ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দশ দফা গুপারিশ

তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন নিশ্চিত প্রকল্পে অগ্রগতি সন্তোষজনক ॥ টিআইবি

প্রকাশিত: ০৭:২১, ২২ এপ্রিল ২০১৬

তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন নিশ্চিত প্রকল্পে অগ্রগতি সন্তোষজনক ॥ টিআইবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তৈরি পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিতকল্পে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ধানম-িতে মাইডাস ভবনে ‘তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন : অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করে সংস্থাটি। এছাড়া এখাতে থাকা চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় দশ দফা সুপারিশও দিয়েছে টিআইবি। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবি’র রিসার্চ এ্যান্ড পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনজুর-ই-খোদা। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ এ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান এবং সহকারী প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা প্রমুখ। ড. ইফতেখারুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, গত তিন বছরে পোশাক খাত গর্ব করার মতো স্থানে এসেছে। এটি বৈশ্বিক স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। তবে কাগজপত্র, আইন ও বিধিমালায় যেসব অগ্রগতি এসেছে, সেগুলো প্রয়োগ করা ও অব্যাহত রাখা জরুরী। এর পাশাপাশি যেসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়নি, সেগুলোর ওপর নজর দিতে হবে। রানা প্লাজা ধসের পর অপরাধীদের বিচারকাজ ধীরগতিতে চলছে বলে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে উদাহরণ তৈরি করা না গেলে অপরাধ ঘটতেই থাকবে। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে সূচকে গৃহীত ১০২টি উদ্যোগের মধ্যে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৭৭ শতাংশ উদ্যোগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। তবে বাকি ২৩ শতাংশ উদ্যোগের ক্ষেত্রে ধীরগতি রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন স্থবির হয়ে পড়ায় পোশাক খাতে সার্বিক সুশাসন অর্জনে সকল পক্ষের সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রয়াস গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে। টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ সকল উদ্যোগের বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনায় টিআইবি ধারাবাহিকভাবে গবেষণা পরিচালনা করে আসছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে পরিচালিত টিআইবি’র ‘তৈরি পোশাক খাত : সুশাসনের সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের তৃতীয় ফলোআপ হিসেবে বর্তমান গবেষণাটি ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত হয়। গত এক বছরের পর্যালোচনায় দেখা যায় চলমান ৬৮টি উদ্যোগের ক্ষেত্রে ৬টি উদ্যোগ সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, ৩৯টি উদ্যোগ বাস্তবায়নে সন্তোষজনক অগ্রগতি, ১০টি উদ্যোগ বাস্তবায়নে ধীর গতিসম্পন্ন এবং ১৩টি উদ্যোগ বাস্তবায়নে স্থবিরতা পরিলক্ষিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৬ মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন, ইপিজেড শ্রমিকদের আইনগত সুবিধা প্রদানে ইপিজেড শ্রম আদালত ও শ্রম আপিলেট ট্রাইব্যুনাল গঠন, এবং শ্রম বিধিমালা-২০১৫ পাসসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে প্রায় ৯৫ শতাংশ কারখানায় মজুরি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি দিচ্ছে। অধিকাংশ কমপ্লায়েন্স কারখানায় শ্রমিকদের জরুরী নম্বরসহ পরিচয়পত্রও দেয়া হয়েছে। বিজিএমইএ শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট-এর ‘সিপ’ প্রকল্পের আওতায় শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ পরবর্তী চাকরির ব্যবস্থা করে আসছে এবং বিশ্ব ব্যাংকের ‘স্টেপ’ ও ‘নারী’ প্রকল্পের আওতায় ট্রেনিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে কারখানাগুলোতে নিয়মিত অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে ক্স্যাশ কোর্স পরিচালনা করছে। সেই সঙ্গে কারখানা শ্রমিকদের সমন্বিত ডাটাবেজ গঠনের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সহায়তার উদ্দেশ্যে গঠিত বিভিন্ন তহবিল থেকে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ইউএস ডলার সফলভাবে বিতরণ করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাক খাতের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পরও কিছু অসুবিধাও রয়ে গেছে। গবেষণায় সুশাসনের যেসকল চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে কারখানা পর্যায়ে শ্রমিকদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি, হেলপার পদে আইনানুগ সুবিধা ছাড়া শ্রমিক ছাঁটাই ও ট্রেড ইউনিয়নের সাথে জড়িত শ্রমিকদের হয়রানি, মামলা বা চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে জবাবদিহিতার ঘাটতি, কোন কোন কারখানায় অতিরিক্ত এক ঘণ্টা কোন প্রকার মজুরি ছাড়া কাজ করানোর অভিযোগ, নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতার কারণে অনেক কারখানা মালিকের নারী শ্রমিকদের জন্য রাত্রিকালীন কাজ না করানোর সিদ্ধান্ত উল্লেখযোগ্য। তৈরি পোশাক খাতে গৃহিত উদ্যোগ সমূহকে সফলভাবে বাস্তবায়ন ও সুশাসন নিশ্চিতকরণে টিআইবি দশ দফা সুপারিশ করেছে এই প্রতিবেদনে। উল্লেখযোগ্য সুপারিশসমূহ হলো- তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রীভূত তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন, যে সকল কারখানা বিজিএমইএ বা বিকেএমইএ’র সদস্য নয় তাদের টেকনিক্যাল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা, এবং তা দ্রুত বাস্তবায়ন। রানা প্লাজা ও তাজরিন দুর্ঘটনায় দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলা বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা। যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিক ডাটাবেজ গঠন, পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত সব ধরনের কারখানার সমন্বিত তালিকা তৈরি করা। দ্রুত সাব-কন্ট্রাক্টিং গাইডলাইন তৈরি, শ্রম পরিদফতরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমিক সংগঠন ও যৌথ দরকষাকষির অধিকার নিশ্চিতে নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা। সম্পদের হিসাব ওয়েবসাইটে আছে ॥ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিআইবি ও তার ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব ওয়েবসাইটে আছে। তিনি বলেছেন, যে কেউ ওয়েবসাইট থেকে এ হিসাব দেখে নিতে পারেন। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে টিআইবির সম্পদের বিবরণ প্রকাশের দাবি জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেছেন, টিআইবি সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করে এটা প্রমাণ করুক যে তারা তাদের চিলি শাখার মতো দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল চিলি শাখার প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের প্রেক্ষাপটে ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ জয় এ দাবি জানান।
×