ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৃজন কক্ষ থেকে শেক্সপিয়ার সপ্তক

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২১ এপ্রিল ২০১৬

সৃজন কক্ষ থেকে শেক্সপিয়ার সপ্তক

গৌতম পাণ্ডে ॥ ‘যদি তাই হয়ে যায়, তবে যত দ্রুত হয়ে যায় ততই উত্তম। মৃত্যু যদি সুনিশ্চিত করে উত্তরাধিকার’-ম্যাকবেথের এই সংলাপটি দিয়ে শুরু হয় নাটক। চলতে থাকে ম্যাকবেথ ও লেডি ম্যাকবেথের পারস্পরিক সংলাপ। পূর্ণাঙ্গ নাটক বলা না গেলেও সমগ্র ‘ম্যাকবেথ’ নাটকের ছাপ দেখতে পাওয়া গেল মাত্র ১০ মিনিটের এই অংশটুকুতে। নির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী নাটক শেষে বললেন, এবার আপনাদের জন্য রয়েছে শেক্সপিয়ারের আর একটি নাটক ‘ওথেলো’। নাটকে ওথেলোর দেয়া ভালবাসার নিদর্শন একমাত্র রুমালটি এ্যামিলিয়ার মাধ্যমে ক্যাসিওর ঘরে ফেলে আসা নিয়ে চলে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি। ডেসডিমোনা সংসার জীবনে অনভিজ্ঞ বলেই ওথেলোর ভেতরের ক্রোধ সম্পর্কে বুঝতে পারার আগেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। শেষ মুহূর্তে বাঁচার জন্য আকুতি, নির্বাসিত করার অনুরোধ কিছুই ওথেলোকে স্পর্শ করে না। মৃত্যুর পূর্বেও সে তার হত্যাকারী হিসেবে স্বামীকে অভিযুক্ত করতে পারে না। ডেসডিমোনাকে শ্বাসরোধে মেরে ফেলে ওথেলো। শেষ হয় নাটক, ব্যাপ্তিকাল মাত্র ১০ মিনিট। নির্দেশকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আবার অন্য কক্ষে গিয়ে আসন নিতেই শুরু হয় শেক্সপিয়রের অন্য আর একটি নাটক ‘রোমিও জুলিয়েট’। প্রেম কিংবা ভালবাসা জীবন আর সাহিত্যের বড় একটা অংশ দখল করে আছে। প্রেমিক জুটি হিসেবে রোমিও জুলিয়েট শুধুমাত্র একজন সাহিত্যিকের কল্পনাতেই আবদ্ধ থাকেনি। মানুষের মনের মাঝে এ দুটি চরিত্র রক্ত মাংসের মানুষ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার চেয়ে আত্মহত্যাকেই শ্রেয় বলে মেনে নেয়। নাটকটি শেষ হয় ১০ মিনিটে। আবারও নির্দেশকের অনুরোধে অন্য কক্ষে গিয়ে দেখা গেল নাটক ‘এ্যাজ ইউ লাইক ইট’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের বিএ (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা নিরলস মহড়া করে চলেছে বিশ্ববরেণ্য নাট্যকার শেক্সপিয়ারের ৭টি নাটকের নির্বাচিত স্বগতোক্তি, একলাপ ও দ্বৈতালাপ। এদের মধ্যে রয়েছেন- কীর্তি বিজয়া, লাতিফুল খাবীর, আব্দুল্লাাহ আল জাবির, নাছুমা হক, নুসরাত জাহান, রাগীব নাঈম, আশরাফুল আলম, তামান্না ইসলাম, মনিরুজ্জামান, সাদিয়া মাহবুব, সজিব রানা, এহসানুল আবেদিন, প্রণব শর্মা, আজহার উদ্দিন রাসেল, তরিকুল হক, শামীম মিয়া, মারিয়া খানম ও রফিকুল ইসলাম সবুজ। মঞ্চ আলোক, পোশাক ও দ্রব্য পরিকল্পনা অভিনেতাগণ। শিক্ষক ও নির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, আমার চেষ্টার চেয়েও শিক্ষার্থীরা নিজের মেধা ও মননের পরিচয় দিচ্ছে শেক্সপিয়ারের এ ৭টি নাটকে। এদের ভেতর রয়েছে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা। আমি আশা করছি ‘শেক্সপিয়ার সপ্তক’ মঞ্চায়ন আমাদের দেশে সম্পূর্ণ নতুন ও ব্যতিক্রমী এক আয়োজন হবে। এদিন দর্শক ১০ মিনিটের প্রতিটি নাটক দেখার পর ১৫ মিনিটের বিরতিতে অন্য কক্ষে যাওয়ার সুযোগ পাবে, এভাবেই বৃত্তাকারে নাটকগুলো দেখবে সবাই। বিশ্বনন্দিত নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ৪০০তম প্রয়াণ দিবসকে স্মরণ করে ‘শেক্সপিয়ার লিভস’ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের প্রযোজনায় এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় মঞ্চায়ন হবে ‘শেক্সপিয়ার সপ্তক’ শিরোনামের ব্যতিক্রমী নাট্য প্রদর্শনী। শেক্সপিয়ারের ‘ম্যাকবেথ’, ‘হ্যামলেট’, ‘ওথেলো’, ‘রোমিও এ্যান্ড জুলিয়েট’, ‘এ মিড সামার নাইটস ড্রিম’, ‘টেমিং অব দ্য শ্রু’ ও ‘এ্যাজ ইউ লাইক ইট’ নাটকগুলোর নির্বাচিত অংশ নিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রদর্শনী। এ নাটকগুলোর অনুবাদকরা হলেন যথাক্রমে সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান, মুনীর চৌধুরী ও কবীর চৌধুরী, মফিজ চৌধুরী, অসিত কুমার বন্দোপাধ্যায়, মুনীর চৌধুরী ও তুহিন কুমার মুখোপাধ্যায়। আগামী ২৩ ও ২৪ এপ্রিল (শনি ও রবিবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ফুলার রোডের ব্রিটিশ কাউন্সিলে শেক্সপিয়ার সপ্তকের মঞ্চায়ন হবে। মিলনায়তনের প্রধান গেট খোলা হবে সন্ধ্যা ৭টায়।
×