ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিষাক্ত স-স্কেলড ভাইপার কামড় থেকে বাঁচতে...

প্রকাশিত: ২০:০৬, ২১ এপ্রিল ২০১৬

বিষাক্ত স-স্কেলড ভাইপার কামড় থেকে বাঁচতে...

অনলাইন ডেস্ক॥ মাত্র তেরো বছর বয়স তার। ঝোপ-ঝাড়ে গিয়ে ইঁদুর ধরা তার খেলা। একদিন ভুল গর্তে হাত দিলেন। হাত কামড়ে দিলো এক বিষাক্ত স-স্কেলড ভাইপার। হাত ফুলে গেলো, ত্বক সাদা হতে থাকলো। কামড়ের স্থান থেকে প্রচুর রক্ত ঝরতে থাকলো। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো, ত্বকে পচন ধরলো। সেই হাতের বিভৎস ছবি রয়েছে ভারতের মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ কেম্পাইয়াহ কেম্পারাজুর কাছে। কামড়ের পর হাতের বিভিন্ন অবস্থার ধারাবাহিক ছবি রয়েছে। শেষ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ছেলেটির হাত লাল হয়ে রয়েছ এবং দুটো আঙুল নেই। অধিকাংশ সাপ মানুষের জন্যে ক্ষতিকর নয়। এমনকি মারাত্ম বিষাক্ত সাপও মানুষ পেলেই কামড়ে দেয় না। তবে স-স্কেলড ভাইপারের বিষয়টি আলাদা। একে সহজে খুঁজেই পাওয়া যায় না। আর যখন আশপাশে থাকে, তখন বেশ আক্রমণাত্মক সে। মানুষের বসবাসের জন্যে বন উজাড় হচ্ছে। কাজেই বিষাক্ত সাপের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে মানুষ। সাপের বিষ মানবদেহের রক্তবাহী নালীর মেমব্রেন ধ্বংস করতে থাকে। আঘাতের স্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। কাজেই ক্রমাগত রক্তপাত চলতেই থাকে। তবে সাপের বিষ আসলে মানুষকে খুন করে না। এটা দেহটাকে ধ্বংস করতে থাকে। কামড়ের আশপাশের অংশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষ ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও হাত বা পায়ের আঙুল কিংবা পুরো অঙ্গ হারিয়ে ফেলে। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, প্রতিবছর সাপের কামড়ে ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। আবার ৪ লাখ মানুষ অঙ্গ ক্ষয়ের শিকার হন। অ্যান্টিভেনাম কোনো কাজ দেয় না। এতে প্রচুর অ্যান্টিবডি থাকে যারা কার্যকর হয়ে জীবনটাই শুধু বাঁচায়। কিন্তু অঙ্গ হারানো রোধ করতে পারে না। তবে সুসংবাদটি হলো, কেম্পারাজু এবং তার দুই সহকর্মী গজনান কাতকার এবং কেস্তুরু গিরিশ ভাইপারের মতো ভয়ংকর বিষের ক্ষতির মাত্রা অনেকখানি কমিয়ে আনার উপায় আবিষ্কার করেছেন। কামড়ের স্থানে মানবদেহ রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতার বলে শ্বেতকণিকাকে যুদ্ধ করতে পাঠায়। গবেষকদের ধারণা, কিছু শ্বেতকণিকা অসাবধান হয়ে টিস্যুর উল্টো ক্ষতি করে বসে। কাজেই এদের নিরাময় প্রক্রিয়া থেকে আলাদা করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা আরেক ধরনের শ্বেতকণিকা প্রয়োগ করেন। নিউট্রোফিলস শ্বেতকণিকা দেহকে জীবাণুর হাত থেকে বাঁচাতে জীবন দিয়ে দেয়। রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের ডিএনএ অবমুক্ত করে। এই ডিএনএ'র জাল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল মলিকিউলে পরিপূর্ণ থাকে। দেহে যারা হানা দিয়েছে তাদের নিষ্ক্রিয় ও ধ্বংস করে। মূলত এই জাল এক ধরনের ফাঁদ। বিজ্ঞানী দল একে নিউট্রোফিল এক্সট্রাসেলুলার ট্র্যাপস বা নেটস নাম দিয়েছেন। তবে এরা ক্ষতি করে। এই জাল রক্তবাহী নালীকে বন্ধ করে দেয়। তবে বিষ কামড়ের স্থান থেকে আর ছড়ায় না। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভাইপারের বিষের উপস্থিতিতে নিউট্রোফিলস নেটস ছড়িয়ে দেয়। এই শ্বেতকণিকাসহ যখন ইঁদুরের দেহে ভাইপারের বিষ প্রয়োগ করা হয়, তখন সেখানে টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ চোখে পড়েনি। ফলাফল বিস্ময়কর। নিউট্রোফিল টিস্যু ধ্বংস করছে। কিন্তু এদের ছাড়া আবার বিষ গোটা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এদে আক্রান্ত মারা যেতে পারেন অথবা কোনো অঙ্গ খোয়া যাবে। কিন্তু পরের আরেক পরীক্ষায় দেখা গেছে, কোবরার বিষ শ্বেতকণিকার জাল ভেদ করতে পারছে। এদের বিষে রয়েছে এক ধরনের এনজাইম ডিনাসে। স-স্কেলড ভাইপারের বিষে ডিনাসের অভাব রয়েছে। তাই নিউট্রোফিল এতে ভারসাম্য রক্ষা পেরেছে। আর যদি সাপের বিষে ডিনাসের উপস্থিতি থাকে, তবে খুব দ্রুত দেহের অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাণ যাবে না, কিন্তু কোনো এক অঙ্গ খোয়াতে হবে। ইঁদুরের দেহে বিষের সঙ্গে ডিনাসে প্রয়োগ করে দেখা যায় তা দ্রুত মরে গেছে। অথচ শুধু বিষের ক্রিয়ায় আরো দেরিতে মরে। আবার বিষ প্রয়োগের এক-দুই ঘণ্টা পর ডিনাসে প্রয়োগ করে দেখা গেছে, টিস্যু ধ্বংসের ক্রিয়া বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। তিন ঘণ্টা পর প্রয়োগে কোনো অঙ্গহানি বন্ধ করা সম্ভব। লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ নিকোলাস কেসওয়েল বলেন, এসব পরীক্ষার ফলাফল দারুণ। এর মাধ্যমে বেশ কয়েক প্রজাতির বিষাক্ত সাপের কামড় থেকে ক্ষতির পরিমাণ বহুলাংমে কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে বিজ্ঞানী দলকে ডিনাসের চিকিৎসাব্যবস্থা বের করতে আরো গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। তবে এখানে সময়মতো ওষুধ প্রয়োগ সবকিছু। ভুল মুহূর্তে প্রয়োগ করা হলে উপাকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি ঘটিয়ে দিতে পারে। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×