ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার নওয়াববাড়ি পুনরুদ্ধারে মাঠে পরিবারের সদস্যরা

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২১ এপ্রিল ২০১৬

বগুড়ার নওয়াববাড়ি পুনরুদ্ধারে মাঠে পরিবারের সদস্যরা

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ার নওয়াব পরিবারের সদস্যরা (যারা বিক্রির দলিলে স্বাক্ষর করেননি) হারানো সম্পত্তি পুনরুদ্ধারে মাঠে নেমেছেন। তাদের স্পষ্ট কথা : ওয়াকফ সম্পত্তি কি করে বিক্রি করা হলো! সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রের বক্তব্য, কমিশন পাঠিয়ে দলিলে ক্রেতা-বিক্রেতার স্বাক্ষরের পর রেজিস্ট্রেশন হওয়া দলিল বাতিলও করা যায় আইনগত উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে। সূত্র জানায়, ওয়াকফ সম্পত্তি বগুড়ার নওয়াব বাড়ির মোতওয়াল্লি নওয়াব পরিবারের সদস্য রায়হান চৌধুরী বুধবার দুপুরে তার আইন উপদেষ্টা নিয়ে ঢাকায় আইন মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে আইনী লড়াইয়ের জন্য সাক্ষাত করেছেন। এদিকে মোতয়াল্লির পক্ষে তার পরিচালক ও আমমোক্তার মোঃ মানিক শেখ মঙ্গলবার বিকেলে বেআইনীভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার আবেদন করেছেন বগুড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। উল্লেখ্য, তদানিন্তন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বগুড়ায় মোহাম্মদ আলীর শেষ চিহ্ন শহরের কেন্দ্রস্থলে নওয়াব প্যালেসসহ ১ দশমিক ৫৫ একর ভূমি আন্ডার ভ্যালুয়েশন বিক্রির দলিল করা হয়। এরপর হতেই এই স্থাপনা নিয়ে শহরের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এলাকার মানুষের কথা, দেড় শ’ বছরের ঐতিহ্যের এই স্থাপনা সংরক্ষণ করা হোক। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরও এই স্থাপনা পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য ওপর মহলে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। একাধিক সূত্র জানায়, বগুড়ার নওয়াবের ওয়াকফ সম্পত্তি বহু আগে থেকেই বেআইনীভাবে বিক্রি শুরু হয়েছে। প্যালেসের উত্তরধারে ছিল আমবাগান। আমবাগান কেটে এই ওয়াকফ ভূমির ওপর তিনটি বহুতল মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। ওয়াকফ প্রশাসন কোন ব্যবস্থাই নিতে পারেনি। মোহাম্মদ আলীর পরিবারের শেষ চিহ্ন বসতভিটা বিক্রি করেন মোহাম্মদ আলীর প্রথম পক্ষের স্ত্রী হামিদা বেগমের দুই ছেলে সৈয়দ হাম্মাদ আলী ও সৈয়দ হামদে আলী। দ্বিতীয় পক্ষের লেবাননী স্ত্রী আলিয়ার ছেলে সৈয়দ মাহমুদ আলী ও মেয়ে মাহমুদা বেগম এই সম্পত্তি বিক্রির ঘোর বিরোধিতা করে এ বছর জানুয়ারি মাসে বগুড়ায় প্রেস কনফারেন্স করে সরকারকে অধিগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি কানাডা যাওয়ার পরই সম্পত্তি বিক্রি করে দেন হাম্মাদ আলী ও হামদে আলী। সূত্র জানায় পৈত্রিক ভূমি রক্ষায় মাহমুদ আলী ও মাহমুদা বেগম শীঘ্রই বগুড়া যাচ্ছেন। বগুড়ার প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুর রহিম জানালেন মোহাম্মদ আলীর তিন পুরুষ আগে (পূর্বসূরি) সোবহান চৌধুরীর স্ত্রী তহুরুন্নেছা ১৮৯০ সালের ৮ মার্চ নওয়াবের অনেক সম্পত্তি ওয়াকফ করে গেছেন। তারই বড় একটি অংশ বগুড়ার নওয়াব প্যালেসসহ আশপাশের কয়েক বিঘা জমি। অবকাঠামোসহ যে ভূমিটি বিক্রি হয়েছে তাও ওয়াকফ বলা হচ্ছে। তবে যারা ক্রেতা তারা বলছেন এটি ওয়াকফ নয় (!)। আবার ওয়াকফ এস্টেট কর্তৃপক্ষের কথা, নওয়াব প্যালেসসহ পুরো জায়গা ওয়াকফ করা। আরেক সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের দিকে জেলা প্রশাসনের একজন দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রশাসনিকভাবে প্যালেসের অংশটুকু ওয়াকফ থেকে রহিত করে নেন সৈয়দ হামদে আলী। তবে ওয়াকফ থেকে বাদ দিতে পারেননি। এই বিষয়ে তদন্ত হলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে বলে মনে করে বগুড়ার সুধীজন। এই নওয়াব প্যালেস কিনেছেন বগুড়া চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাসুদার রহমান মিলন, চেম্বারের সহসভাপতি ও হাসান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল হাসান জুয়েল এবং চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি আব্দুল গফুর। সাদাচোখেই দেখা যায় শহরের একেবারে হার্ট পয়েন্টে অবকাঠামো স্থাপনাসহ এই ভূমির মূল্য প্রায় শত কোটি টাকা। এই ১ দশমিক ৫৫ একর ভূমি দলিলে বিক্রি দেখানো হয় মাত্র ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৭ হাজার টাকায়। জমি দলিল করার সময় এতটাই গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে যে শহরের কেউ বিষয়টি আঁচও করতে পারেনি। জেলা প্রশাসনও বিষয়টি জানে না। সবচেয়ে বড় কথা এই জায়গাটিকে ওয়াকফ হিসেবে দাবি করার পরও দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে। বিক্রিত এই ওয়াকফ সম্পত্তি ফিরে পেতে হামদের আলীর ভাইপো ওয়াকফর বর্তমান মোতয়াল্লি রায়হান চৌধুরী আইনের আশ্রয় নেবেন, সূত্র এমনটিই জানিয়েছে। ইতোপূর্বে এই ভূমি রক্ষা নিয়ে নিয়ে চাচা হামদে আলীর সঙ্গে ভাইপো রায়হান আলীর বাগবিত-া হয়েছে। উল্লেখ্য, লন্ডন প্রবাসী হামদে আলীকে দেশে ডেকে আনেন রায়হান আলী সম্পত্তি রক্ষার জন্য। সেই হামদে আলী রক্ষার বদলে ভূমি বিক্রি করে দিলেন। সূত্র জানায়, ভূমি রক্ষায় নওয়াবের পরিবারের সদস্যরা আদালতে যাবেন।
×