ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করের ব্যাপ্তি

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২১ এপ্রিল ২০১৬

করের ব্যাপ্তি

২০১৬-১৭ বছরের বাজেট আসছে। আর বাজেট মানেই তাতে করের বিন্যাস লিপিবদ্ধ হওয়া। করের ভার সবার জন্য সমান না হলেও, অনেকে করভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েন। আবার কর দেয়ার সামর্থ্য যার পূর্ণ বিদ্যমান, তাকেই কর ফাঁকির প্রবণতা লালন করতে দেখা যায়। করের সীমা-পরিসীমা নির্ধারিত হয় বাজেটে। তবে বিদ্যমান কর আইনে ফাঁক-ফোকর এমন যে, কর ফাঁকিতে কাউকে নিরুৎসাহিত করা যায় না। বরং ফাঁকি দেয়ার মধ্যেই আছে যেন এক ধরনের ‘বীরত্ব’। মানুষের আয় যত বেশি হবে, তার করও বেশি দেয়ার কথা। কিন্তু দেখা গেছে, ধনাঢ্যরা কর ফাঁকি দিতে পছন্দ করে। তাদের কর ফাঁকি দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু আমজনতা তথা মধ্যবিত্ত, স্বল্প মধ্যবিত্তের কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ বা সামর্থ্য কোনটাই নেই। ভ্যাট নামক পরোক্ষ করের মাধ্যমে ঠিকই তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। আবার চাকরিজীবী মধ্যবিত্তের বেতন-ভাতা থেকেই কেটে নেয়া হয় কর। এখানে ফাঁকির সুযোগ নেই। অনেক মধ্যবিত্ত সেই ফাঁকি দিতেও চায় না। বিত্তবানরা যা কর দেন, বাণিজ্যিক খাতে বিভিন্ন রেয়াতের মাধ্যমে তা ঠিকই ফিরে পান। পানামা পেপারসের বরাতে সারা বিশ্ব জেনেছে। বিশ্বের ক্ষমতাধর রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, খেলোয়াড়, এমনকি অভিনেতা-অভিনেত্রীরা পর্যন্ত বিপুল অঙ্কের কর ফাঁকি দিতে অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছেন। এই কর ফাঁকির নানা দিকও রয়েছে, যারা অবৈধ পথে টাকা আয় করেন। তাদের সেই টাকার ওপর কর প্রদান করতে হয় না। অবশ্য নামমাত্র কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার বিধান বাংলাদেশে পঁচাত্তর পরবর্তীকাল হতে চলে আসছে। পাশাপাশি অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি বৈধভাবে এতই অর্থ আয় করেন যে, তার ওপর নির্ধারিত কর দিতে হলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতছাড়া হবে- এটা তারা ভাবতেও পারেন না। তাই কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা তাদেরই বেশি। কর ফাঁকি রোধে কার্যকর ও তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা গ্রহণের দুর্বলতা, কর ফাঁকি দিলে তা চিহ্নিত না হওয়ার সম্ভাবনা এবং স্বচ্ছ লেনদেন ও রেকর্ড রাখার ব্যবস্থা না থাকায় কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগের যথাযথ ব্যবহার করে এক শ্রেণীর করদাতা। বাংলাদেশে দুই বছর আগের করবর্ষে বার্ষিক আয় বিবরণীতে মাত্র ৫ হাজার ৬শ’ ৬২ জন সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি টাকার ওপর দেখিয়েছেন, যা অবিশ্বাস্য। কোটি টাকার ওপর সম্পদ থাকলে করের ওপর দশ শতাংশ মাসুল দিতে হয়। সে কারণেই ধনাঢ্যরা কর ফাঁকি দিতে নানা পন্থা অবলম্বন করে। যে কারণে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া ও অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানও কর ফাঁকি দিতেন। বিদ্যমান ব্যবস্থায় কর বৈষম্য হ্রাসের অন্যতম পন্থা হচ্ছে ধনাঢ্যদের আয়ের ওপর আনুক্রমিক হারে করারোপ করা যে অর্থ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হতে পারে। দেশে বিদ্যমান আয়কর আইন জটিল, নিবর্তনমূলক ও প্রতিরোধাত্মক। যুগ ধর্মের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কর নির্ধারণ ও আদায় সংক্রান্ত বিধানাবলী সহজ ও সরলীকরণ তথা করবান্ধবকরণ করা না হলে আইন আরও জটিল হতে পারে। তাই এর সংস্কার জরুরী। স্বেচ্ছায় করদানে সক্ষম করদাতাকে উদ্বুদ্ধকরণে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। স্থায়ী আমানতের ওপর করারোপ নীতিও অমানবিক। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের এই অংশটিকে মানবিক কারণে রেহাই দেয়া উচিত করের আওতা থেকে। কর আদায় নয়, কর আহরণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান দূরত্ব হ্রাস করতে হবে। কর রাজস্ব আহরণে সুষম, সহনশীল ও দায়িত্ববোধের বিকাশ ঘটানো জরুরী। আসন্ন বাজেটে যুগোপযোগী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর বিন্যাস করা হলে করের আওতা যেমন বাড়বে, তেমনি করমুক্ত আয়ের সীমাও বাড়বে।
×