আজকাল খুব শোনা যায় কিছু কথা। প্রিয় মানুষটি অবহেলা করছে বা তাদের ব্রেক আপ হয়ে গেছে এতে ছেলে বা মেয়েটির পড়াশোনা হচ্ছে না। কিছু খেতে পারছে না, ঘুমোতে পারছে না! জীবনের ওপর থেকে মায়া উঠে যাচ্ছে! তারা তাদের প্রিয় মানুষটির আচরণে এতই কষ্ট পেয়েছে যে এতদিন যে বেঁচে থাকা খুব আনন্দের ছিল তা এখন দুর্বিষহ মনে হচ্ছে । কেউ কেউ আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্তও নিচ্ছে! যেন প্রিয় মানুষ নেই মানে তারা তাদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে! কেন এমন হয়? মানুষ যখন কাউকে ভালবাসে তাকে ভেবে নেয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ! সে সম্পূর্ণরূপে ঐ মানুষটির কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে চায়! তার ধ্যান জ্ঞান হয়ে দাঁড়ায় একমাত্র সেই মানুষটি! বাবা, মা, ভাই, বোন, বন্ধু সবার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেন সেই মানুষটি! মানুষটি ভাল ব্যবহার করলে সে খুশি, খারাপ ব্যবহার করলেই ভয়ঙ্কর কষ্ট! আর ছেড়ে চলে গেলে তো পৃথিবী শূন্য! একজন বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের ভাললাগা, খারাপ লাগা সবকিছু যেন একটা মানুষের ইচ্ছে, অনিচ্ছের ওপর নির্ভর করে! কেন এটা হতে হবে! কেন একজনের জীবন গাড়ির চাবি থাকবে আরেকজনের কাছে? কেন সে চাইলেই আপনাকে কষ্টে ফেলবে আবার চাইলেই সুখে ভাসাবে? এই অধিকার তাকে কে দিয়েছে? যারা এমন সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন তারা একবার ভেবে দেখুন কে দিয়েছে আপনার প্রিয় মানুষকে এই অধিকার? উত্তরে নিজের নাম পেয়ে চমকে উঠলেন? জী, আপনি দিয়েছেন আপনার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবার এই অধিকার। কাউকে ভালবাসুন ক্ষতি নেই। খেয়াল রাখুন ভালবাসা মানে নিজেকে বিক্রি করে দেয়া না। সে আপনাকে ভালবেসে এমন কোন মহৎ কাজ করেনি যে সে যা বলবে যেভাবে বলবে আপনি সেভাবেই চলবেন। মনে রাখবেন, আপনি স্পেশাল বলেই সে আপনাকে অন্যদের ভেতর থেকে বেছে নিয়েছে! আপনার ক্ষেত্রেও তাকে বেছে নেয়ার পেছনে এটাই যুক্তি! তাই বলে কেউ কাউকে হুকুমের গোলাম ভেবে নেবার কোন অধিকার কারও নেই। প্রতিটি মানুষই তার নিজস্বতাকে নিয়ে বড় হয়। দোষ ত্রুটি মিলিয়েই মানুষ। ভালবাসার শুরুতে যে মানুষটি আপনার গুণমুগ্ধ ছিল, সে যদি আপনাকে পাবার পর থেকে আপনার নানা দোষ খুঁজে বের করে এবং সে অনুযায়ী আপনাকে দোষারোপ করে বা পরিচালনার চেষ্টা করে জেনে রাখুন আপনি ভুল মানুষকে ভালবেসেছেন। কথায় কথায় অবহেলা করা, অসম্মান করা মানুষটি আর যাই হোক আপনাকে সম্মান করে না। সম্মানহীন ভালবাসাকে ভালবাসা না বলে ব্যবহার করা শব্দটি বলা যায়। আপনি কেন কারও ব্যবহার্য বস্তু হতে যাবেন? প্রিয় মানুষ আপনাকে সত্যিকার ভালবাসলে কখনোই অবহেলা করবে না! তুচ্ছ কারণে ছেড়ে চলে যাবে না। আর যদি সে এটা করে তবে সে কখনোই আপনার জন্য সঠিক ছিল না। কেন তার জন্য নিজের সব আনন্দ বিসর্জন দেবেন? কেন নিজের পড়াশোনা, ক্যারিয়ার ধ্বংস করবেন? আপনার আশপাশে তাকিয়ে দেখুন! আপনার মমতাময়ী মা আছেন, প্রিয় বাবা আছেন, আদরের ভাই-বোন আছেন, বন্ধুরা আছেন! যারা আপনাকে ভালবাসে, সম্মান করে, তাঁদের জন্য বাঁচুন, নিজের জন্য বাঁচুন! যে কারণে-অকারণে কষ্ট দেবার খেলা খেলে তার হাত থেকে জীবনের চাবিটি নিয়ে নিন! তাকে বুঝিয়ে দিন এভাবে আর না। বুঝিয়ে দিন, সে আপনাকে সম্মান না করতে পারলে তার আগে আপনিই তাকে ছেড়ে দেবেন।
আপনার মন নিয়ে তাকে আর খেলতে দেবেন না। আপনার কোন ভুল হলে বা তার কোন ভুল হলে তা শোধরাবার কথা বলবার সুযোগ অবশ্যই দুজনের আছে। সে অধিকার ভালবাসার বলে মানুষ পায়। তাই বলে সেই অধিকারের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন কারও জীবন নিয়ে খেলবার সুযোগ না পায়! তাই সম্পর্ককে সুন্দর এবং দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে, নিজের জীবন গাড়ির স্টিয়ারিং নিজের হাতেই রাখুন! প্রিয় মানুষকে ভালবাসুন, সম্মান করুন, তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করুন! কিন্তু কখনোই আত্মসম্মান খুইয়ে নয়। একবার আত্মসম্মান খোয়ালে তা উদ্ধার করা খুব কঠিন! আত্মসম্মান যথাযোগ্য থাকুক যে কোন সম্পর্কেই। সেটা ইগো না হয়ে উঠুক! ভালবাসুন, ভালবাসা গ্রহণ করুন নিজেকে না বিকিয়ে! দিন শেষে হাসিমুখে থাকুক সম্পর্কগুলো! অবহেলা, ছেড়ে যাবার কষ্ট পালিয়ে যাক ভালবাসা নামের মহাশক্তিধরের ভয়ে! ভালবাসা সবার জন্য!
শীর্ষ সংবাদ: