ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাসনাত মোবারক

পেশার সঙ্গে পসরা সাজিয়ে

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ২২ এপ্রিল ২০১৬

পেশার সঙ্গে পসরা সাজিয়ে

ধ্যানে আর জ্ঞানে, চিরায়ত প্রথার টানে ফিরে যাই আমরা সোাঁদা মাটির কোলে। যে মাটিতে রয়েছে গন্ধ। বছরে অন্তত একটিবার হলেও আমরা সন্ধান করি ইতিহাস আর ঐতিহ্যের। ডামাঢোল পিটিয়ে আসি। বাংলা বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসেছে মেলা। নামে আর ধামে কতই না বাহারি আয়োজনে আয়োজিত এই বর্ষবরণ উৎসব। মেলা মানে অনেক, বহুল আর বিপুল মানুষের সমাগম। হৃদয়ে হৃদয়ে সখ্য বিনিময় শেষে ঘরে ফেরা। সামাজিক সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে এই উৎসবগুলো। এখন কথা হলো, কী থাকে বৈশাখী উৎসবগুলো? এক কথা বলতে হয় কী থাকে না বৈশাখের গ্রামীণ মেলাগুলোতে। সাংসারিক প্রয়োজনের তাবৎ জিনিস নিয়ে পেশার সঙ্গে পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন দোকানিরা। এসব মেলায় প্রদর্শনীর সঙ্গে সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমও ব্যাপক। ঘর-গৃহস্থের প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করার মাধ্যমও এই মেলাগুলো। রাজধানী শহরের প্রাণকেন্দ্র বাংলাভাষা সংস্কৃতির লালনচত্বর নামে খ্যাত বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়ে আসছে বৈশাখীমেলা। এ বছর মানে ১৪২৩ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নেয়ার জন্য এই বৈশাখীমেলা বসেছে ২ বৈশাখ থেকে। আয়োজন চলবে ১০ বৈশাখ পর্যন্ত। কারুর সঙ্গে চারুর। রঙের সঙ্গে মন মিশিয়ে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছে ১৫০টি স্টল। ৫ বৈশাখ সন্ধ্যায় আত্মিক নিবৃত্তি মেটানোর প্রয়াসে বন্ধুস্থানীয় ইসমত শিল্পীর সঙ্গে উপস্থিত হই একাডেমি চত্বরে। দুপুরের তপ্ত রোদে কিছুটা হাঁপিয়ে উঠছি। বাংলা একডেমির নজরুল মঞ্চের বনিয়াদি বৃক্ষের সবুজ পাতার ছায়ায় জুড়িয়ে নিলাম কায়া। অনতিদূরে সাজানো হয়েছে লোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ। নজরুল মঞ্চের উত্তর পাশেই সারি সারি দাাঁড়িয়ে আছে লোকজ শিল্পের পসরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত এসব স্টল ঘুরে ঘুরে দেখতে পাই হরেক রকমের তৈরিকৃত তৈজসপত্র। বাঁশ-বেতের গন্ধে মাতোয়ারা মনে ঘুরলাম, দেখলাম আয়োজিত এই মেলা। দক্ষ হাতের সেই নিপুণ কারিগরদের তৈরিকৃত জিনিসপাতি নেড়ে দেখলাম। লোকশিল্পের এই দোকানগুলোতে অধিকাংশ দোকানিরাই মহিলা। যে মহিলারা নিজ হাতে তৈরি করেছেন এসব জিনিসপাতি। এসব দোকানিদের সঙ্গে কথা হলো তাদের ভূত-ভবিষ্যত নিয়ে। খুব একটা সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া গেল না। পেশা নিয়ে রয়েছে আশঙ্কা। ঝকমারি আয়োজনে কর্পোরেট হাউস তথা পুঁজিপতিদের তাবেদারিতে টিকে থাকবে কী এই গ্রামীণ লোকশিল্প। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো লোকগানের আসর। যে আসরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত শিল্পীর সুরের মূর্ছনায় মূর্ত দর্শকবৃন্দ। এসব লোকগানের গভীরতম বার্তাটি ছুঁয়ে যায় শ্রোতার হৃদয়। হৃদয়ের গভীর ভাবাবেগ আঁকিবুঁকি করেছে এই লোকগানের আসরে। লোককথা আর লোকগল্পের সঙ্গে সঙ্গে গান গেয়ে চলছেন এই শিল্পীরা। সামাজিক রীতি, আচার বিশ্বাস সবই উপস্থাপন ছিল এই উৎসবে। বিস্ময়াভূত হয়েছি তাদের গান শুনে। শিল্পীদের প্রজ্ঞা আর মেধা দেখে দাগ কেটেছে মনে।
×