ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এম এম সরকার

তারুণ্যের ধর্ম ও আনন্দ

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২১ এপ্রিল ২০১৬

তারুণ্যের ধর্ম ও আনন্দ

বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম মাস। গেল বছরের জরা-গ্লানি ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরের আগমনকে কবিগুরুর ভাষায় ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ বলে বরণ করে নেয়া হয়। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে এটি বাঙালীর সর্বজনীন উৎসব। তাই প্রাণের সঙ্গে মেলবন্ধন হয় আরেক প্রাণের। থাকে সীমাহীন সুখ-উচ্ছ্বাস। নানা বাধা-বিপত্তি ও আপত্তি সত্ত্বেও পহেলা বৈশাখের আনন্দ-উচ্ছ্বাস যেন উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। এ যেন বাঙালীর এক মহামিলন মেলা এবং জাগরণী উৎসব। বাঙালীর এই মহাজাগরণে গা-জ্বলে যায় বাঙালী সংস্কৃতি বিদ্বেষী একটি বিশেষ মহলের। বাংলার জল-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা, বাংলা ভাষায় কথা বলা ওই মহলটি বাংলা ভাষা, বাঙালী জাতি, বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ঘোরবিরোধী। তারা বাংলা ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। তারা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছিল। এ বছর বাংলা নববর্ষ উৎযাপনের পূর্বমুহূর্তে বাঙালী সংস্কৃতি বিদ্বেষীদের মুখপাত্র হিসেবে কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে উপস্থিত হয় ওলামা লীগ নামের একটি সংগঠন। দাবিগুলো হলো বর্ষবরণের অনুষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ করা, এবার থেকে চালু হওয়া বৈশাখী উৎসব ভাতা বাদ দিয়ে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীতে উৎসব ভাতা চালু করা, জাতীয় শিক্ষানীতিকে ‘ইসলামবিদ্বেষী’ আখ্যা দিয়ে এটি সংশোধন এবং ইত্যাদি। সবচেয়ে মারাত্মক যে কথাটি তারা বলেছে, তা হলো- মুসলমানদের ইসলামহীন করার জন্যই নাকি পহেলা বৈশাখের এ অপতৎপরতা। এ ধরনের প্রকাশ্য হুমকি ও জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় এ বছর বর্ষবরণের অনুষ্ঠানমালায় কাটছাঁট করা হয়। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি প্রত্যাশিত নয়। সংস্কৃতিবান বাঙালী জনগোষ্ঠী এটা মেনে নিতে পারেনি। ইসলামের সঙ্গে বাংলা নববর্ষ বরণের কোন বিরোধ নেই বলে ইসলামী চিন্তাবিদ ও বিজ্ঞমহলের অভিমত। তবুও ইসলামকেই ব্যবহার করা হচ্ছে বাঙালী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এই বাংলার হিন্দু, মুসলিম, বাঙালী, নন-বেঙ্গলি, সবাই আমাদের ভাই।’ কিন্তু মৌলবাদের উগ্র অনুসারীদের কাছে এমন উদার আচরণ ও সহনশীলতা আশা করা যায় না। সম্প্রতি তাদের একটি অংশ ফতোয়া দিয়ে বেড়াচ্ছে, রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ হলো কুফরি মতবাদ। বাঙালী সংস্কৃতি মেনে চলা বেদাত কর্ম। নববর্ষ উৎযাপন করা হলো বিজাতীয় উৎসব। তাই তারা উদীচীর অনুষ্ঠানে, বর্ষবরণে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, পহেলা বৈশাখে নারী লাঞ্ছনার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে এসব বন্ধ করো। সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্রয় ইসলামে নেই। অথচ ইসলামের নামেই এসব করা হচ্ছে। যে কোন অন্যায় বিধিনিষেধ তারুণ্যকে সংগ্রামী করে তোলে। বিধিনিষেধ ভাঙ্গাই তারুণ্যের ধর্ম। তারা তদের ঐতিহ্য নবায়নের উপায় খুঁজে নেবেই। প্রতিবন্ধকতা জয় করার মধ্যেই আনন্দ। প্রতিবন্ধকতা না থাকলে উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাটা পড়ে যায়। আপস করে কোন শুভফল আশা করা যায় না। আপস করলে ভাষা আন্দোলনে কৃতকার্য হওয়া যেত না। আপস করলে একাত্তরে দেশ স্বাধীন হতো না। সুতরাং যে কোন ন্যায় সংগ্রামে আপসের কোন সুযোগ নেই। ধানঘরা, সিরাজগঞ্জ থেকে
×