ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টি ইসলাম তারিক

অস্তাচলে মেসির ক্যারিয়ার!

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২০ এপ্রিল ২০১৬

অস্তাচলে মেসির ক্যারিয়ার!

তাহলে কি ক্যারিয়ারের গোধূলী লগ্নে পৌঁছে গেছেন লিওনেল মেসি! বিষয়টা অনেকের কাছেই অবান্তর মনে হতে পারে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন তারকার মাঠের পারফরমেন্সের পর অনেক বিশেষজ্ঞই অপ্রিয় প্রশ্নটি তুলেছেন। যদিও ১৭ এপ্রিল ক্যারিয়ারে ‘৫০০’ গোলের গৌরবময় মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বর্তমান ফিফা সেরা তারকা। কিন্তু মাঠে আগের সেই ক্ষুরধার নৈপুণ্যের দেখা মেলেনি। যে কারণে তার দল বার্সিলোনারও আকাশ থেকে পতন হয়েছে। সঙ্গতকারণেই এ প্রশ্নটা সামনে চলে এসেছে, অস্তাচলে মেসির ক্যারিয়ার? ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে ১৭ এপ্রিল অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় মেসির। ওইদিন ক্লাব ও দেশের হয়ে ক্যারিয়ারে ‘৫০০’ গোলের অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। কিন্তু মাইলফলক স্পর্শের রাতটিকে মেসি স্মরণীয় করতে পারেননি। বরং তার এই কীর্তিটা অগৌরবের আড়ালে ঢাকা পড়েছে! কেননা তাঁর মাইলফলকের ম্যাচে হেরেছে দল বার্সিলোনা। শুধু তাই নয়, ২০০৩ সালের পর কাতালানারা টানা তিন ম্যাচে হেরেছে। ফলে শিরোপা হারানোরও শঙ্কা জেগেছে। আর তাই, বার্সার অগৌরব সঙ্গী করে নিজের রেকর্ডের কীর্তি গড়েছেন ২৮ বছর বয়সী মেসি। ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের ৬৩ মিনিটে নিজের ক্যারিয়ারের ৫০০ নম্বর গোলটি করেন এলএম টেন মেসি। বার্সিলোনার জার্সিতে এটা তার ৪৫০তম গোল। এজন্য তাকে খেলতে হয়েছে ৫২৫ ম্যাচ। আর বাকি ৫০ গোল করেছেন জাতীয় দল আর্জেন্টিনার হয়ে। সেখানে তিনি খেলেছেন ১০৭ ম্যাচ। অর্থাৎ সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে ৬৩২টি ম্যাচ খেলে ৫০০ গোল করেছেন মেসি। লা লীগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লীগ মিলিয়ে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে গোলবিহীন ছিলেন মেসি। তাই গোলের জন্য ক্ষুধার্তই ছিলেন তিনি। অবশেষে সেই কাক্সিক্ষত গোলের দেখা পেয়েছেন। লা লীগায় সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড অনেক আগেই নিজের করেছেন মেসি। জাতীয় দলের হয়েও সর্বোচ্চ গোলের মালিক হওয়ার অপেক্ষায় আছেন বর্তমান ফুটবলের ক্ষুদে এই জাদুকরী। ২০১০ সালের পর থেকে গোলবিহীন এতটা সময় আর পার করতে হয়নি মেসিকে। ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধেও সে শঙ্কা ভর করেছিল। কিন্তু শেষমেশ মেসিকে আটকে রাখতে পারেননি প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, পাঁচ ম্যাচ ও ৫০০’র বেশি মিনিট গোলবিহীন থাকার পর ৫০০ গোলের কীর্তি গড়েন মেসি। ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে ৪৫২ মিনিট গোলবিহীন ছিলেন। এরপর ৬২ মিনিট পর্যন্ত গোলের দেখা পাননি। অর্থাৎ গোলবিহীনভাবে মেসির কাটে মোট ৫১৪ মিনিট। এরপরই কাক্সিক্ষত গোলের দেখা পান রেকর্ড সর্র্বোচ্চ পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা। ২০০৫ সালে ১৭ বছর বয়সে পেশাদার ক্যারিয়ারের প্রথম গোল পেয়েছিলেন মেসি। আলবাসেটের সঙ্গে ওই গোলের পর বাকি সময়টা শুধুই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। লা লীগার সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড অনেক আগেই নিজের করে নিয়েছেন। আর্জেন্টিনার হয়ে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার ৫৬ গোলের রেকর্ডও এখন হাতছানি দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই মেসির ১৫ বছর হয়ে গেছে কাতালানদের জার্সি গায়ে। বার্সার হয়ে অপ্রতিরোধ্য মেসি অনেক খেতাব জিতলেও নিজ দেশ আর্জেন্টিনার জার্সিতে বড় কোন শিরোপা জিততে পারেননি। দেশাত্মবোধের ঘাটতি থাকার জন্যই সেটা পারেননি মেসি এমন সমালোচনাও আছে। বারবারই তাই আলোচনায় উঠে এসেছে দেশে ফিরে কোন ক্লাবের হয়ে খেললেই মেসি জাতীয় দলের হয়ে কিছু জিততে পারবেন। দীর্ঘ সময়ের জন্য ভবিষ্যতটা ভাবলে অবশ্য সেটাই মেসির জন্য ভাল হবে বলে মনে করছেন অনেকে। কিন্তু মেসি নিজে জানালেন আর্জেন্টিনায় ফিরলেও শৈশবে যে ক্লাবের হয়ে খেলেছেন সেই নিউয়েলস ওল্ড বয়েজেই ফিরবেন। কিন্তু সেটা দ্রুতই হচ্ছে না। কারণ এখনও ইউরোপে উচ্চমূল্য এ সুপারস্টারের। বার্সার সাবেক কোচ পেপ গার্ডিওলা তো এখন পর্যন্ত তাঁকে নিজের দলেই চান মেসিকে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিতে তাঁর দল বেয়ার্ন মিউনিখে মেসির মতো খেলোয়াড় না থাকায় আফসোস প্রকাশ করেছেন তিনি। বাল্যকালেই আর্জেন্টিনা ছেড়ে স্পেনে পাড়ি দিয়েছিলেন মেসি। তারপর থেকেই স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাব বার্সিলোনায় আছেন তিনি। কিন্তু দেড় যুগ হয়ে গেছে স্পেনে। বার্সার অন্যতম নির্ভরযোগ্য হলেও এখন কিছুটা হলেও সেই অপরিহার্যতা কমে গেছে। কারণ লুইস সুয়ারেজ ও নেইমার ঘাটতিটা পুষিয়ে দিচ্ছেন ভালভাবেই। যদিও এখন পর্যন্ত মেসির বিকল্প খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু আর্জেন্টিনায় একবারে ফিরবেন মেসি এমনটা অনেকেরই চাওয়া। এ বিষয়ে মেসি বলেন, ‘আমি যদি আগামীকালই আর্জেন্টিনায় ফিরে যাই সেক্ষেত্রে আমি যাদের ভালবাসি, যাদের হয়ে একসময় খেলেছি সেই নিউয়েলস ওল্ড বয়েজেই ফিরব।’ ৫ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি অবশ্য নির্দিষ্ট কোন সময় জানাননি দেশে ফেরার বিষয়ে। তবে আর্জেন্টিনায় ফেরা এখনও কয়েক বছরের অপেক্ষা এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। মেসি বলেন, ‘আমি আগেও যেমন বলেছি যে ঠিক জানি না কখন এটা ঘটবে কিংবা আদৌ ঘটবে কিনা এখনও সেই অবস্থাই আছে। এখন যদি আমি সেটা যদি ভাবিও সেটা কয়েক বছর পর। কারণ আমি নিজেও বাস্তবটা জানি না আগামীকালই কি ঘটতে যাচ্ছে। সে কারণে আমি বলতে বা প্রতিজ্ঞা করতে পারছি না যে ফিরবই। সেটা কোন সততা হবে না। কিন্তু হ্যাঁ, আমি এটা আপনাদের নিশ্চিত করছি যে আর্জেন্টাইন লীগে খেলতে পারার সুযোগ আমার ভালবাসার বিষয় এবং সেটা নিউয়েলসের হয়ে। কিন্তু সেটা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে।’ মেসি জানিয়েছেন এখনও তিনি নিজেকে ক্ষুধার্ত রাখতে চান জয়ী হওয়া এবং রেকর্ড ভাঙ্গার জন্য। আর সেজন্য প্রতিদিনই নিজের উন্নতি ঘটানোর দিকে মনোযোগী তিনি। মেসি বলেন, ‘আমি প্রতিদিনই নিজের নৈপুণ্য আরও ভাল করতে সচেষ্ট। সেজন্য শিখেই চলেছি এবং এখন পর্যন্ত নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট নই। আমার লক্ষ্য সবসময়ই জেতা, সেটা বার্সিলোনা হোক কিংবা আর্জেন্টিনার পক্ষে।’ সুপারস্টার মেসিকে এ কারণেই বিশ্বের নামী-দামী ক্লাবগুলো মনেপ্রাণেই দলে ভেড়াতে উন্মুখ। তাঁকে চারটি বছর কাছ থেকে দেখেছেন গার্ডিওলা। জার্মান ক্লাব বেয়ার্নের হয়ে এবার শেষ মৌসুম তাঁর। কিন্তু দলে মেসি এবং রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগীজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর অভাবটা হারে হারে বুঝতে পারছেন। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল লড়াইয়ের আগে গার্ডিওলা বলেন, ‘আমি নিজেদের খেলা নিয়ে সন্তুষ্ট নই। আমাদের ক্রিশ্চিয়ানো বা মেসির মতো এমন কোন খেলোয়াড় নেই যিনি ৫০ কিংবা ৬০ গোল করতে পারেন।’
×