ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাফুফে নির্বাচনে বল কাউন্সিলরদের কোর্টে

‘দক্ষ বুঝে পক্ষ নিন’ যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিন

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২০ এপ্রিল ২০১৬

‘দক্ষ বুঝে পক্ষ নিন’ যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দিন যেমন বদলে গেছে, তেমনি বদলে গেছে নির্বাচনের সেøাগানও। আগে বলা হতো ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।’ আর এখন বলা হচ্ছে, ‘আপনার ভোট আপনি দিন, দেখে-শুনে-বুঝে দিন।’ এই সেøাগানটির বোধ করি নতুন কোন আপডেট আসেনি। আর খুব বেশি বাকি নেই বালাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বহুল আলোচিত নির্বাচনের, যা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার র‌্যাডিসন হোটেলে, আগামী ৩০ এপ্রিল। নির্বাচনের মূল প্রাণ হচ্ছেন ভোটাররা। এবারের বাফুফে নির্বাচনে ভোটার (যাদের অফিসিয়াল নাম ডেলিগেট) সংখ্যা ১৩৪। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন বা নির্বাচিত করবেন কারা হবেন বাফুফের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্য । এখন কথা হচ্ছে ডেলিগেটরা কাদের ভোট দেবেন এবং কেন? আগে দেখতে হবে বর্তমান কমিটির কার্যক্রম। সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনকে নিয়ে অনেক ইতিবাচক-নেতিবাচক কথাই শোনা যাচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সালাউদ্দিন আর কিছু করতে পারুন আর নাই পারুন, তিনি ফুটবলটা মাঠে ধরে রাখতে পেরেছেন সারা বছরই। এভাবে গত আট বছরই তিনি ফুটবলটা মাঠে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। হ্যাঁ, জেলা পর্যায়ে সেভাবে তিনি ফুটবল লীগ চালাতে পারেননি। তবে যতটা পেরেছেন, সেটাও কিন্তু কম নয়। আট বছর আগে তিনি সভাপতি হওয়ার আগে কয়েক বছর লীগ হয়নি। খেলা দল বদলের দাবিতে ফুটবলাররা প্রেসক্লাবে গিয়েও মানববন্ধন-আন্দোলন করতে হয়েছে। অথচ সালাউদ্দিন সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ রকম কিছুই ঘটেনি। বরং ফুটবলাররা অতিমাত্রায় খেলতে খেলতে হাঁফিয়ে ওঠে! আগে ফুটবলাররা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলত কালে-ভদ্রে। অথচ বিগত কয়েক বছরে তারা যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে, তা বিস্ময়কর। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে তারা কেন সাফল্য পায়নি, সেটার জন্য নিশ্চয়ই সালাউদ্দিন দায়ী নন। এজন্য দায়ী দলের মধ্যে কোন্দলসহ বিভিন্ন বিষয়। ইতোমধ্যেই সেগুলো চিহ্নিত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। সালাউদ্দিন শুধু বাফুফের সভাপতিই নন, তিনি একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতিও বটে। এ পদে যোগ্য না হলে তিনি গত আট বছর ধরে টিকতে পারতেন না। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিলের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ফুটবল দলও বাংলাদেশে এসে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে অনীহা প্রকাশ করে। সালাউদ্দিন এক্ষেত্রে তার ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধি খাটিয়ে ফিফা-এএফসিকে ম্যানেজ করে এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশে এসে খেলে যেতে বাধ্য করেন, যা তার বিশাল কূটনৈতিক বিজয় ও অর্জন। অন্য কেউ হলে এই কাজটি করতে পারত কিনা সন্দেহ আছে। ক্রীড়া সংগঠকদের নিয়েই সাজানো হয়েছে বাফুফে নির্বাচনে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন প্যানেল। ডিএফএ বা জেলা ফুটবল এ্যাসাসিয়েশন গঠনের পর জেলা সংগঠকদের সঙ্গে বাফুফের একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। তবে সেই দূরত্ব এখন অনেকটাই কমে এসেছে। সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদে সাত সদস্য পদ দেয়া হয়েছে জেলা ফুটবল সংগঠকদের। এটা নিঃসন্দেহে সালাউদ্দিনের জন্য প্লাস পয়েন্ট। সালাউদ্দিন প্যানেলের আরেক প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তিনি দাঁড়িয়েছেন আগের মতোই সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে। ফুটবলাঙ্গনে অনেকেইে তাকে ‘কিপ্টা’ বলে থাকে। হয় তো তিনি ফুটবলের জন্য কোন টাকা খরচ করেননি, কিন্তু ফুটবল নিয়ে যারা সবচেয়ে কর্মতৎপর ও সক্রিয়, তাদের মধ্যে শীর্ষেই থাকবেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে তিনি পোশাক খাতের বড় ধনী ব্যবসায়ী। তার টাকার কোন অভাব নেই। ফলে বাফুফেতে তিনি অর্থ আত্মসাত করবেন, এমন অভিযোগ নিশ্চয়ই গ্রহণীয় হতে পারে না। ডেলিগেটরা আর যাই হোক, তারা নিশ্চয়ই বিবেকবুদ্ধিহীন বা বোকা নন। তারা নিশ্চয়ই ভাল-মন্দের প্রভেদ বুঝবেন। তারা ভালমতোই জানেন এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা জনৈক সাবেক নিরাপত্তারক্ষী, কোটি কোটি টাকা চুরির খলনায়ক, ফুটবল থেকে বহু যোজন দূরে থাকা অসৎ লোকজন কারা। তাদের হাতে দেশের ফুটবল কতটা নিরাপদ, সেটা নিশ্চয়ই ভেবে দেখার মতো। ফলে লেখার শুরুর দিকে সেই সেøাগানটিই আবারও ডেলিগেটদের স্মরণ করে এবারের বাফুফে নির্বাচনে ভোট দেয়া উচিত, ‘আপনার ভোট আপনি দিন, দেখে-শুনে-বুঝে দিন।’ এই বাক্যটিকে নিশ্চয়ই আরেকটু হালনাগাদ করা যায়, ‘আপনার ভোট আপনি দিন, যোগ্য প্রার্থীকেই দিন!’
×