ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁচামাল সঙ্কটে কারখানাগুলো ৬-৭ মাসের বেশি উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে পারছে না

আগর রফতানি করে বছরে ১০০ কোটি টাকা আয় সম্ভব

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২১ এপ্রিল ২০১৬

আগর রফতানি করে বছরে ১০০ কোটি টাকা আয় সম্ভব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সহায়তা পেলে আগর হয়ে উঠতে পারে দেশের এক সম্ভানাময় রফতানি পণ্য। বর্তমানে কাঁচামালের অভাবে দেশের বিদ্যমান আগর কারখানাগুলো ৫০ শতাংশের বেশি উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। অথচ পর্যাপ্ত কাঁচামালের যোগান পেলে কারখানাগুলো থেকে বছরে ১০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব। আর দেশের আগর ব্যবসা বর্তমান ৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ১০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ‘বাংলাদেশে আগর চাষ ও আগর শিল্পের উন্নয়ন’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বলা হয়, আগর অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ এবং এটি একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। এক তোলা আগর উৎপাদন খরচ পড়ে দেড় হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। আর স্থানীয় বাজারে তা বিক্রি হয় পাঁচ হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকায়। বিদেশের বাজারে এই একই আগর বিক্রি হয় মান ভেদে ৫ থেকে ৩০ হাজার ডলারে। এ কারণে আগরকে বাংলাদেশের ‘তরল সোনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কর্মশালায় আরও বলা হয়, আগর চাষ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক বনায়ন কর্মসূচী। সরকারী ও ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহ আরও ব্যাপক ভিত্তিতে আগর চাষ কার্যক্রম হাতে নিতে পারে। যাতে অধিক পরিমাণে আগর কারখানা সৃজন করে বর্তমান আগর কারখানাগুলোর কাঁচামাল সঙ্কট দূর করা যায়। এতে একদিকে যেমন গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমেও অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। কর্মশালায় বক্তারা বলেন, আগর উৎপাদনকে প্রধানমন্ত্রী শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ঘোষণা করলেই শুধু হবে না, দেশে মান সম্পন্ন আগর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আগর শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। এজন্য দেশের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ ও বন সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি আগর শিল্পের উন্নয়নে চাষী ও উদ্যোক্তাদের সমস্যাসমূহ সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। দেশে ও দেশের বাইরে আগরের বাজার সৃষ্টির জন্য মান সম্পন্ন আগর তৈরি করতে তিনি একটি কর্মমুখী পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দেন। সেই সঙ্গে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণে সংশ্লিদের আহ্বান জানান। প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুচ আলী বলেন, উৎপাদিত আগরের মান নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মান সম্পন্ন আগর উৎপাদন করতে না পারলে বিদেশে ভাল দাম পাওয়া যাবে না। তাই উৎপাদিত আগরের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে হবে। মৌলভীবাজারে একটি ল্যাবরেটরি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত এখনও কার্যকর হয়নি। কর্মশালায় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, দেশে বেসরকারীভাবে আগর বাগান গড়ে উঠলেও আগর গাছ কেটে তা পরিবহনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বন বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আগর গাছ আটক করছে। ফলে কারখানায় আগর গাছ পরিবহনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আগর শিল্প একটি জ্বালানি প্রধান শিল্প। কিন্তু গ্যাস সঙ্কটের কারণে আগর উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে। অন্যান্য পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলেও আগর রফতানিকে কোন প্রণোদনা নেই। অবশ্য কর্মশালায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অমিত কুমার বাউল আগামী ১৫ দিনের মধ্যে চাষীদের আগর কাঠ পরিবহনের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। এক সময় দেশের সিলেট জেলার পাহাড়ী অঞ্চল আগর গাছে সমৃদ্ধ ছিল। সেই আগর গাছকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজার জেলার সুজানগর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে আগর শিল্প গড়ে উঠেছে। বর্তমানে ওই অঞ্চলে প্রায় ২৫০টি কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় আগর উৎপাদনের সঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার জনবল সম্পৃক্ত। কিন্তু পর্যাপ্ত আগর কাঠের অভাবে এসব আগর কারখানা বছরে ৬-৭ মাসের বেশি উৎপাদন করতে পারে না। এক সময় দেশে প্রাকৃতিক উপায়ে আগর গাছ জন্মালেও এখন আর পাওয়া যায় না। বর্তমানে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আগর আবাদ হচ্ছে। এর পুরোটাই চাষকৃত। আগরের প্রধান আমদানিকারক দেশ হচ্ছে সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ইরান, ইরাক, জর্ডান, প্যালেস্টাইন, মিসর, তুরস্ক, চীন, তাইওয়ান, জাপান প্রভৃতি দেশ। এ সকল দেশের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ ও আমেরিকার দেশসমূহেও এখন আগর তেলের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. শাহীন আক্তারের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মোট ৭টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রবন্ধগুলোর ওপর আলোচনা করেন বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী, চাষী ও উদ্যোক্তারা। তারা দেশে আগর শুমারি ও আগর উৎপাদনের এলাকাগুলোর একটি মানচিত্র তৈরির তাগিদ দেন। সেই সঙ্গে আগর চাষ সম্প্রসারণে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে আগর চারা উৎপাদন ও বিতরণের প্রস্তাব করেন। কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অমিত কুমার বাউল, প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুচ আলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল রহমান প্রমুখ।
×