ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দোহাজারী-ঘুমদুম রেলপথসহ ৮ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২০ এপ্রিল ২০১৬

দোহাজারী-ঘুমদুম রেলপথসহ ৮ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে ঘুমদুম পর্যন্ত রেল পথ নির্মাণসহ ৮ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৬৫৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৫ হাজার ৪৯৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল ৪৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমদুম রেললাইনের ওপর হাতির চলাচলের জন্য আলাদা ওভারব্রিজ তৈরি করা হবে। যেসব এলাকা দিয়ে হাতি বেশি চলাচল করে সেসব এলাকায় কিছু দূর পর পর রাস্তার মতো করে ওভারব্রিজ তৈরি করা হবে। যাতে হাতির দল এপার থেকে ওপারে অনায়াসে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর অনুুশাসন বিষয়ে তিনি জানান, একনেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমদুম রেল পথ তৈরির প্রকল্পটি ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে যুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া তিন বছরের মধ্যেই অন্তত্ব রামু-কক্সবাজার রেললাইন তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিপিডি কখনও ভাল কথা বলে আবার কখনও খারাপ কথা বলে। আমি এটা এনজয় করি। যদি রাজস্ব আদায় এবং বাজেট সমান হতো তাহলে সিডিপির ব্যক্তব্য দেয়ার খোরাক থাকত না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্প ৬৬ শতাংশ কাজ শেষে কখনও শতভাগ শেষ বলা হয়না। এটা কথা ঠিক নয়। প্রকল্প হয়ত শেষ করা হয়। যত শতাংশ শেষ করা ততই বলা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্যে ড. শামসুল আলম। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের কাছে ঘুমদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশের রেলওয়ের জন্য ১০০টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী গ্যারেজ পুনর্বাসন, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ৫৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন যাত্রাবাড়ী মোড় হতে ত্রিমুখী রাস্তা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, এর ব্যয় ১৫৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। বড়তাকিয়া (আবু তোরাব) থেকে মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল সংযোগ সড়ক প্রকল্প, এর ব্যয় ১২৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সাদুল্লাপুর-পীরগঞ্জ-নবাবগঞ্জ জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ, এর ব্যয় ৯০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৯৩তম কিলোমিটারে ২১৯ দশমিক ৪৫৬ মিটার দীর্ঘ শাহবাজপুর সেতু নির্মাণ এবং বিদ্যমান সেতু পুনর্বাসন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। মনু নদী সেচ প্রকল্পের আওতাধীন কাশিমপুর পাম্প হাউস পুনর্বাসন, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। মাল্টি চ্যানেল স্লিপওয়ে নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। দোহাজারী-ঘুমদুম রেল প্রকল্পের বিস্তারিত হচ্ছে, ১৮৯০ সালে মিয়ানমার রেলওয়ে চট্টগ্রাম হতে রামু এবং কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য সার্ভে করেছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০৮ থেকে ১৯০৯ সালের মধ্যে মিয়ানমার রেলওয়ে আরও বিশদ সার্ভে পরিচালনা করে। চট্টগ্রামের সঙ্গে আকিয়াবের (মিয়ানমার) রেল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে দোহাজারী হতে রামু হয়ে আকিয়াব পর্যন্ত ১৯১৭ সাল থেকে ১৯১৯ সালের মধ্যে পুনরায় সার্ভে করা হয়। সে মোতাবেক চট্টগ্রাম হতে দোহাজারী পর্যন্ত মিটার গেজ রেললাইন স্থাপন করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে কক্সবাজার হতে রামু পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৫৮ সালে তখনকার পূর্ববাংলা রেলওয়ে চট্টগ্রামের দক্ষিণ দিক থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য সার্ভে পরিচালনা করে, যার উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলওয়ে সংযোগ স্থাপন করা। জাপান রেলওয়ে টেকনিক্যাল সার্ভিস (জেআরটিএস) ১৯৭১ সালে রেলওয়ে লাইনটি ট্রাফিক সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে জেআরটি ১৯৭৬-৭৭ সালে ডাটা সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করে। ১৯৯২ সালে ইকোনমিক এ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া এ্যান্ড দ্য পেসিফিক কমিশন অধিবেশনে সম্মতিপ্রাপ্ত এশিয়ান ল্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট নামের প্রকল্পের আওতায় ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের তিনটি ইউরো-এশিয়া সংযোগ বোর্ডের মধ্যে সাউদার্ন করিডর অন্যতম রুট। এ বিবেচনায় সর্বশেষ দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের কাছে ঘুমদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন মিটার গেজ নির্মাণের জন্য এক হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে (এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ৬৭০ কোটি ৭ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে এক হাজার ১৮২ কোটি ২৮ লাখ টাকা) একটি প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই অনুমোদন দেয় একনেক। সে সময় এটি বাস্তবায়নের কথা ছিল ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। কিন্তু পরবর্তীতে উন্নয়নসহযোগী সংস্থা না পাওয়ায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ আটকে ছিল। এ অবস্থায় ২০১৪ সালে ৯ সেপ্টেম্বর একনেক বৈঠকে সিঙ্গেল লাইন ট্র্যাককে মিটার গেজের পরিবর্তে ডুয়েলগেজ ট্র্যাকে নির্মাণের নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই বছরই প্রধানমন্ত্রী রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় এ প্রকল্পের মাধ্যমে সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ এবং নতুন রেললাইন নির্মাণের সময় ভবিষ্যতে ডাবল লাইন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমির সংস্থান রেখে ভূমি অধিগ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। সে অনুযায়ী বর্তমানে প্রকল্পটি সংশোধন করে পুনরায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার এবং রামু হতে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমদুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটারসহ মোট ১২৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণের মাধ্যমে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের যোগাযোগ স্থাপনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে।
×