকে এর গণতন্ত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ ব্যাপক মাত্রায় অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবেÑ যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের উদ্দেশে এ কথা বলা ‘আমি যা করি, তা নয়, আমি যা বলি তাই করুন’ নীতির এক বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত। ব্রিটেনের আসন্ন গণভোটে ওবামার হস্তক্ষেপ উত্তপ্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং যারা ইইউ ত্যাগ করতে চান তারা তার বিরুদ্ধে ‘কপটতার’ অভিযোগ এনেছেন। খবর বিবিসি, এএফপি ও ডেইলি মেইলের। অবশ্য প্রেসিডেন্ট ওবামা স্বীকার করেন যে, ইইউতে থাকা বা না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ ভোটারদেরই বিষয়। কিন্তু তিনি এ কথাও বলেন যে, আপনাদের সিদ্ধান্তের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গভীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়। তিনি বলেন, ইউরোপের সমাধিগুলোতে হাজার হাজার আমেরিকানের শায়িত থাকা থেকেই আমাদের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা সত্যিকার অর্থে কতখানি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত তার নীরব সাক্ষী। তিনি বলেন, এখন আপনারা যে পথ অনুসরণ করবেন, তা আমেরিকার আজকের প্রজন্মের ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলবে। ওবামা আরও বলেন, ইইউ ব্রিটিশ প্রভাবকে ক্ষুণœ করবে না, প্রসারিতই করবে। শক্তিশালী ইউরোপ ব্রিটেনের বিশ্ব নেতৃত্বের প্রতি কোন হুমকি নয়, এটি বিশ্বে ব্রিটেনের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য ইইউতে অবস্থান করে কর্মসংস্থান, বাণিজ্য ও আর্থিক প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে উপকৃত হয়েছে। ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে একত্রে থাকলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের লড়াই করার সামর্থ্য আরও কার্যকর হবে। তিনি লেখেন, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানের চুক্তি সম্পাদন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ ধরনের সহযোগিতা যদি ইউরোপজুড়ে প্রসারিত হয়, তাহলে সেটি আরও বেশি কার্যকর হবে। এখন বন্ধু ও মিত্রদের একতাবদ্ধ থাকার সময়। কিন্তু রক্ষণশীল রাজনীতিক বরিস জনসন ওবামার যুক্তিকে ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ এবং ‘ডাহা কপটতাপূর্ণ’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমেরিকানরা কখনও নিজেদের জন্য বা তাদের নিজস্ব গোলার্ধে ইইউর মতো কোন কিছুর কথা ভাবে না। তারা সেটি আমাদের জন্য সঠিক এমন কেন মনে করে? বাইরের চেয়ে ইইউতেই যুক্তরাজ্যের বেশি প্রভাব রয়েছে এ ধারণাকে জনগণ ‘অর্থহীন’ বলে অভিহিত করেন। জনসন লেখেন, গত পাঁচ বছরে ব্রাসেলসে যুক্তরাজ্যের প্রস্তাব ৪০ বার ভোটে বাতিল হয়ে যায়। এসব পরাজয়ের কারণে যুক্তরাজ্যের সরকার ও ব্যবসায়ীদের বছরে ২৪০ কোটি পাউন্ড বাড়তি খরচ হয়। সাবেক কেবিনেট মন্ত্রী লেইন ডানকান স্মিথ যখন যুক্তরাষ্ট্র উন্মুক্ত সীমান্ত গ্রহণ করছে না, তখন ব্রিটেনকে তা মেনে নিতে বলার কড়া প্রতিবাদ করেন। মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গে স্বাক্ষরিত নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এ্যাগ্রিমেন্টের অন্যতম পক্ষ। কিন্তু মেক্সিকোর নাগরিকরা আমেরিকাতে আপনা আপনিতেই প্রবেশের কোন অধিকার পায় না অথচ ইইউর ৫০ কোটি নাগরিক ব্রিটেনে অবাধে আসতে পারেন। ডানকান স্মিথ বলেন, আমার কাছে এটি আশ্চর্য লাগে যে, তিনি ব্রিটিশ জনগণকে এমন এক পরিস্থিতি মেনে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন, যা তিনি আমেরিকান জনগণের জন্য সুপারিশ করবেন না। ওবামাকে দ্বৈত নীতি অনুসরণের দায়ে অভিযুক্ত করে ঐ টোরি পার্লামেন্ট সদস্য বলেন, আমি এমন কোন পরিস্থিতির কথা কল্পনাও করতে পারি না, যেখানে তিনি মার্কিন সুপ্রীমকোর্টের কোন বিদেশী আদালতের রায় মানতে বাধ্য থাকার পক্ষে লবিং করবেন।
×