ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইউপি নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা দেখতে চান না প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২২ এপ্রিল ২০১৬

ইউপি নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা দেখতে চান না প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউপি নির্বাচনে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতারোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকীবউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাত করে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইসিকে এ বিষয়ে আরও কঠোর ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চলমান ইউপি নির্বাচনে কোন ধরনের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দেখতে চান না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত করে প্রধানমন্ত্রীর এমন বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এমন বার্তাকে স্বাগত জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও। সামনের দফায় নির্বাচন আরও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীরা যাতে সামনের নির্বাচনে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইউপি নির্বাচনে যাতে সন্ত্রাসী কর্মকা- ও বাড়াবাড়ি না করে এমন নির্দেশনা দেয়ার জন্য দলের হাইকমান্ডকে অনুরোধ জানিয়েছে ইসি উল্লেখ করেন তিনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের আরও বলেন, নির্বাচনে কোন ধরনের অনিয়ম, ত্রুটি বিচ্যুতি হলেই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদেরও এ বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হবে। নির্বাচনের আগেই মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও নির্দেশনা দিয়ে রাখা হবে। কোথাও কোন অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দিতে না পেরে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। তারা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। নির্বাচন বানচালেরও চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ কারণেই তারা নির্বাচনে ভাল প্রার্থী দিচ্ছে না। নির্বাচনকেও গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে পাখি শিকার করতে চাইছে। নির্বাচনে বিএনপির ষড়যন্ত্র সম্পর্কেও সতর্ক থাকার জন্যে ইসিকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ইসি আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে তাতে আওয়ামী লীগেরও সহযোগিতা থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান না ইউপি নির্বাচনে অনিয়ম, সহিংসতা হোক। এ কারণেই কমিশনকে আরও কঠোর হতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুই দফায় নির্বাচনে প্রায় ১ হাজার ৪শ’ ইউনিয়নের ১৩ হাজারের বেশি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে ৫০-৬০টি কেন্দ্রে ঝামেলা হয়েছে। এটা খুব বেশি কিছু নয়। বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। আগামীকাল তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে হানিফের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি, দলের দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ। সামনের দফায় ইউপি নির্বাচন আরও সুষ্ঠু হবে ॥ ইসি এদিকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, গত দুই ধাপের চেয়ে সামনের ধাপের নির্বাচন অনেক বেশি সুষ্ঠু হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা নিয়ে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে এসেছিল। প্রধানমন্ত্রীর এ বার্তাকে স্বাগত জানাই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হবে। আমরা আওয়ামী লীগকে বলেছি, দলটি যেন স্থানীয় নেতাদের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করার নির্দেশ দেন। স্থানীয় নেতারা যেন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সাহায্য করে। দলের নেতাকর্মীরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যাতে সন্ত্রাসী কর্মকা- ও বাড়াবাড়ি না করে এমন নির্দেশনা দেয়ার জন্য দলটির হাইকমান্ডকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দু’ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে কিছু অনিয়মও হয়েছে। কমিশন এ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। আগামীকাল তৃতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে সন্ত্রাসী ও বেআইনী কর্মকা-ের কোন ছাড় দেয়া হবে না। এবার আরও কঠোর হবো। দলমত নির্বিশেষে সবার উদ্দেশে বলতে চাই, সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না। অনিয়মকারী প্রশ্রয় পাবে না। একইসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা অনিয়ম করলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছে কমিশন। যদিও উত্তরোত্তর নির্বাচন ভাল হচ্ছে তবুও আগের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও শক্ত অবস্থান নেবে। তৃতীয় ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশেই সম্পন্ন করা হবে। আগের চেয়ে এ ধাপের নির্বাচন আরও সুন্দর হবে। আগের দুই ধাপ থেকে কমিশন যথেষ্ট শিক্ষা নিয়েছে। সামনের ধাপগুলোতে ভুল কম হবে। আশা করি সন্ত্রাস সহিংসতা হবে না। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
×