ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শফিক রেহমানকে আজ আদালতে হাজির করে ফের রিমান্ড চাইবে ডিবি

লন্ডন ষড়যন্ত্র ॥ জয় হত্যা চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২২ এপ্রিল ২০১৬

লন্ডন ষড়যন্ত্র ॥ জয় হত্যা চেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যা চেষ্টার ষড়যন্ত্রের শিকড় অনেক গভীরে। সাংবাদিক শফিক রেহমান যুক্তরাষ্ট্রে বৈঠকে মিলিত হওয়ার পর লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী তদন্তকারীরা অনুসন্ধান শুরু করেছেন যে, নেপথ্যে থেকে এই ঘটনায় কলকাঠি নাড়িয়েছেন বিএনপির হাইকমান্ড ও লন্ডন ষড়যন্ত্র। যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই শেখ হাসিনার ওপর প্রতিশোধ নিতে জয় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার পরিকল্পনার প্লট তৈরি পর্ব শুরু হয়। এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন কারাবন্দী দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানও। এ বিষয়ে গুরুত্বপর্ণ তথ্য পাওয়ার পর সাংবাদিক শফিক রেহমানকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার আদালতে হাজির করে আবারও ফের ৭ দিনের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানাবে ডিবি। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেফতারের বিষয়টি মিথ্যা, কাল্পনিক, মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ এমন অপপ্রচার চালানোর জন্য দেশ-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ডিবি সূত্র জানায়, সাংবাদিক শফিক রেহমানের ৫ দিনের রিমান্ড শেষ হয়ে যাবে শুক্রবার। শুক্রবারই তাকে হাজির করা হবে আদালতে। ফের তাকে রিমান্ডে চাওয়ার জন্য আবেদন জানাবে তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার কাছ থেকে জয় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার পরিকল্পনা সংক্রান্ত বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে আদালতে রিমান্ডের আবেদনে জানানো হবে। সাংবাদিক শফিক রেহমানকে ৫ দিনের রিমান্ডে আনার পর তার বাড়ি থেকে এফবিআইয়ের নথিপত্র জব্দ, ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হওয়া, জয় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়াসহ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ডিবি সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয় নিজেই। তখন বিএনপির হাইকমান্ড যে তার ক্ষতি করতে পারে তাও জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে। ২০১৫ সালে জয় ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে এসব তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। এমনকি বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রে সাজাপ্রাপ্ত সিজারকে মাসে ৪০ হাজার ডলার দিয়ে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান জয়। এতে বিএনপির হাইকমান্ড ও নেতৃত্ব যে এই ঘটনায় জড়িত তার স্পষ্ট ইঙ্গিত গত বছর থেকেই প্রকাশ পেতে থাকে। এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে। ডিবি সূত্র জানায়, জয় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার পরিকল্পনায় আগে জড়িত হন কারাবন্দী দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি গ্রেফতার হওয়ার আগে যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর মাহমুদুর রহমান তাদের পক্ষাবলম্বন করে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতের বহু ষড়যন্ত্রে জড়িত হন। শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা ও তার সরকার উৎখাতে ব্যর্থ হয়ে জয় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার পরিকল্পনা করা হয়। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন হাওয়া ভবনের খুবই ঘনিষ্ঠজন পরিচিত মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ হয় সাংবাদিক শফিক রেহমানের। সাংবাদিক শফিক রেহমান বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার খুবই কাছের লোক বলে পরিচিত। অপরদিকে মাহমুদুর রহমান জামায়াতপন্থী, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বনকারী এবং শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ও সরকারের কট্টর বিরোধী হিসেবে পরিচিত। শফিক রেহমানের বিদেশে পরিচিতি ও কূটনৈতিক মহলে যোগাযোগ থাকার কারণে তাকে সঙ্গে নিয়ে জয় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার পরিকল্পনায় ছক তৈরি করেন মাহমুদুর রহমান। শুক্রবার ফের শফিক রেহমানকে রিমান্ডে পাওয়া গেলে মাহমুদুর রহমানকে আগামী ২৪ এপ্রিল রিমান্ড মঞ্জুর করে ডিবি হেফাজতে আনা গেলে দুজনকে মুখোমুখি করে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে। ডিবি সূত্র জানায়, শুধু শফিক রেহমান বা মাহমুদুর রহমানই নয়, এফবিআইয়ের এজেন্টকে যে অর্থ দেয়া হয়েছে তার কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বা অর্থের যোগানদাতা আরও অনেকেই আছেন। তারা কে বা কারা? জয়কে অপহরণে আরও কোন ‘উচ্চ পর্যায়ের’ ষড়যন্ত্র ছিল কি-না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, জয়কে অপহরণ পরিকল্পনার সঙ্গে এরই মধ্যে যাদের নাম এসেছে, তারা ছাড়াও পর্দার আড়ালে অন্য কেউ থাকতে পারে। তবে তদন্তে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, শফিক রেহমানের নামেই এফবিআইয়ের এজেন্টকে ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেয়া হয়েছে। শফিক রেহমানের নামে ঘুষ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে সাজাপ্রাপ্ত মিল্টন ভুইয়া। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অব্যাহত রয়েছে। শফিক রেহমান বলছেন, মিল্টন হয়ত করসংক্রান্ত ঝামেলা এড়াতে তার নাম ব্যবহার করেছে। ২০১২ সালে জাসাসের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিএনপি নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন বন্ধ হয়ে যাওয়া পত্রিকা আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন। ওই সময় মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে মামুনের পরিকল্পনা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য বিনিময় হয়। ওই সময়ই টাকার যোগানের বিষয়টি চূড়ান্ত হয় বলে মনে করা হচ্ছে। ডিবি সূত্র জানায়, সাংবাদিক শফিক রেহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন যার মধ্যে তার ই- মেইলে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সম্পর্কে সব তথ্য আসে। তিনি এফবিআই এজেন্ট লাস্টিক ও মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারের নির্দেশে তা ই-মেইল থেকে মুছে দিয়ে এসব তথ্যের প্রিন্ট কপি রেখে দেন। জয়কে অপহরণ চেষ্টার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারের পর দ- পাওয়া রিজভী আহমেদ সিজার, তার বন্ধু জোহান্স থ্যালার ও এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিক তাদের জবানবন্দীতে শফিক রেহমানের কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দেয়া এ তিন জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে শফিক রেহমান, বাংলাদেশের কারাগারে আটক একজন সম্পাদক ও ব্যবসায়ী মিল্টন ভুঁইয়ার নাম রয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থা ডিবির দাবি। ডিবি সূত্র জানায়, জয়কে অপহরণ চক্রান্তের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে তিন জনের দ- হওয়ার ঘটনায় ২০১৫ সালের মে মাসে ঢাকার রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশ। এটি তদন্তের মূল ষড়যন্ত্র নয়াপল্টনে জাসাস কার্যালয়ে হয়েছে এমন তথ্য পেয়ে পল্টন থানায় ‘অপহরণ ও হত্যা চেষ্টা মামলা হয়। মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে সাংবাদিক শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমান ও মিল্টন ভুঁইয়ার নাম বেরিয়ে আসে। গত শনিবার সকালে বিএনপি-ঘনিষ্ঠ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি। সরকারের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ ॥ ডিবি সূত্র জানান, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যালে আদালত অবমাননার জন্য সাজাপ্রাপ্ত এক বিদেশী সাংবাদিক ইতোমধ্যেই দেশের বাইরে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের বিষয়ে অপপ্রচার চালান শুরু করেছে। এরই মধ্যে দু-একটি বিদেশী পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত ও বিদেশী রাষ্ট্রসমূহকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধ হয়ে এই বিদেশী সাংবাদিককে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্য নিয়োগ করেছে বলে অভিযোগ পেয়েছে বলে ডিবির দাবি। যেসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তার মধ্যে শফিক রেহমানকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি খুবই ভাল মানুষ, মাছিও মারতে পারেন না, মানুষ মারার ষড়যন্ত্রের লিপ্ত হতে পারেন না, মত প্রকাশের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে সরকার, ইত্যাদি ধরনের। এ জন্য বিদেশী মানবাধিকার সংস্থা, সংবাদ মাধ্যম, কূটনৈতিক মহলে যোগাযোগ করে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের ঘটনাটি যেন বিশ্ব মিডিয়াতে সরকার ও আওয়ামী লীগের নেতিবাচক ভূমিকা হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্যে বিদেশী লবিস্টের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
×