ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অকটেনে ২১ টাকা এবং ডিজেলে ছয় টাকা দাম কমছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২১ এপ্রিল ২০১৬

অকটেনে ২১ টাকা এবং ডিজেলে ছয় টাকা দাম কমছে

রশিদ মামুন ॥ সরকার অকটেন এবং পেট্রোলে ২১ টাকা এবং ডিজেলে ছয় টাকা করে দাম কমাতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে জ্বালানি তেলে ভেজাল প্রতিরোধে ফ্রাকশনেশন প্লান্ট থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ক্রয় করা পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন এবং অকটেনের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ফলে অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চারের সম্ভাবনা দেখছে বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি সরকার ফার্নেস তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৮ টাকা কমিয়ে ৪২ টাকা নির্ধারণ করে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত ৪ এপ্রিল প্রস্তাবটি পাঠানোর পর নতুন করে কিছু বিষয় জানতে চাওয়া হয়। জ্বালানি বিভাগ থেকে এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে বুধবার পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে কোন অনুমোদন পাওয়া যায়নি। এদিকে বুধবার বিদ্যুত জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অনুমোদন পাওয়ার পরই জ্বালানি তেলের দাম কামনো হবে। কেউ কেউ জ্বালানির মূল্য সমন্বয়ে বিরোধিতা করছেন কিনা এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন না এমন কিছু এখানে নেই। জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় থেকে মূলত জানতে চাওয়া হয়েছিল দাম কমালে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় প্রভাব পড়বে কিনা। এছাড়া জ্বালানি তেলে আবার ভর্তুকি দিতে হবে কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, বিপিসি সব থেকে বেশি বিক্রি করে ডিজেল। এখানে ডিজেলের দাম সব থেকে কম কমানো হচ্ছে। এখন যেখানে সব ধরনের করসহ বিপিসি প্রতিলিটার ডিজেল কিনছে ৪৮ টাকা ৮২ পয়সাতে। বিক্রি করছে ৬৮ টাকায় অর্থাৎ লাভ করছে ১৯ টাকা ১৮ পয়সা। এখন যদি দাম ৬ টাকা কমানো হয় তারপরও বিপিসি প্রতিলিটার ডিজেল বিক্রিতে লাভ করবে ১৩ টাকা ১৮ পয়সা। কোন কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পেলেও লাভের পরিমাণ ১০ টাকার নিচে নামবে না। এছাড়া পেট্রোল এবং অকটেন আমাদের নিজস্ব তেল। গ্যাস ক্ষেত্রের উপজাত কনডেনসেট প্রক্রিয়া করে সরকারী বেসকারী ফ্রাকশনেশন প্লান্ট পেট্রোল এবং অকটেন তৈরি করে বিপিসির কাছে বিক্রি করে। এই দুই ধরনের তেলের দাম আরও কমানো সম্ভব। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, এখন প্রতিলিটার কনডেনসেট ৪২ টাকা লিটার দরে গ্যাস ক্ষেত্রের কাছ থেকে ক্রয় করে ফ্রাকশনেশন প্লান্ট। সঙ্গতকারণে তাদের উৎপাদন ব্যয়ও বেশি পড়ে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে এখন কনডেনসেটের লিটার মাত্র ২১ টাকা। অর্থাৎ দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলো দ্বিগুণ দামে কনডেনসেট বিক্রি করায় বিপিসিকেও অতিরিক্ত দরে ফ্রাকশনেশন প্লান্টের কাছ থেকে জ্বালানি তেল কিনতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবে ফ্রাকশনেশন প্লান্টের কাছ থেকে জ্বালানি তেলের ক্রয়মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ মনে করছে এতে দেশের পেট্রোল পাম্পগুলোর তেলে ভেজালের মাত্রা কমবে। প্রস্তাবে দেখা যায়, এখন ফ্রাকশনেশন প্লান্টের কাছ থেকে কেনা পেট্রোল ৫৫ দশমিক ২৯ টাকা থেকে ৪ দশমিক ৭১ টাকা বৃদ্ধি করে ৬০ টাকা, ডিজেল ৫৫ দশমিক ৯৪ টাকা থেকে ২ দশমিক ০৬ টাকা বৃদ্ধি করে ৫৮ টাকা, কেরোসিন ৫৫ দশমিক ৯২ টাকা থেকে ২ দশমিক ০৮ টাকা বৃদ্ধি করে ৫৮ টাকা এবং অকটেন ৫৮ দশমিক ২৭ টাকা থেকে ৩ দশমিক ৭৩ টাকা বৃদ্ধি করে ৬২ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল জ্বালানি তেলের মূল্য শীঘ্রই কমবে এ ধরনের ঘোষণার পর মাঠপর্যায়ে জ্বালানি তেলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। লোকসানের আশঙ্কায় তেল তোলা কমিয়ে দেয়ায় এই সঙ্কট বলে মনে করা হচ্ছে। কোন কোন এলাকায় তেলের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বাড়তি দরে তেল বিক্রি করছে পাম্প মালিকরা। সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারির পরও এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মেলেনি ভোক্তাদের। পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতি অবশ্য বলছে সঙ্কট সরকারের ঘোষণার কারণে তৈরি হয়েছে। এতে তাদের কোন দায় নেই। পেট্রোল পাম্প ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হক এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, এ জন্য আমরা ব্যবসায়ীরা দায়ী নই। তেলের দাম কমে গেলে মজুদ তেল ব্যবসায়ীদের কম দামে বিক্রি করতে হবে। এই লোকসান তো জেনেশুনে কোন ব্যবসায়ী করতে চাইবে না। এই কারণে কোন কোন পেট্রোল পা¤প তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার এভাবে আগাম তেলের দাম কমার ঘোষণা না দিলেই পারত। এতে গ্রাহকের এই ভোগান্তি হতো না। বিপিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না কারার শর্তে জনকণ্ঠকে তেল বিক্রি কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ডিজেল বিক্রি ৩০০ থেকে ৪০০ টন কমে গেছে। আর পেট্রোল অকটেন কমেছে ৭০ থেকে ৮০ টন। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয় ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ১২০ থেকে ১২৫ মার্কিন ডলারে ওঠা-নামা করছিল। তখন দেশে দাম বাড়িয়ে প্রতিলিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ এবং ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা করা হয়। সম্প্রতি এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলের দাম কমানো হয়।
×