ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২১ এপ্রিল ২০১৬

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ ‘খোয়া’ যাওয়ার ঘটনায় সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবীর, তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং সদস্য সচিব অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস উপস্থিত ছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রায় ঘণ্টাখানেক বৈঠক করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কমিটির প্রধান ড. ফরাসউদ্দিন সংবাদিকদের বলেন, অনেক কষ্ট করে একটি বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন তৈরি করেছি। প্রতিবেদনটি সরকার দেখবেন। প্রয়োজনে তারা আপনাদের জানাবেন। অথবা সরকার বললে, আমি আপনাদের জানাব। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনটি সরকার এখন নিরীক্ষা করবে। নিরীক্ষা করতে সরকারকে সময় দিতে হবে। তবে প্রতিবেদনের টেকনিক্যাল পার্ট এখনও জমা দেয়া হয়নি। এটি পরে জমা দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দিতে পেরেছি। যাচাই-বাছাই শেষে সরকার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। জানা গেছে, রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় গত ১৫ মার্চ ড. ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে সরকার। কমিটির কার্যপরিধি অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন এবং ৭৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। কমিটি গঠনের ৪ দিন পর ২০ মার্চ ফরাসউদ্দিন অর্থমন্ত্রীর বাস ভবনে সাক্ষাত করেন। এ সময় কমিটির অপর দুই সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। এর দুই দিন পর ২২ মার্চ কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে তদন্ত শুরু করে কমিটি। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদায়ী দুই ডেপুটি গবর্নরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসা করেছে কমিটি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সার্ভার থেকে অবৈধভাবে পেমেন্ট আদেশ কিভাবে ও কার বরাবর গেল, অবৈধ পরিশোধ ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া পদক্ষেপগুলো যথাযথ ছিল কি না, তা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরকারের ভেতরে ও বাইরে যে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, তার চেয়ে বড় রহস্যের কারণ হয়ে রয়েছে, ঘটনাটি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কেন সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের (অর্থ মন্ত্রণালয়) কাছে প্রায় এক মাস গোপন রেখেছিল। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গবর্নর ড. আতিউর রহমানসহ ২ ডেপুটি গবর্নর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কমিটি। এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে চুরি হয়া অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা, ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটাতে পারে হ্যাকাররা তার জন্য কি কি নতুন পদক্ষেপ নেয়া দরকার তারও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করবে সরকারের এই কমিটি। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে চুরি হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকার গঠিত আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। এদিন সকাল ১১টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমানকে আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটের মহাব্যবস্থাপককে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যের একটি আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অধিশাখা। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, এ্যাটর্নি জেনারেল অফিস, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধি। বৈঠকে রিজার্ভ চুরির সঙ্গে যেসব দেশ সংশ্লিষ্ট ওই দেশের আইনী বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে। এ ছাড়া ওইসব দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কিভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা যায় সে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের উপায় এবং সমন্বয়ের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এ প্রসঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির ঘটনায় সরকার গঠিত আন্তঃসংস্থার টাস্কফোর্সের প্রথম সভা। রিজার্ভ চুরি মামলায় সময় বেড়েছে তদন্ত প্রতিবেদন জমার ॥ রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে এক মাসের বেশি সময় বাড়িয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম খুরশীদ আলম সিআইডির আবেদনে মঙ্গলবার এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন মহানগর হাকিম আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালাল আহমেদ। বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই চুরির ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য আগামী ২২ মে দিন ঠিক করেন বিচারক। এর আগে গত ১৬ মার্চ দেয়া এক আদেশে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ১৯ এপ্রিল ধার্য করা হয়েছিল। ঘটনার প্রায় এক মাস পর মার্চের শুরুতে বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ১৫ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল থানায় মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের এ্যাকাউন্টস এ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোঃ জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে করা এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে। চুরির জন্য হ্যাকারদের দায়ী করে করা মামলাটিতে আসামির তালিকায় কারও নাম নেই।
×