ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাই অবাধ উৎসব

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২১ এপ্রিল ২০১৬

চাই অবাধ উৎসব

রাখাল চন্দ্র মিত্র উৎসবের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যই আনন্দ-উচ্ছ্বাসের বহির্প্রকাশ। আর সে উৎসব যদি হয় সর্বজনীন তবে তো কথাই নেই। বাঙালীর সবচেয়ে বড় সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও সর্বজনীন উৎসব নববর্ষ। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, বাংলাদেশে সেটি প্রকৃত অর্থে সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারেনি। সাম্প্রদায়িকতার ভাইরাসে আক্রান্ত কিছু মানুষ নববর্ষ উৎসবের মধ্যেও ধর্মকে টেনে আনার অপচেষ্টা করে থাকেন। তারা এটিকে বিজাতীয় হিন্দুয়ানী অনৈসলামী সংস্কৃতি হিসেবে চিহ্নিত করতে তৎপর। তাই তারা মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন, মঙ্গল শোভাযাত্রা যার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য শুধুই শুদ্ধ মঙ্গল কামনার বহির্প্রকাশ সেটারও বিরোধিতা করে থাকে। তারা কি তাহলে মঙ্গল চায় না- এ প্রশ্ন করা যেতেই পারে। পাকিস্তান আমলে তো বটেই, স্বাধীন বাংলাদেশেও এ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে গ্রেনেড হামলা এর জ্বলন্ত উদাহরণ। শুধু নববর্ষ উদযাপন কেন যে কোন উৎসব পালনই তা ধর্মীয় হোক আর সম্প্রদায়গতই হোক নির্বাধ এবং নির্বিরোধী হওয়াই কাম্য। কিন্তু বাংলাদেশে তার বেশ ঘাটতি রয়েছে। এদেশে জন্মাষ্টমীর মিছিলসহ দুর্গোৎসবের সময় হামলা-প্রতিমা ভাংচুর হামেশাই ঘটে থাকে যা জাতীয় আকাক্সক্ষা ও প্রতিশ্রুতির বিপরীত। সাম্প্রদায়িক বিরোধিতা বা নিরাপত্তাসহ অন্য কোন অজুহাতেই কোন ধরনের রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ আরোপ উৎসবের অধিকার ও আনন্দকে ম্লান করবে তাতে কোনই সন্দেহ নেই। ঠিক সেটিই এবার বাংলাদেশে ঘটানো হলো। গত বছর নববর্ষ উদযাপনের সময় সংঘটিত একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে এবারে উৎসব অনুষ্ঠানের সময়সীমা বেঁধে দেয়া এবং মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যেন মাথাব্যথায় মাথা কেটে ফেলার দাওয়াই। মুষ্টিমেয় কিছু দুষ্ট লোকের হুমকি মোকাবেলায় এ ধরনের তৎপরতা গ্রহণযোগ্য নয়। ‘দুষ্টের দমন-শিষ্টের পালন’ নীতিতে আস্থাবান হয়ে বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে উৎসবকে বরং নির্বিঘœ করাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব হওয়া উচিত। কোনভাবেই উৎসবকে সীমিত বা শৃঙ্খলিত করা নয়। এতে বিরোধ সৃষ্টিকারীদের প্রতি তাদের লক্ষ্য পূরণে সহায়তা ও সহানুভূতির ভুল বার্তা পৌঁছতে পারে। এতে আগামী দিনে বর্ধিত আকারে দাবি পেশ করায় তাদের সাহস ও উৎসাহ জোগাবে। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী (স্বল্পসংখ্যক ফেতনা সৃষ্টিকারী বাদে) ধর্ম-বর্ণ-যুবা-বৃদ্ধ-ধনী-গরিব নির্বিশেষে অবাধ উৎসব পালনের অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এর বিপরীতে কাদের অবস্থান তাদের আমরা খুব ভাল করেই চিনি। এরা বাঙালী পোশাক এবং মুখোশে আবৃত আসলে পাকিস্তানী প্রেতাত্মা। বাঙালীর সবচেয়ে বড় সামাজিক লোকজ সর্বজনীন উৎসব নববর্ষ উদযাপনের তাই তারা বিরোধী। ধর্মের দোহাই দিয়ে তারা একে শুধু সীমিত করা নয়, একেবারে বন্ধ করতে চায়। ওলামা লীগ জাতীয়দের সর্বসাম্প্রতিক দাবি ও মন্তব্যই তার প্রমাণ। যা অগ্রাহ্য করা উচিত হবে না। এদের দমন করাই শ্রেয়। রাস্তায় বের হলে গাড়ি-ঘোড়ায় চাপা পড়তে পারে, স্থানে নামলে ডুবে যেতে পারে, সাপ-খোপ, মশা-মাছি কামড়ে দিতে পারে সেই আশঙ্কায় ডি.এল রায়ের নন্দলাল সারাদিন সারারাত মশারি খাটিয়ে বিছানায় পড়ে থাকতেন। নিরাপত্তার উদ্বিগ্নতা কাকে বলে। ধর্ম ব্যবসায়ী মৌলবাদীরা নববর্ষ উৎসবের বিরোধিতা করবে এই ভয়ে আমরা হাত-পা গুটিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ব এবং রাষ্ট্র নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে উৎসব পালনে সীমারেখা বেঁধে দেবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। শান্তিবাগ, পটুয়াখালী থেকে
×