ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইরান, মানবাধিকার ও সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই

ওবামা-বাদশাহ সালমান ব্যাপক মতপার্থক্য

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ২২ এপ্রিল ২০১৬

ওবামা-বাদশাহ সালমান ব্যাপক মতপার্থক্য

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বুধবার রিয়াদে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, বৈঠকটি আন্তরিক ছিল। কিন্তু ইরান, মানবাধিকার ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সর্বোত্তম পন্থা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক মিত্র সৌদি আরবের সঙ্গে সৃষ্ট সাম্প্রতিক উত্তেজনা প্রশমনেই ওবামা দুইদিনের রিয়াদ সফরে যান। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের। মার্কিন কংগ্রেসে ৯/১১ হামলাবিষয়ক প্রস্তাবিত আইন নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। এ বিল পাস হলে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ার হামলায় হতাহতদের পরিবার সৌদি আরবের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে। এই হামলার সঙ্গে জড়িত ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই সৌদি নাগরিক। বিলটি পাস হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭৫ হাজার কোটি ডলারের বন্ডসহ বিনিয়োগ তুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছে সৌদি আরব। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, রিয়াদের ইরগা প্রাসাদে অনুষ্ঠিত বাদশাহ সালমানের সঙ্গে ওবামার বৈঠকে ১১ সেপ্টেম্বর হামলার বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি। ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক বিষয়ে আরও যৌক্তিভাবে সম্পৃক্ত হতে এবং ইরানী ও ওই অঞ্চলের অন্য নেতাদের সরাসরি মোকাবেলার পরিবর্তে বিকল্প খুঁজতে সৌদি বাদশাহর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওবামা। বাদশাহর ইরানের সঙ্গে কাজ করার প্রচেষ্টা নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা অত্যন্ত সংশয়ী। এই অঞ্চলে সৌদি আরবের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলো ইরান। বৈঠকে ওবামার তার দৃষ্টিভঙ্গি পুর্নব্যক্ত করে বলেছেন, সৌদি আরব ও অন্য পারস্য দেশগুলোর তাদের নিজের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কম নির্ভর করা উচিত। মার্কিন ম্যাগাজিন দি আটলান্টিকের সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে একই মন্তব্য করেছেন ওবামা। বৈঠকের পর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওবামা ও বাদশাহর মধ্যে মতৈক্যে পৌঁছা চুক্তিগুলোর ওপর জোর দিয়েছে হোয়াইট হাউস। তারা তাদের দুই দেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক মিত্রতা ও গভীর কৌশলগত অংশদারিত্বের বিষয় পুর্নব্যক্ত করেছেন। তবে বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দুই নেতা কিছু বিষয়ে শুধু মতো বিনিময় করেছেন। এতে করে ওই বিষয়গুলোতে দুই নেতার মধ্যে মতৈক্যের ঘাটতি প্রকাশ পেয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকা সিনিয়র এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যতে স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে অনুরূপ লক্ষ্য রয়েছে দুই দেশের। তবে উভয় পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে কৌশলগত মতপার্থক্য আছে। সৌদি আরব শুধুমাত্র বল প্রয়োগের মাধ্যমে সন্ত্রাসের হুমকি মোকাবিলা করতে চায়। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি পথ অবলম্বন করতে চায়, যেখানে ওই অঞ্চলের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ওবামা সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও শিরñেদ ইস্যু নিয়ে সমালোচনা করলে ওই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এসময় সৌদি বাদশাহ বার বার সৌদি বিচার ব্যবস্থা সমর্থন করেন। বৃহস্পতিবার ছয় উপসাগরীয় আরব দেশের সম্মেলনে যোগ দেয়ার আগে ওবামা পৃথকভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তারা ইয়েমেন যুদ্ধ, ইসলামিক স্টেট (আইএস), ইরানের এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী কার্যক্রম ও লিবিয়ার অরাজক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এদিকে সৌদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লক্ষ্য করেছে যে, পারস্য উপসাগীয় দেশগুলোর প্রধানদের বিমানবন্দরে বাদশাহ সালমানের স্বাগত জানানোর সংবাদ সরাসরি সম্প্রচার করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। অপরদিকে ওবামাকে স্বাগত জানান রিয়াদের গবর্নর এবং তা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়নি। কিন্তু মাত্র এক বছরেরও কিছু বেশি সময় আগে সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ওবামা সৌদি সফরে গেলে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল আল-ইখবারিয়া তা সরাসরি সম্প্রচার করেছিল।
×